নয়াদিল্লি: ভারতের রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হলেন এনডিএ প্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মু। বিরোধীদের সর্বসম্মত প্রার্থী যশবন্ত সিনহাকে হারিয়ে তিনি দেশের প্রথম আদিবাসী ও মহিলা রাষ্ট্রপতি হলেন। বৃহস্পতিবার সংসদের ৬৩ নম্বর ঘরে সকাল থেকে ভোটগণনাকে কেন্দ্র করে গোটা দেশের নজর ছিল ফলের দিকে। অবশেষে দ্রৌপদীই দেশের ১৫-তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে রাইসিনা হিলসের বাসিন্দা হতে চলেছেন৷ যদিও এই নির্বাচনের ফল কী হতে চলেছে তা অনেকাংশেই স্পষ্ট ছিল৷ দ্রৌপদী যে অনায়াসে জিততে চলছেন তা প্রথম দু’রাউন্ড গণনার পরই বোঝা যায়৷ তাই চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার আগেই বিজয় উৎসব শুরু হয়ে যায় রাজ্যে রাজ্যে৷ আদিবাসীরা দ্রৌপদীর পোস্টার হাতে বিজয় উল্লাসে মেতে ওঠেন৷ মিষ্টি বিলি শুরু হয়ে যায় তাদের মধ্যে৷ এদিন তৃতীয় রাউন্ড গণনার পর দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে জয় নিশ্চিত করে ফেলেন এনডিএ প্রার্থী৷ মোট ভোটমূল্যের ৫০ শতাংশের বেশি গিয়েছে দ্রৌপদীর পক্ষে৷
রাজ্যসভার সেক্রেটারি জেনারেল পি সি মোদি জানান, তৃতীয় রাউন্ডের গণনা পর্যন্ত বৈধ ভোট ৩২১৯৷ তার ভোটমূল্য ৮ লক্ষ ৩৮ হাজার ৮৩৯৷ এনডিএ প্রার্থী পেয়েছেন ২১৬১টি ভোট৷ ভোটমূল্য ৫ লক্ষ ৭৭ হাজার ৭৭৭৷ অন্যদিকে বিরোধী জোটের প্রার্থী যশবন্ত পেয়েছেন ১০৫৮ ভোট৷ যার ভোট মূল্য ২ লক্ষ ৬১ হাজার ৬২৷ প্রাথমিক হিসেব অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, সারা দেশের ১০৪ জনের বেশি বিধায়ক ক্রস ভোট দিয়েছেন দ্রৌপদীর সমর্থনে৷ এছাড়া বিভিন্ন দলের ১৭ জন সাংসদও ক্রস ভোট করেছেন দ্রৌপদীর পক্ষে৷ ভোটের আগে থেকেই বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দাবি করে আসছিলেন, এনডিএ প্রার্থী অনেক বাড়তি ভোটও পেয়ে যাবেন৷ ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, বিজেপি নেতাদের সেই দাবি সত্যি প্রমাণিত হল৷
২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এনডিএ প্রার্থীর বিপুল ভোটে জয় বিজেপিকে অনেকটাই স্বস্তি দিল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷ এবার অনেক আগে থেকেই তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্মিলিত বিরোধী জোটের রাষ্ট্রপতি প্রার্থী করার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেন৷ ১৫ জুন দিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবে তিনি বিরোধী দলগুলির বৈঠকও ডাকেন৷ তাতে এনসিপি, আরজেডি-সহ ১৭টি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃত্ব হাজির ছিলেন৷ এমনকী সেই বৈঠকে হাজির ছিলেন সিপিএম, সিপিআইয়ের নেতারাও৷ সেই বৈঠকে অবশ্য কোনও প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করা যায়নি৷ মমতা চেয়েছিলেন শরদ পাওয়ার প্রার্থী হন৷ কিন্তু তিনি রাজি হননি৷ তৃণমূল নেত্রীর দ্বিতীয় পছন্দ ছিল ফারুক আবদুল্লা৷ রাজি হননি তিনিও৷ এরপর মমতা চেয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধী রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হন৷ কিন্তু গোপালকৃষ্ণও তাঁর অক্ষমতার কথা জানিয়ে দেন৷
পরবর্তীকালে এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ারের বাড়িতে বসে বিরোধীদের দ্বিতীয় বৈঠক৷ যদিও সেই বৈঠকে মমতা নিজে হাজির ছিলেন না৷ মূলত শরদ পাওয়ারের ইচ্ছেতেই তৃণমূলের অন্যতম সর্বভারতীয় সহ সভাপতি যশবন্ত সিনহার নাম উঠে আসে৷ তিনি রাজিও হয়ে যান৷ বাম এবং কংগ্রেস নেতারা চেয়েছিলেন তৃণমূলের সদস্যপদে ইস্তফা দিয়ে যশবন্ত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করুন৷ বিরোধী প্রার্থীর নাম ঘোষণার পরই বিজেপি রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে দ্রৌপদীর নাম ঘোষণা করে৷ রথের দিন সব বিরোধী নেতাকে অবাক করে দিয়ে আচমকাই মমতা বলে বসেন, জনজাতি গোষ্ঠীর প্রার্থী হিসেবে দ্রৌপদীর নাম বিজেপি আগে জানালে তিনি ভেবে দেখতেন৷