জয়জ্যোতি ঘোষ
১৯৯৯ বিশ্বকাপ চলছে। ১৬ মে হোভে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচ হেরে গিয়েছে ভারত। ভারতের এরপরের প্রতিপক্ষ জিম্বাবোয়ে। জিম্বাবোয়ে ম্যাচের ঠিক আগের রাতে স্ত্রী অঞ্জলি তেন্ডুলকর শচীনের হোটেল রুমের সামনে দাঁড়িয়ে। ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত ২টো পেরিয়েছে। দরজায় নক অঞ্জলির। শচীন দরজা খুলতেই অঞ্জলিকে দেখে অবাক! অঞ্জলিকে সঙ্গ দিয়েছিলেন রবিন সিং এবং অজয় জাডেজা। শচীন বুঝে গিয়েছিলেন নিশ্চয়ই অপ্রীতিকর কিছু হয়েছে। নাহলে ম্যাচের আগের দিন এত রাতে অঞ্জলি তেন্ডুলকর আসতেন না। জাডেজা এবং রবিন সিং-কে বাইরে রেখে ঘরে এলেন অঞ্জলি। শচীনকে অঞ্জলি বলেন, ‘একটা খুব খারাপ খবর আছে। তোমার বাবা আর আমাদের মাঝে নেই। তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন।’ শেষরাতে যেন বাজ ভেঙে পড়ে শচীনের আকাশে। তড়িঘড়ি ভারতের উদ্দেশে রওনা হলেন অঞ্জলি-শচীন। কিন্তু শতকোটির দায়িত্ব যার কাঁধে তিনি তো বিশ্বকাপ চলাকালীন ভারতে থাকবেন সেটা তো হতে পারে না। ভারতে আসার পর শচীনের মা তাঁকে বোঝান, ‘তুমি ফিরে যাও। ভারতের হয়ে বিশ্বকাপে নিজের সেরা খেলাটা খেলো। মনে রাখবে তোমার বাবাও কিন্তু এটাই চাইতেন।’ তাঁর মা-এর সঙ্গে সহমত পোষণ করেন শচীনের দিদি-দাদারা।
১৯ মে শচীনের বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পরলোক গমন করেছিলেন। পিতৃবিয়োগের খবরে ভারতে পৌঁছেও খুব দ্রুত ইংল্যান্ডে ফিরে আসেন শচীন তেন্ডুলকর। ২৩ মে মেঘলা ব্রিস্টলে ব্যাট হাতে নামেন শচীন। শুধু নামেননি, যেন রূপকথা রচনা করেন। ১০১ বলে ১৪০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। মারলেন ১৬টি বাউন্ডারি এবং ৩টি ওভারবাউন্ডারি। স্ট্রাইক রেট ১৩৮.৬১। মনে রাখতে হবে তখনও টি-টোয়েন্টি যুগ আসেনি। অপর প্রান্তে ১০৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন রাহুল দ্রাবিড়। শতরানের পর শচীন তেন্ডুলকরের ব্রিস্টলের আকাশে মেঘের আড়ালে বাবাকে খুঁজতে যাওয়ার দৃশ্য নিয়ে একটা সিনেমাও হতে পারে। বাবাকে চিরতরে হারিয়েছেন এক সপ্তাহও হয়নি। এমন অবস্থায় দাঁড়িয়েও ইস্পাত-কঠিন মানসিকতার পরিচয় দেন শচীন রমেশ তেন্ডুলকর। কেনিয়ার বিরুদ্ধে ৯৪ রানে জেতে ভারত। ম্যাচের সেরা হন সদ্য পিতৃহারা ম্যাচ জেতানো শতরানকারী শচীন তেন্ডুলকর।
বিশ্বকাপ চলাকালীন শচীনের উদ্দেশে গোপন পরিকল্পনা করেছিলেন সেই সময়ের ভারতীয় দলের কোচ অংশুমান গায়কোয়াড় সহ ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট। সবাইকে নির্দেশ দেওয়া ছিল শচীন যেন একা কোনওভাবেই না থাকেন। কেউ না কেউ শচীনকে যেন অবশ্যই সঙ্গ দেন। তাই অনুশীলনের আগে বা পরে কেউ না কেউ সঙ্গ দিতে থাকেন শচীনকে। একা থাকলে বাবার মৃত্যু চিন্তা আরও গ্রাস করতে পারতো শচীনকে। তাই টিম ম্যানেজমেন্টের এহেন সিদ্ধান্ত যেটা ছিল শচীনের সম্পূর্ণ অজানা!
অন্য খবর জানতে ক্লিক করুন: