কলকাতা: বাংলাদেশে বন্যা (Flood) পরিস্থিতিতে ভারতের কাছে সাহায্য চাইলেন সে দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুস (Md Yunus)। বাংলাদেশে (Bangladesh) ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে ডেকে পাঠান মুহাম্মদ ইউনুস। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দুজনের এই বৈঠকে অন্য পরিস্থিতির পাশাপাশি, বন্যা পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। সেখানে কি বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কোনও আলোচনা হয়েছে? সরকারি চাকরিতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনের জেরে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে চলে আসেন শেখ হাসিনা। তারপরই ইউনুসের নেতৃত্বে সেখানে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। শেখ হাসিনার নামে একের পর এক মামলা হয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন থানায়। এই প্রেক্ষিতে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের দিকে তাকিয়ে আন্তর্জাতিক মহল। ইউনুস বন্যা রুখতে ভারতের সাহায্য চেয়েছেন। স্বাভাবিক ভাবে শেখ হাসিনার কী হবে তা জানতে মুখিয়ে সব মহল। কারণ বাংলাদেশের বিচার প্রক্রিয়ায় হাসিনাকে আনতে ভারতের কাছে দরবার করার দাবি উঠতে শুরু করেছে সে দেশে।
ভারতের হাইকমিশনারের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে ইউনুসের প্রেস সচিব সফিকূল আলম জানিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে আলোচনায় ত্রিপুরায় বৃষ্টি এবং বাঁধের কথাও এসেছে। সেখানে ভারতের তরফে জানানো হয়েছে ডুম্বুর বাঁধে জলের উচ্চতা বেশি থাকায় সেখান থেকে জল স্বয়ংক্রিয় ভাবে বেরিয়েছে। দুদেশের মধ্যে থাকা অভিন্ন নদীগুলির জলবন্টন নিয়ে যে সমস্যা আছে তার নিষ্পত্তি চাইছে বাংলাদেশ। সেই বিষয়টিও জানিয়েছেন মুহাম্মদ ইউনুস।
আরও পড়ুন: আরজি কর কাণ্ডে রাজ্যের ভূমিকায় অসন্তোষ, বঙ্গরত্ন ফেরালেন শিক্ষক
বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি। এখনও বিপদসীমার নীচে নামেনি জলস্তর। টানা বৃষ্টিতে, সিলেট, কুমিল্লা, ফেনি, লক্ষ্মীপুর সহ পূর্ব সীমান্ত লাগোয়া জেলাগুলি প্লাবিত হয়েছে। যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত লক্ষাধিক মানুষ। প্লাবিত হয়েছে কমপক্ষে বাংলাদেশের ১২টি জেলা। দুর্গত মানুষের সংখ্যা ৩৬ লাখেরও বেশি। বাংলাদেশের অভিযোগ, ত্রিপুরার ডুম্বুর বাঁধ থেকে জল ছাড়ার ফলেই নাকি সেদেশে এই অকাল বন্যা। ভারতের বিদেশমন্ত্রক সূত্রের খবর, ত্রিপুরার ডুম্বুর জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাঁধ খুলে দেওয়া হয়েছে। তার জেরে বাংলাদেশে বন্যা হচ্ছে। সেদেশে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ায় আমরা উদ্বিগ্ন। এটা একেবারেই সত্য নয়।
গত কয়েক দিন ধরে ভারত ও বাংলাদেশে নান জায়গায় ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। দুদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত গোমতী নদী সংলগ্ন এলাকায় কয়েক দিন ধরে এবছরে সব থেকে বেশি বৃষ্টি হয়েছে। আমরা উল্লেখ করতে চাই ডুম্বুর জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বাংলাদেশের সমতলভূমি থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে উচ্চভূমিতে অবস্থিত। এটি একটি কম উচ্চতার বাঁধ। যা থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। এখান থেকেও বাংলাদেশে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ত্রিপুরা ও পাশের জেলাগুলিতে ২১ অগাস্ট থেকে ভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ফলে এই এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। দুদেশের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনে বিঘ্ন ঘটেছে। তবু আমরা বাংলাদেশকে বন্যা সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
তবে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, ভারতের উঁচু এলাকার জল বাংলাদেশে ধেয়ে এসে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি করেছে। কোনও ধরনের আগাম সতর্কতা ও প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ না দিয়ে বাঁধ খুলে দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে ভারত অমানবিকতার পরিচয় দিয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে অসহযোগিতা করেছে তারা। আমরা আশা করব ভারত বাংলাদেশের জনগণ বিরোধী এধরনের নীতি থেকে সরে আসবে। এবং আমরা একত্রে কীভাবে বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণকে এধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করতে পারি সে বিষয়ে সুষ্ঠু সমাধানের পথ বের করতে হবে।
আরও খবর দেখুন