নয়াদিল্লি: খুন (Murder) ও অনিচ্ছাকৃত খুন ( Unintended Murder) নিয়ে একটি মামলায় তার অভিমত জানাল শীর্ষ আদালত (Supreme Court)। হঠাৎ এবং গভীর প্ররোচনাকে কখন খুনের বদলে অনিচ্ছাকৃত খুন বলা যায়? ব্যাখ্যা সুপ্রিম কোর্টের।
হঠাৎ প্ররোচনার জেরে হওয়া অপরাধকে সব সময় অনিচ্ছাকৃত খুন বলা যায় না। এর ব্যাখ্যা দিল বিচারপতি জে বি পারদিওয়ালা (Justices JB Pardiwala) ও বিচারপতি আর মহাদেবনের (Justices R Mahadevan) ডিভিশন বেঞ্চ।
যদি প্ররোচনা মারাত্মক হয়, কিন্তু আচমকা নয়, সে ক্ষেত্রে অনিচ্ছাকৃত খুনের অভিযোগ গ্রহণযোগ্য নয়। একইভাবে প্ররোচনা আচমকা হলেও তা গভীর ও মারাত্মক না হলে এই সুযোগ মিলবে না। প্রথমত প্ররোচনা হতে হবে অভাবিত।
যেখানে কোনও পূর্ব পরিকল্পনা নেই এবং প্ররোচনা দেওয়া ও মৃত্যুর মধ্যে বেশ খানিকটা সময়ের তফাৎ আছে। যদি কয়েক মিনিটের মধ্যে প্ররোচনাদাতার মৃত্যু হয়, সেক্ষেত্রে সেটি আচমকা উচ্চারিত প্ররোচনা। যদি পাঁচ ছয় ঘন্টা পরে মৃত্যু হয়, তাহলে সেটি হঠাৎ দেওয়া প্ররোচনা। অভিমত আদালতের।
আরও পড়ুন: নথিহীন ভারতীয়দের আমেরিকা থেকে বের করে দেওয়া নিয়ে কী বললেন বিদেশমন্ত্রী?
অন্যদিকে প্ররোচনার গভীরতা নির্ধারণে পরীক্ষা দরকার। সেই প্ররোচনার পরিপ্রেক্ষিতে কোন রিজনেবল ম্যান বা সাধারণ মানুষ কি আত্মনিয়ন্ত্রণ হারাতে পারেন? এই প্রশ্নের উত্তর দরকার।
অভিযুক্ত ব্যক্তির শিক্ষা এবং সামাজিক অবস্থা এই প্রশ্নের উত্তরের পরিপ্রেক্ষিতে বিবেচনা করতে হবে। কারণ যেকোনও ব্যক্তি পরিস্থিতির জেরে মেজাজ হারাতেই পারেন। তবে ভিন্ন সমাজে এই রিজনেবল ম্যানের মানসিক সুস্থিতির তফাৎ হয়।
এই বিষয়ে তাঁর নিজের সামাজিক অবস্থানের কথা বিচারককে মনে রাখলে হবে না। কারণ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিচারক ধৈর্যশীল হবেন। কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে সেই মান বা আচরণ প্রত্যাশিত নয়।
এই মামলায় আবেদনকারী বিজয় ও তার বন্ধুরা সেতুর নিচে ঘুমোচ্ছিল। যার মৃত্যু হয় সে প্রচুর মদ্যপান করেছিল। মদ্যপ অবস্থায় সে বন্ধুদের গালিগালাজ শুরু করে। আবেদনকারীকে আচমকা চড় মারে। আবেদনকারী হাতের কাছে থাকা একটি সিমেন্টের টুকরো তুলে ছোঁড়ে। যা লাগে মদ্যপের মাথায়। সে মারা যায়। নিম্ন আদালত আবেদনকারীকে অনিচ্ছাকৃত খুনের দায়ে সাজা দেয়। যা বহাল রাখে হাইকোর্ট।
এমন পরিস্থিতিতে কোনও অতি সাধারণ মানুষ কি করতেন, তা বিচার করা দরকার। এক্ষেত্রে ক্ষণিকের মধ্যে পুরো বিষয়টি ঘটে গিয়েছে। যেখানে কোনও পূর্ব পরিকল্পনা ছিল না। আবেদনকারীর হাতে কোন অস্ত্র ছিল না।
তার হাতের কাছে পড়ে থাকা এবং ছোঁড়া সিমেন্টের টুকরো মৃতের মাথায় লাগে। তাই আবেদনকারীর আচরণকে অস্বাভাবিক বা নিষ্ঠুর বলা যাবে না।
এই ব্যাখ্যা সহ নিম্ন আদালতের রায়ে হস্তক্ষেপ করতে অস্বীকার সুপ্রিম কোর্টের। যে সময়কাল আবেদনকারী ইতিমধ্যে সংশোধনাগারে কাটিয়েছে, সেটাই যথেষ্ট বলে জানিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত।
দেখুন অন্য খবর-