
জয়জ্যোতি ঘোষ
আপনি কি স্বপ্ন দেখেন? বা কারও স্বপ্ন চোখের সামনে ভাঙতে দেখেছেন? সেখান থেকে ফিনিক্সের মতো প্রত্যাবর্তন ঘটিয়ে আবারও সেই স্বপ্নকে পূরণ করতে দেখেছেন? যদি এগুলো কোনওটিই না দেখে থাকেন তাহলে একবার পারথ টেস্টের দ্বিতীয় দিনের হাইলাইটস দেখে নিতে পারেন।
মুম্বইয়ের আজাদ ময়দান থেকে বড় হয়ে ওঠা যশস্বী জয়সওয়াল (Yashasvi Jaiswal)। বাবা একসময়ের পানিপুরি বিক্রেতা। মনে হয় না পারথে একসময় দাদাগিরি করার স্বপ্ন স্বয়ং যশস্বী ছাড়া আর কেউ দেখেছিলেন বলে। তাঁর আত্মীয়-বন্ধু-প্রতিবেশী কেউ নন। নিজের স্বপ্ন তো নিজেকেই দেখতে হবে। আর স্বপ্ন দেখলেই সেটা পূরণ হবে। মাঝে ভেঙেও যেতে পারে। কিন্তু হাল ছাড়লে চলবে না। পারথ টেস্টের প্রথমদিন মনে করে দেখুন। একটা শট ড্রাইভ করতে গিয়ে গালি অঞ্চলে ক্যাচ দিয়ে খাতা না খুলে প্যাভিলিয়নে ফিরতে হয়েছিল যশস্বী জয়সওয়ালকে। ভারতী উইকেটে সেই শট খেললে হয়ত বাউন্ডারিও হয়ে যেত। অস্ট্রেলিয়ান উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটা ছিল সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ! সেই চ্যালেঞ্জ সাদরে গ্রহণ করেন দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামা যশস্বী জয়সওয়াল। দ্বিতীয় দিনের শেষে যশস্বী জয়সওয়ালের নামের পাশে ১৯৩ বলে অপরাজিত ৯০ রান। ৭ টি বাউন্ডারি এবং দুটি ওভারবাউন্ডারি। শুধু এখানেই শেষ নয়। অস্ট্রেলিয়ান ফাস্ট বোলার মিচেল স্টার্কের চোখে চোখ রেখে স্লেজিং-ও করেন। বলেন, ‘বল অনেক আস্তে আসছে।‘ উল্লেখ্য, এদিন হর্ষিত রানাকে স্লেজিং করেছিলেন স্টার্ক। বলেছিলেন, ‘আমি কিন্তু তোমার থেকে জোরে বল করতে পারি।‘ হর্ষিতের হয়ে ব্যাট হাতে হয়ত উত্তর দিলেন যশস্বী! এরপর নাথন লিওকে ডাউন দ্য ট্র্যাক এসে স্ম্যাশও করলেন। মুম্বইয়ের আজাদ ময়দানের সেদিনের স্বপ্নে বিভোর ছেলেটা এদিন পারথে ভারতের ‘যশ’ লাভের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ‘যশ’ এর এই ‘রাজ’ করার মস্তানি মনে রাখবে পারথ।
আরও পড়ুন: যশস্বী-রাহুল জুটিতে তছনছ একের পর এক রেকর্ড
আরেকজন, কেএল রাহুল (KL Rahul)। বেশকিছুদিন ধরেই সমালোচনার জেরবার। সম্প্রতি রানের মধ্যেও তেমন ছিলেন না। গত মরশুমের আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজিও তাঁকে ছেড়ে দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয় ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক বলেছিলেন, ‘আমরা শুধু তাঁদেরকেই ধরে রাখতে চেয়েছি, যাঁরা ব্যক্তিস্বার্থকে দূরে সরিয়ে দলীয় স্বার্থ নিয়ে বেশি ভাবে।‘ বলা বাহুল্য, নিশানা ছিল প্রাক্তন অধিনায়ক কেএল রাহুলের দিকেই। এত কিছুর পরও পারথের কঠিন উইকেটে দেখালেন কীভাবে টেস্টে ব্যাটিং করতে হয়। ১৩৩ বলে অপরাজিত ৬২ রান। সঙ্গে চারটি বাউন্ডারি। পারথের সবুজ গালিচায় যেন ‘বাজিগর’ হয়ে উঠলেন কেএল রাহুল! তবে এখনও শেষ হয়নি। কারণ দুজনেই যে অপরাজিত। তাই বলতেই হচ্ছে, ‘ পিকচার আভি বাকি হ্যায় মেরে দোস্ত…‘
তাহলে কী বুঝলেন? স্বপ্ন দেখতে হবে। সেটা ক্ষণিকের জন্য ভেঙেও যেতে পারে। কিন্তু হাল ছাড়লে চলবে না। একদিন স্বপ্ন সত্যি হবেই-ঠিক এদিনের পারথের যশস্বী-রাহুলের মতো!