ওয়েব ডেক্স: ২০১৪ সালে মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর নেতাজী সম্পর্কিত বেশ কিছু ফাইল প্রকাশ্যে আনে। যে গোপন নথি বাইরে আসার পর নেতাজীর বিষয়ে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্যের হদিশ মিলেছে। যার অন্যতম হল আইএনএ-র (Indian National Army) গুপ্তধনের উল্লেখ। এই আইএনএ-র সম্পত্তি লুঠ হয়। আইএনএ-র লুন্ঠিত সম্পত্তির তত্কালীন মূল্য ছিল ৭ লক্ষ ডলার। কিন্তু অদ্ভুত বিষয় হল এই আইএনএ লুণ্ঠনকারীদের পুরস্কৃত করেছিলেন জহরলাল নেহেরু।
১৯৫১-৫৫ সালের মধ্যে টোকিও ও দিল্লির মধ্যে বেশ কিছু চিঠি চালাচালি হয়। যার সূত্রে জানা গিয়েছে, ভারতের সরকারি আধিকারিকদের সন্দেহ ছিল যে ওই সম্পত্তি সরানোর পিছনে হাত ছিল নেতাজীর দুই ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির। কিন্তু নেহেরু সরকার ঘটনা সম্পর্কে অবগত থাকা সত্বেও তা এড়িয়ে যান। পরবর্তীতে ওই দুই সন্দেহভাজনের একজনকে প্রধানমন্ত্রী নেহরুর পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার প্রচার বিভাগের পরামর্শদাতা হিসেবে নিয়োগও করা হয়।
গোপন ফাইলে রাখা নথি জানাচ্ছে, ‘৫১ সাল নাগাদ টোকিও মিশন প্রধান কে কে চেত্তুর কমনওয়েলথ রিলেশনস সচিব বি এন চক্রবর্তীকে জানান,সুভাষচন্দ্রের দুই বিশ্বস্ত সঙ্গী– প্রাক্তন ভারতীয় স্বাধীনতা লিগ প্রধান মুঙ্গা রামমূর্তি এবং তত্কালীন কেন্দ্রীয় প্রচারমন্ত্রী এস এ আয়ারের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। রামমূর্তির বিরুদ্ধে আইএনএ-র তহবিল এবং সুভাষচন্দ্র বসুর ব্যক্তিগত সম্পত্তি তছরুপের অভিযোগ উঠে আসে। সুভাষচন্দ্রের ব্যক্তিগত সম্পত্তির মধ্যে ছিল বেশ কিছু হিরে, গয়না ও অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী। অভিযোগ সত্যি হোক বা মিথ্যে এই তরছুপের ব্যাপারে নাম জড়ায় এস এ আয়ারেরও।
আরও পড়ুন: ১২ বছরে ‘উষ্ণতম’ মকর সংক্রান্তি বাংলায়!
চেত্তুর তাঁর বিবরনে সাফ জনান,”সুভাষচন্দ্রের সঙ্গে অনেক জিনিসপত্র থাকলেও অভিশপ্ত সেই উড়ানে তাঁকে মাত্র ২টি স্যুটকেস সঙ্গে নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। বিমান দুর্ঘটনার পর মূর্তি ও আয়ার আমাদের যা কিছু হস্তান্তর করেছেন, তার চেয়ে অনেক বেশি ঐশ্বর্য বহন করছিলেন বসু।” এ প্রসঙ্গে টোকিও মিশন প্রধান জানিয়েছিলেন,”নেতাজির সঙ্গে তাঁর দেহের ওজনের চেয়ে বেশি ঐশ্বর্য ছিল। এখানে একজন আছেন যিনি গুপ্তধনের বাক্স আয়ারের ঘরে দেখতে পেয়েছেন। এর মধ্যে কয়েকটি বাক্সে থাকা জিনিসপত্র তিনি কেনার পরিকল্পনা করেছেন। তবে পরবর্তীকালে সেই বাক্সগুলির কী গতি হল তা জানা যায়নি কারণ বিমান দুর্ঘটনার পর আয়ার আমাদের হাতে মাত্র ৩০০ গ্রাম সোনা এবং নগদ ২৬০ টাকা জমা দেন।”
‘৫৫-এ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর কাছে জমা পরে ‘আইএনএ গুপ্তধন এবং শ্রী আয়ার ও রামমূর্তির দ্বারা তার হস্তান্তর’শীর্ষক একটি গোপন রিপোর্ট। রিপোর্টের লেখক আর ডি সাঠে মন্তব্য লিখেছিলেন, “জাপানে শ্রী আয়ারের গতিবিধি যথেষ্ট সন্দেহজনক। টোকিওতে প্রবাসী ভারতীয়রা চরম আর্থিক সঙ্কটে ভুগছেন, তখ শ্রী রামমূর্তি তুলনামূলক ভাবে যথেষ্ট সচ্ছ্বল জীবন যাপন করছেন। রহস্য আরও ঘনীভূত হয়, যখন হঠাত্ ব্রিটিশ মিশনের জনৈক অ্যাটাশে কর্নেল ফিগ্স প্রতীচ্য বিশারদ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তিনি রামমূর্তিকে ব্রিটেনে বসবাস করার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।”
এই গোপন রিপোর্টটি সম্পর্কে যে প্রধানমন্ত্রী অবগত ছিলেন তাঁর প্রমাণ, তাঁর ১৯৫১ সালের ৫ নভেম্বরের স্বাক্ষর। ওই রিপোর্ট এরপর বিদেশ সচিবের কাছে যায়। কিন্তু সন্দেহজনক ভাবে রামমূর্তির আর্থিক সচ্ছলতা আরও বৃদ্ধি পায়। আবার, দিল্লিতে ফেরার পর আয়ারকে সাদরে স্বাগত জানান খোদ প্রধানমন্ত্রী নেহরু। এই আয়ারের বিরুদ্ধে আইএনএ-র সম্পত্তি তছরূপের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তাঁকে নিজের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার প্রচার বিভাগীয় পরামর্শদাতা হিসেবে নিয়োগ করেন জওহরলাল।
দেখুন আরও খবর: