২৬০০০ চাকরি নিয়ে প্রশ্ন, আরও ৩৫-৩৬ হাজার নিয়েও মামলা আছে, এবং এটাও ঘটনা যে এই চাকরি চুরি এক প্রতিষ্ঠানগত দুর্নীতি, একে এড়ানো যায় না, সরকার তার দায় এড়াতে পারে না। পারে না বলেই মুখ্যমন্ত্রী সেই শিক্ষক অশিক্ষক কর্মচারীদের ডেকে তাঁদের পাশে থাকার কথা বলেছেন, যে কথা বলতে ধক লাগে, যে কথা বলতে দম লাগে, আমি আপনাদের পাশে আছি, যোগ্য একজনেরও চাকরি যাবে না, স্পষ্ট উচ্চারণে জানিয়ে দিলেন তিনি, হ্যাঁ তাঁদের সামনেই। ১০ হাজারের বেশি শিক্ষকের চাকরি গিয়েছিল ত্রিপুরাতে বাম আমলে, মুখ্যমন্ত্রী মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিলেন চাকরি খোয়ানো শিক্ষকদের? বলেছিলেন চাকরি যেতে দেব
না? সেদিনের বিরোধী বিজেপি দল বলেছিল আমরা আসলে প্রত্যেকে চাকরি ফিরে পাবে, যেমনটা আজ এই বাংলায় বলছেন শুভেন্দু ডাডা, তো ত্রিপুরাতে ক’জন চাকরি ফিরে পেয়েছেন? একজনও না। কিন্তু আজ এই চাকরি চলে যাওয়া শিক্ষকদের বেশ কিছু জনের সঙ্গে কথা বলে বুঝলাম যে তাঁরা বিশ্বাস করেন, দিদি যখন বলেছে, তখন চাকরি যাবে না। কিন্তু আমরা যখন এই বিতর্কে ব্যস্ত, রাজ্যের ৫০-৬০ হাজার পরিবারের ভবিষ্যৎ নিয়ে এত আলোচনা করছি, দলবদলে মুখ্যমন্ত্রী না হোন, হয়েছেন তো বিরোধী দলনেতা, তিনি গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছেন, রাজ্যের মানুষের স্বার্থেই তাঁর জীবন যৌবন ধনমান, এমনও বলেন জনান্তিকে। সেই শুভেন্দু অধিকারীর সেই বাওয়ালের মধ্যেই খবর এসেছে, দাম বেড়ে গেল রান্নার গ্যাস সিলিন্ডারের, সব্বার বেড়েছে, যাঁরা ভর্তুকি পান, যাঁরা পান না, সব্বার বেড়েছে ৫০ টাকা করে, আর ডিজেলের দাম বেড়ে গেল ২ টাকা করে, আগে বাড়ত নয়া পয়সায়, এবারে বেড়ে গেল এক লপ্তে দু’ টাকা, নিঃশব্দে পকেটমারি হল রাজ্যের দু’ কোটি মানুষের, কোথায় দিলু ঘোষ? সুকান্ত মজুমদার? কাঁথির খোকাবাবু? সেটাই বিষয় আজকে, বাংলার ২ কোটি মানুষের পকেট কাটা গেল, শুভেন্দুর মুখে তালা।
মোদিজির সাধের উজ্জ্বলা যোজনার গ্রাহকদেরও আজ থেকে ৫০ টাকা বেশি দিতে হবে একটা সিলিন্ডারের জন্য, তার বাইরে অসংখ্য নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্তের পকেট কাটা গেল এই দাম বাড়ানোর সরকারি ফরমানে। আর বেড়েছে ডিজেলের দাম, এক লপ্তে দু’ টাকা, মানে সব জিনিসের দাম বাড়বে, পাবলিক পরিবহণ ব্যবস্থা বাধ্য হবে দাম বাড়াতে, বাস, ট্যাক্সির ভাড়া বাড়বে, এবং সেটা কিন্তু ৫০ হাজার মানুষের নয়, দেশের, রাজ্যের প্রত্যেক মানুষের। রাজ্যের ২ কোটি পরিবারের পকেট থেকে ৫০ টাকা করে প্রতি মাসে বেশি দিতে হবে, সঙ্গে আছে জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির অনিবার্য চাপ। আমাদের ডাডা গেলেন কই?
আরও পড়ুন: Aajke | মুখ্যমন্ত্রী ধক দেখালেন, যোগ্যদের পাশে আছি: মমতা
মুখটাকে কই মাছের মতো করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ দাবি করে নিজে সেই গদিতে বসার কথা বলে যাচ্ছেন, একবারের জন্যও বলেছেন এই মূল্যবৃদ্ধি এই বাংলার মানুষকে আরও বিপন্ন করবে। মাঠে জল নেই, এখনও সেচের জন্য পাম্প ব্যবহার হয়, ডিজেলের দাম বাড়লে চাষিদের মাথায় হাত পড়ে, জানেন সেটা? বোঝেন সেটা শুভেন্দুবাবু? ভটভটিতে করে আনাজ নিয়ে যাওয়া হয় বাজারে, অনিবার্যভাবেই দাম বাড়বে শাকসব্জির, মুখ খুলেছেন, কাঁথির খোকাবাবু? এবং এটাই তো প্রথমবার নয়, লাগাতার বেড়েই চলেছে গ্যাস সিলিন্ডারের দাম, বাড়ছে পেট্রল ডিজেলের দাম, মূল্যবৃদ্ধির ফলে মানুষ চোখে সর্ষেফুল দেখছে, এটাই মোদিজির সেই আচ্ছে দিন, তারমধ্যে তথ্য বলছে বেকারত্ব সামান্য কিছুটা কমার পরে আবার হু হু করে বাড়তে শুরু করেছে, বিভিন্ন আইটি কোম্পানিতে চাকরি ছাঁটাই শুরু হয়েছে কারণ ট্রাম্প সাহেব তাঁর নিজের দেশের চাকরি বাঁচানোর জন্য সে দেশের ইউনিভার্সিটি থেকে সরকারি দফতরে বিরাট ছাঁটাইয়ের ফতোয়া জারি করে দিয়েছেন, তার প্রভাব আমাদের দেশেও এসে পড়েছে, এখানকার আইটি কোম্পানিগুলো হঠাৎই টলমল করছে। মোদিজির এক একটা সিদ্ধান্তে বিকিয়ে যাচ্ছে দেশের বড় বড় সরকারি প্রতিষ্ঠান, রেল, ডাক তার, বন্দর, এয়ারপোর্ট। চাকরি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে ২৪ ঘন্টার নোটিসে। কেউ কোনও প্রতিবাদ দেখতে পাচ্ছেন? আমাদের কাঁথির খোকাবাবু এগুলো জানেন না? জানেন না যে কেবল মাত্র গত ১০ বছরে সরকারি চাকরির ২৭ শতাংশ পোস্ট তুলে দেওয়া হয়েছে, ভ্যানিশ করে দেওয়া হয়েছে, সে সব পদ অবলুপ্ত কাজেই সেগুলোতে আর নতুন করে লোক নেওয়াই হবে না, যদি সংখ্যার হিসেবে ধরি তাহলে গত দশ বছরে কেবল ৬.৮ লক্ষ সরকারি চাকরি ভ্যানিশ হয়ে গেছে, উনি এই বাংলার ৫০ হাজার নিয়ে কুমিরের কান্না কাঁদছেন? আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, গ্যাসের দাম বাড়ল ৫০ টাকা সিলিন্ডার পিছু, ডিজেল বাড়ল লিটারে দু’ টাকা, ২৭ শতাংশ সরকারি চাকরির পদ অবলুপ্ত করে দেওয়া হয়েছে মোদিজির রাজত্বকালে, এ নিয়ে বোবা হয়ে থাকা শুভেন্দু অধিকারী যখন ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরির কথা বলেন, সেটা কি বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হয়? শুনুন মানুষজন কী বলছেন।
এবং শেয়ার বাজার, এক দিনে বাজার থেকে উধাও ২০ লক্ষ কোটি টাকা, এর মধ্যেই আছে মধ্যবিত্তদের টাকা। ব্যাঙ্কে সুদ কমিয়ে দেওয়ার পরে তাঁদের সামান্য পুঁজিকে বাজারে বিনিয়োগ করার জন্য মিউচুয়াল ফান্ডে কিছু টাকা রাখতেন, যাঁরা রেখেছিলেন, তাঁদের প্রত্যেকের বিরাট টাকা উবে গেছে, সোমবারের বাজার রক্তাক্ত, না আমাদের অর্থমন্ত্রী, না আমাদের প্রধানমন্ত্রী, কেউ একটা কথাও বলছেন না। আসলে এই ক্রাইসিসকে মুখোমুখি সামাল দেওয়ার ধক নেই, চীনের উপরে ট্যারিফ ঘোষণা করেছে অ্যামেরিকা, চীন পালটা ট্যারিফ ঘোষণা করেছে, কানাডা তাই করেছে, মেক্সিকো তাই করেছে আর ভারত? ৫৬ ইঞ্চ কা সিনা? দেশ কা চৌকিদার? তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমার বাংলার মানুষের পকেটমারি হয়ে গেল, কাঁথির খোকাবাবু রামনবমীর মিছিল করছেন।