Placeholder canvas

Placeholder canvas
HomeফিচারBappi Lahiri: ইয়াদ আ রাহা হায়

Bappi Lahiri: ইয়াদ আ রাহা হায়

Follow Us :

শরীরটা বেশ কয়েকবছর ধরে ভালো যাচ্ছে না সুপারস্টারের। মেরুদণ্ডের ব্যাথাটা ভীষণই ভোগাচ্ছে। রাতে ভালো ঘুম হয় না। পাবলিক পারফরমেন্সে যাওয়াও কমিয়ে দিয়েছেন মিঠুন চক্রবর্তী (Mithun Chakraborty)। দেশে বিদেশে বহু চিকিৎসকের পরামর্শ মেনেও কোনও উন্নতি হয়নি। এখন বেশিরভাগ সময়েই অন্তরালে থাকেন তিনি। অন্যান্য দিনের মতোই বুধবারও বেশ দেরি করেই ঘুম ভেঙেছে তাঁর। প্রথমে পরিবারের লোকেরা খবরটা দিতে রাজি ছিলেন না  তাঁকে। কিন্তু হাতে মোবাইল থাকলে খবর পেতে কি খুব একটা দেরি হয়? পার্সোনাল মোবাইল উপচে পড়ছে মিসড কলের ভিড়ে। মুহুর্মুহু ঢুকছে টেক্সট, হোয়াটসআপ মেসেজ। অন্যদিকে হাউ হাউ করে কাঁদছেন আশির দশকের ডিস্কো ডান্সার। জীবনের তালটাই কেটে গেল যে আজ।

মিঠুনের পরিবারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে, বাপি লাহিড়ীর (Bappi Lahiri) মৃত্যুর খবরে আক্ষরিক অর্থেই ভেঙে পড়েছেন ডিস্কো ডান্সার (Disco Dancer) সুপারস্টার। এই কদিন আগেও দুজনে চুটিয়ে আড্ডা মেরেছেন একটি রিয়ালিটি শো এর অনুষ্ঠানে। ব্যাক স্টেজে বসে দুজনের গল্প শেষই হচ্ছিল না। বাপিদা একটু দেরি করেই পৌঁছেছিলেন। কিন্তু তারপর অনুষ্ঠান শেষে নাকি রীতিমতো অনুরোধ করে দু’জনকে গাড়িতে ওঠানো হয়। আড্ডা আর ভাঙতেই চায় না। অদৃষ্টের কি পরিহাস দুজনেই কি সেদিন বুঝেছিলেন যে এটাই ইহলোকে দুজনের শেষ সাক্ষাৎ? মিঠুন চক্রবর্তীকে সেদিন রীতিমতো তরতাজা লাগছিলো আর বাপিদা একটু মৃয়মানই ছিলেন। আড্ডার শেষদিকে মিঠুন রীতিমতো ধমকের শুরে বাপিদাকে বলেছিলেন যে শরীরের যত্ন নাও। আবার তো স্টেজ উঠে টানা ৩ ঘন্টা শো করতে হবে নাকি? মিচকি হেসে প্রসঙ্গ পাল্টেছিলেন বাপিদা। সেটাই ছিল দুই কিংবদন্তির শেষ সাক্ষাৎকার।

কাট টু আমেদাবাদ। তখন সবে শুরু হয়েছে ইন্ডিয়ান লীগ. আইপিএল যুগের কাহিনী। মিঠুনদা তখন বেঙ্গল টাইগারস টিমের মালিক। সক্কাল সক্কাল ডেকে পাঠালেন হোটেলের ঘরে। খালি গায়ে বাঘের ছাপ প্রিন্ট করা স্কার্ফ এ ঢাকা রয়েছে উর্ধাঙ্গ। বাঘের ছাপটাই তো তার দলের সিম্বল. কথায় কথায় উঠে এলো ব্যাপি লাহিড়ী আর মিঠুন চক্রবর্তীর রসায়নের কথা। মিঠুনের পরিষ্কার উত্তর, বাপ্পি লাহিড়ী না থাকলে আজকের মিঠুন চক্রবর্তী হয় না, হত না। ডিস্কো ডান্সার এর আগে পরিচালক রবিকান্ত বাপিকে ফোন করে বলেন যে একটি নতুন ছেলের জন্য মিউজিক তৈরী করতে হবে। নতুন ছেলের মতোই নতুন ধরণের মিউজিক চাই। এমন কিছু যন্ত্র ব্যাবহার করতে হবে যে শব্দ ভারতবাসী আগে শোনেনি। সুর হতে হবে সম্পূর্ণ আলাদা। এই টিউন এর মধ্য দিয়েই ছেলেটাকে লঞ্চ করা হবে।

আরও পড়ুন- Lata Mangeshkar: ছোটবেলার একটা ঢাউস রেডিও আর লতা মঙ্গেশকর

বাপিদা সৃষ্টি করলেন আই আম এ ডিস্কো ডান্সার এর মতো সুর যা সারা ভারতবর্ষকে নাচিয়ে দিয়েছিল। মিঠুন (Disco King of India) কে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। মিঠুনের ভাষায়, বাপিদা আসলে একটা এনার্জি যে পুরো শক্তিটাকে তাঁর মিউজিকে ব্যবহার করেন। নায়ক থেকে মহানায়ক হয়ে উঠতে গেলে সঙ্গে কিছু ব্রহ্মাস্ত্র থাকতে হয়। বাপিদা সেইরকম একটা ব্রহ্মাস্ত্র। যখনই শুনতেন যে ছবির নায়ক আমি, সঙ্গে সঙ্গে যে সুর সৃষ্টি করতে সেটা আমার অভিনয়,আমার শরীরী ভাষা, আমার ব্যবহার, আমার কথা বলার স্টাইল এর সাথে অদ্ভুতভাবে মিলে যেত। লোকে যেভাবে মিঠুন চক্রবর্তীকে দেখতে ভালোবাসেন, বাপিদা যেন সুরের মাধ্যমে আমাকে ঠিক সেই ভাবেই উপস্থাপিত করতেন। আর সেই জন্যই আমার উত্তরণের একটা শক্ত খুঁটি বলবো বাপিদাকে।

ডিস্কো ডান্সার মিঠুন

ঠিক তাই, উত্তরণের একটা শক্ত খুটিই বটে. আর সেই জন্যই ডিস্কো ডান্সারের পর দুজনে মিলে বক্স অফিস কাঁপিয়েছেন দালাল, কমান্ডো বা ডান্স ডান্সের নাচের ছন্দে। কসম পয়দা করনে ওয়ালে কি থেকে গুরু- মিঠুন মানেই পেছনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন বাপিদা। একসাথে প্রায় ২০ বছর কাজ করেছেন দু’জন। বলিউডকে দিয়েছেন ৩০ এর বেশি সুপার ডুপারহিট।

আর বাপিদা কি ভাবতেন মিঠুনকে নিয়ে? বাপিদার কাছে মিঠুন ছিলেন ভারতবর্ষের চলচিত্রের সর্বকালের সেরা অভিনেতা। হায়াত হোটেলের নিজের সুইটে বসে একবার আড্ডার ছলে বলেছিলেন যে মিঠুন আসলে হিন্দি সিনেমার গতিপথটাই পাল্টে দিয়েছিলো এক সময়। অভিনেতা এবং নায়ক হয়েও যে নৃত্যশৈলীতে তুখোড় হতে পারেন এটা মিঠুন প্রথম ট্রেন্ড সেট করেন। মিঠুনের আগে নাচ বলতে নায়ক গাছের ডাল ধরে ঝুলছেন অথবা নায়িকার চারপাশে গোল হয়ে ভাসান ডান্স করছেন। মিঠুন প্রথম প্রমাণ করলেন যে হিন্দি সিনেমার নায়ক মানে তুখোড় নাচ আর সেই নাচ দেখতে মানুষ হলে যাবেন।

আরও পড়ুন – Bappi Lahiri Death: ‘ইয়াদ আ রহা হ্যায়…হুয়ে তুম কঁহা গুম’

মিঠুনের ছবিতে কাজ করার মজা হল সঙ্গীত পরিচালক যে নতুন ধারার মিউজিক তৈরী করুক না কেন, মিঠুন সেটাকেই নিজের ক্যারিশমা দিয়ে ব্যাবহার করে নেবে। তাই আজ লোকে ইয়াদ আ রাহা হায় বা গুটুর গুটুর এর সুর মনে রেখেছে। কৃষ্ণা ধরতি পে আ যা তে মিঠুনের সেই অভিব্যাক্তি আরও কারোর পক্ষে দেওয়া সম্ভবই ছিল না বলে বিশ্বাস করতেন বাপ্পিদা। বা তুফান-এর সেই পিছে তেরা গানের সিকোয়েন্স। যেখানে মিঠুন মোটরবাইক নিয়ে মীনাক্ষী শেষাদ্রিকে প্রেম নিবেদন করছেন। মোটরবাইকের ওই স্ট্যান্ট, তার সঙ্গে ব্রেকড্যান্স বাপ্পিদার মতে সেই সময় মিঠুন ছাড়া আর কেউ করতেই পারতেন না।

অ্যালবাম ঘেঁটে মিঠুন চক্রবর্তী ও বাপি লাহিড়ী

ভারতীয় চলচিত্রের ইতিহাস এর আগে অনেক জুটি পেয়েছেন। জুটি এসেছে, জুটি ভেঙেও গিয়েছে। কিছু জুটি চিরন্তন অমলিন হয়ে উঠেছে। নার্গিস রাজকাপুর, লতা নার্গিস, কিশোর রাজেশ খান্না, অমিতাভ কিশোর ঠিক যেভাবে আমাদের মনের মনিকোঠায় স্থান করে নিয়েছে,তেমনি এক চিরন্তন বাঙালি জুটি বুঝি মিঠুন-বাপ্পি। মিঠুন না থাকলে বাপ্পিদা কি সাহস পেতেন ছবিতে ক্যালিপ্সো, ডিস্কো, পপ, হিপ হপ, ক্যান ক্যান-এর সুর তাল লয়কে মিশিয়ে দিতে? নাকি মিঠুন সাহস পেতেন প্রাচ্যের যন্ত্র সংগীতে প্রাশ্চাত্যের নৃত্যশৈলীকে ব্যবহার করতে? এটা নিছক দু’জন সৃজনশীল মানুষের বাঁধন নয়, আসলে এই জুটি বুঝি দুটো শৈলীর বন্ধন, অভিনয় নৃত্য এবং সুর তাল যেখানে গাঁটছড়া বাঁধে।

কি আশ্চর্য, জুটিটা ভেঙে গেল প্রেম দিবসের পরের দিনেই। সত্যিই আজ মিঠুন চক্রবর্তীর চোখের জল ফেলার দিন। আসলে ওনার জীবন থেকে বাপি লাহিড়ী চলে গেলেন না। প্রবীণ মিঠুন চক্রবর্তী আর আশির দশকের মেগাস্টার ডিস্কো ডান্সার মিঠুনকেই যে চিরকালের মতো হারিয়ে ফেললেন। প্রবীণ মানুষটা আজ নিজের জীবনেরই নবীন অতীতটা হারিয়ে ফেললেন। জীবন খাতার একটি পাতাই যে ছাই হয়ে গেল। ইয়াদ আ রাহা হায় তেরা পেয়ার। কাহা হাম কাহা তুম, হুয়ে তুম কাহা গাম। ইয়াদ আ রাহা হায়।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments