শান্তিপুর: বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। তাই দুর্গাপুজো ও কালীপুজো শেষ হওয়ার পর বাঙালি মেতে উঠেছে জগদ্ধাত্রীর উপাসনায়। মা মহামায়ার আরেক রূপ হলেন জগদ্ধাত্রী। তাই দুর্গার সঙ্গে বাঙালির এই দেবীমূর্তির বহু মিল রয়েছে। তবে মূর্তি তৈরি করে প্রথম জগদ্ধাত্রী পুজো হয় নদিয়ার শান্তিপুরের সুত্রাগড় পীরের হাটে। আজ মৃৎশিল্পের জন্য যে কৃষ্ণনগর বিখ্যাত, সেই সময় সেখানে জগদ্ধাত্রীর মূর্তি গড়ার মত কোন মৃৎশিল্পী ছিলেন না। তাই কৃষ্ণনগর রাজবাড়ীর পুজোর জন্য দেবী মূর্তি গড়ার নদিয়ার গুপ্তিপাড়ায় কয়েকজন মৃৎশিল্পীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তখন বাহকেরা কাঁধে করে ঠাকুর নিয়ে যেতেন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায়। আর সেই সময়ে দেবী মূর্তি তৈরির কাজ শেষ হতে দেরি হওয়ায় যথাসম্ভব দ্রুতগতিতে হেঁটে কৃষ্ণনগরে পৌঁছে যাওয়ার চেষ্টা করলেও গঙ্গার এপারে শান্তিপুর আসতেই অষ্টমী তিথি শেষ হওয়ার সময় এগিয়ে আসে। কৃষ্ণনগর যেতে গেলে নবমী তিথি পড়ে যাবে, আর তেমনটা হলে দেবীর পুজো হবেনা, তা বুঝতে পেরে সূত্রাগড় পীরের হাটে মাকে নামিয়ে দেন বাহকেরা।
আরও পড়ুন: ১৩০ বছরে কৃষ্ণনগরের নুড়িপাড়া বারোয়ারির জগদ্ধাত্রী পুজো
সেই সময় হাট বসত সেখানে। দেবীর মূর্তি দেখে ওই হাটের লোকজন ভক্তিভরে নিয়ম মেনে পুজো করেন। সেই থেকে সূত্রাগড়ে জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু হয়। পিঠেরহাট জগদ্ধাত্রী মন্দিরের পাশেই রয়েছে একটি পীর মাজা। আজ থেকে প্রায় ৩৫০ বছর আগে ওই জায়গায় হিন্দু এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ একত্রিত হয়ে পুজোর সমস্ত কিছু জোগাড় করেন। তারপর থেকেই প্রত্যেক বছর দুই সম্প্রদায়ের মানুষ একসাথে জগদ্ধাত্রী পুজোর উৎসবে সামিল হতেন। এখন বর্তমান পরিস্থিতিতে পীর বাবার মাজার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করেন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজন। রবিবার নবমীর তিথি মেনে শুরু হবে জগদ্ধাত্রী দেবীর আরাধনা, আর একাদশীর দিন নিয়ম মেনেই হবে বিসর্জন।
দেখুন আরও খবর: