ওয়েব সিরিজের যুগে ছবির অন্তরঙ্গ দৃশ্য দেখে আমরা যতই স্বাভাবিক থাকি না কেন, ছবির প্লটের স্বার্থে সেই দৃশ্যের প্রয়োজনীয়তা কিংবা অপ্রয়োজনীয়তা নিয়ে যতই গলা চড়াই না কেন, আজও কিন্তু ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি বা ইন্টিমেট হাইজিন নিয়ে কথা বলতে গেলে একাধিক সঙ্কোচ ঘিরে ধরে । এই ইন্টিমেট হাইজিন(intimate hygiene) বজায় রাখা যে শুধু মহিলাদের জন্যই নয় বরং ব্যক্তি নির্বিশেষে সকলের জন্য প্রয়োজন। তবে ইন্টিমেট হাইজিনের অভাবে মহিলাদের একাধিক সমস্যায় পড়তে হয় বেশি। যোনিতে সামান্য জ্বালা বা চুলকুনি থেকে শুরু করে যোনিমুখে ক্যানসারের সম্ভাবনা বেড়ে যায় কয়েকগুণ।
মূত্রনালীর সংক্রমণের মহিলাদের মধ্যে বেশি কেন?
মূত্রাশয়(urinary bladder) ও মূত্রনালীর(urinary tract) সংক্রমণের(infection) প্রবণতা পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্য প্রায় ৩০গুন বেশি জানাচ্ছেন চিকিত্সকরা। কারণ, মানব দেহে ইউরেথ্রা(urethra) বলে যে পাতলা ফাইব্রোমাসকিউলার (fibromuscular) নালী রয়েছে সেটির দৈর্ঘ্য পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের ক্ষেত্রে অনেকটাই কম। তাই ব্যক্টেরিয়া(bacteria)সহজে এই পথে মহিলাদের শরীরে প্রবেশ করে দ্রুত ব্ল্যাডারে পৌঁছে যায়। পাশাপাশি মহিলাদের এই ইউরেথ্র্যাল ওপেনিং(urethral opening) যোনি(vagina) এবং মলদ্বার(anus) খুব কাছেই। এতে সংক্রমণের প্রবণতা থাকে অনেক বেশি।
গোপনাঙ্গে পরিচ্ছন্নতার অভাবে যোনিমুখে ক্যানসারও হতে পারে
গোপনাঙ্গের স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতার অভাব
কিন্তু সচেতনতার অভাবে শুধু পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর মহিলারাই নয় শহরে বসবাসকারী এবং পড়াশোনা জানা আধুনিকাদের অনেকে এই পার্সোনাল হাইজিন(personal hygiene) নিয়ে তেমন সচেতন(lack of awareness) নন। ঋতুস্রাবের (menstruation)সমস্যা থেকে শুরু করে মহিলাদের পার্সোনাল হাইজিন নিয়ে একাধিক বিষয় সব সময় উহ্যই রাখা হয়।
গোপনাঙ্গ পরিষ্কার রাখতে এই বিষয়গুলি মাথায় রাখা জরুরী
মহিলাদের ইন্টিমেট হাইজিন নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে প্রথমে বুঝতে হবে যে শরীরের এই অংশে পরিষ্কার –পরিচ্ছন্নতা কাজ কীভাবে হলে সবাই উপকার পাবে। পাচনতন্ত্রে যেমন উপকারী গাট ব্যাক্টেরিয়া (friendly gut bacteria) থাকে ঠিক তেমনই যোনির (vagina)আশেপাশের চামড়ায় উপকারী ব্যাক্টেরিয়া(friendly bactera) থাকে। এই ব্যাক্টেরিয়া এক ধরনের অ্যাসিড(acid) তৈরি করে। এই অ্যাসিড শরীরের ভিতরের স্বাস্থ্য ভাল রাখে এবং সংক্রমণকারী ব্যাক্টেরিয়া(bacteria) কিংবা ইস্টের(yeast) বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তাই নিত্যদিনের প্রাকৃতিক কাজকর্ম থেকে শুরু করে ঋতুস্রাব ও যৌন মিলনের পর এই অংশের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা ভীষণ প্রয়োজনীয়। তা না রাখলে ব্যাক্টেরিয়া যোনিতে প্রবেশ করে একাধিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
ইন্টিমেট হাইজিন ও গোপনাঙ্গে সাবান ও অন্যান্য রাসায়নিকের ব্যবহার
গোপনাঙ্গ রোমমুক্ত রাখতে অনেকে নানা রকমের হেয়ার রিমুভ্যাল পদ্ধতি(hair removal techniques) যেমন শেভিং(shaving) করে এর ফলে ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ(bacteria infection) বেড়ে যায়। যদিও ভ্যাজাইনার(vagina) আশেপাশে থাকা ব্যাক্টেরিয়া পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখে। তবে অত্যাধিক কড়া রাসায়নিক, ক্লেনজার, ক্ষার যুক্ত সাবান কিংবা বডি ওয়াশ ব্যবহারে উপকারী ব্যাক্টেরিয়া ল্যাক্টোব্যাকিলি নষ্ট হয়ে যায়। যোনিপথ শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। এর ফলে গোপনাঙ্গের সমস্যা যেমন ভালভা ইনফেকশন(vulva infection), ভালভোভ্যাজাইনিটিস(vulvovaganitis) এমনকি যোনিমুখে ক্যানসারের মতো গুরুতর রোগ হতে পারে।
তাই যে কোনও বয়সেই হোক না কেন মহিলাদের নিজেদের গোপনাঙ্গের স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে সজাগ ও সচেতন থাকা জরুরী। গোপনাঙ্গের সামান্য কিছু সমস্যা হলেও চিকিত্সকের সঙ্গে কথা বলা উচিত। এ ক্ষেত্রে চিকিত্সকের পরামর্শ অনুযায়ী ইন্টিমেট ইাইজিনের সামগ্রী ব্যবহার করলে ভ্যাজাইনাল পিএইচ লেভেল(vaginal pH level) বজায় থাকে। এর ফলে যোনিতে জ্বালা, চুলকুনির মতো সমস্যার সৃষ্টি হয় না।
(ছবি সৌ: Unsplash)