Placeholder canvas

Placeholder canvas
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar | এনডিএ, আপাতত এক ভুলে যাওয়া ইতিহাস    

Fourth Pillar | এনডিএ, আপাতত এক ভুলে যাওয়া ইতিহাস    

Follow Us :

আরএসএস–বিজেপি হল সেই রাজনৈতিক দল যারা প্রয়োজনে সব মনে রাখে, প্রয়োজনে সব করতে পারে, প্রয়োজনে যা খুশি তাই বলতে পারে এবং একবারও ভাববেন না যে এই প্রয়োজনে সব করতে পারাটা আরএসএস–বিজেপির এক আদর্শগত অবস্থান। না, একেবারেই নয়, আদর্শগত অবস্থানের ওহ জমানা কব কা চলা গয়া। আপাতত আরএসএস-বিজেপি প্রয়োজনে সব বলতে পারে, করতে পারে, মনে রাখে যদি তা তাদের সরকারে থাকার জন্য প্রয়োজন হয়। না হলে সেসব ছেঁড়া কাগজ ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়ার জন্যই রাখা থাকে। ধরুন কর্নাটকের ভোটের আগে মোদিজি প্রায় বার নয় ওই রাজ্যে গিয়েছেন বিভিন্ন প্রকল্প ঘোষণা করতে বা উদ্বোধন করতে। এরমধ্যে বেঙ্গালুরুতে এক অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগেই রাস্তায় বিরাট তোরণ বানানো হল। প্রথম তোরণ বাসব আন্নার নামে, ইনি কে? ১১৩৭-এ জন্মেছিলেন, ১১৬৭-তে মারা গেছেন, ইনিই লিঙ্গায়েত ধর্মের প্রবর্তক। আর ইতিমধ্যে সব্বাই জানেন যে লিঙ্গায়েতরা কর্নাটকে প্রায় ১৪ শতাংশ মানুষ, যাঁদের ভোট মোদিজির দিকে ছিলই, কিন্তু তা ধরে রাখার দরকারও ছিল, কাজেই ১২০০ শতাব্দীর একজন মানুষের নামে তোরণ হল। পরের তোরণটা কেম্পেগৌড়ার নামে, ইনি কে? কর্নাটকের আরেক ক্ষমতাশালী জনগোষ্ঠী ভোক্কালিগাদের চিফটেন, নেতা। কাজেই মোদি–শাহ, আরএসএস-বিজেপির এনাদের কথা মনে পড়ে গেল। এর আগে কি মোদিজি বেঙ্গালুরু যাননি, কই তখন তো বাসব আন্না, কেম্পেগৌড়ার কথা বলেননি। এই এনারাই যখন গোটা উত্তর ভারতে গরুর মাংস খাওয়া, রাখা, বিক্রির অপরাধে মানুষকে পিটিয়ে খুন করেন, ঠিক সেই সময়ে এনাদের মেঘালয়ের বিজেপি এমএলএ ঘোষণা করেন, ক্ষমতায় এলে কম দামে বিফ দেওয়া হবে। হ্যাঁ, এটাই বিজেপি। কাজের বেলায় কাজি, কাজ ফুরোলেই পাজি। 

বিজেপির উত্থান কোন সময় থেকে? ওনারা ভারতীয় সংসদীয় গণতন্ত্রে বহুদিন একলাই ছিলেন। মূলধারায় ছিল ছিল বাম, সোশ্যালিস্ট কংগ্রেসের মতো দল যারা হয় বাম নাহলে লেফট টু সেন্টার বা কংগ্রেসের মতো সেন্ট্রিস্ট দল। ওনাদের উত্থান এনডিএ তৈরির পর থেকে, প্রথমে ১৩ দিন, তারপর ১৩ মাস, তারপর দেশের প্রথম মিলিজুলি সরকার যারা পুরো পাঁচ বছর সরকারে ছিল। হ্যাঁ, একলা বিজেপি পারত না, তাই ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স তৈরি হয়েছিল। প্রথম অ্যালায়েন্স-এ ছিল বিজেপি, নীতীশ কুমার, ফার্নান্ডেজের সমতা পার্টি, অকালি দল আর শিবসেনা। তারপর তাতে অনেকে যোগ দেয়, সে আলোচনায় আসছি কিন্তু এসব শুরু হল কবে? ১৫ মে ১৯৯৮ বাজপেয়ী, আদবানি, প্রমোদ মহাজন, জর্জ ফার্নান্ডেজ, প্রকাশ সিং বাদল ইত্যাদিরা মিলে তৈরি করলেন ন্যাশন্যাল ডেমোক্রাটিক অ্যালায়েন্স, আজ থেকে ঠিক ২৫ বছর আগে। নিঃশব্দে চলে গেল ১৫ মে। বিজেপির কোনও অনুষ্ঠান দেখেছেন? ভৈরো সিং শেখাওয়তের ১০০তম বার্ষিকী, ওনার মৃত্যুদিনে রাজস্থানে বিরাট অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন অত্যন্ত নীতিনিষ্ঠ নিতিন গড়করি, বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া। মোদি–শাহ তো ছেড়েই দিন, গড়করি, বসুন্ধরা রাজের সেই অনুষ্ঠানেও একবারও উঠল না ন্যাশনাল ডেমোক্রাটিক অ্যালায়েন্স এর কথা। কেন? কারণ এনডিএ-র প্রয়োজনীয়তা বিজেপির কাছে ফুরিয়েছে। যে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, এমনকী সমরেশ মজুমদার মারা যাওয়ার পরেও টুইটারে শোক প্রকাশ করেছেন, সেই তাঁরাই অনুষ্ঠান করা তো দূরস্থান মাথাতেও আনেননি, টুইটারও করেননি ১৫ মের কথা। যেদিন আর পাঁচটা দলের হাত ধরেই বিজেপি সরকারে এসেছিল, সেইখান থেকেই বিজেপির আজকের বাড়বাড়ন্ত। আজ সেই ইতিহাস ছেঁড়া তমসুকের মতোই ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছে আরএসএস–বিজেপি। কিন্তু আমাদের মনে আছে, মনে আছে বলেই সেই ইতিহাসের দিকে চোখ ফেরাব। কারণ আমরা জানি দোজ হু ফরগেট দ্য হিস্ট্রি আর কনডেমড টু রিপিট ইট, ইতিহাস ভুলে গেলে সেই ইতিহাসের ভুলগুলো আবার সেই কারণেই ফিরে ফিরে আসে। 

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | মোদির আসন টলমল 

প্রথমবার বাজপেয়ীর ১৩ দিনের সরকার, ঠিক সরকারও বলা যাবে না কারণ সরকারের সামনে অগ্নিপরীক্ষা ছিল, সংসদের মধ্যে নিজেদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রামাণের বিষয় ছিল। সংসদে দাঁড়িয়ে অটলবিহারী বাজপেয়ীর সেই বিখ্যাত বক্তৃতা, সত্তা কা খেল তো চলেগা, সরকারে আয়েঙ্গি জায়েঙ্গি, পার্টিয়া বনেগি বিগড়েগি, মগর ইয়ে দেশ রহনা চাহিয়ে। এসব বলার পরে ভোটাভুটির আগেই বাজপেয়ী রাষ্ট্রপতির কাছে সটান চলে গেলেন, পদত্যাগ করলেন। এরপর সেই রাজা আসে আর যায়, দেবেগৌড়া, গুজরাল, চন্দ্রশেখর। বদলে যাচ্ছিল মন্ত্রিসভা। এই সময়েই বিজেপি বুঝেছিল কোয়ালিশন চাই। চাই বলেই ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স তৈরি হল ১৫ মে ১৯৯৮। বৃহত্তম জোট হিসেবে সরকার তৈরি করল বিজেপি। এই জোট আরও বিস্তৃত, এবং মাথায় রাখুন বিজেপি ৫৪২-এর ম্যাজিক ফিগার ২৭২ থেকেও অনেক দূরে ১৮২তে আটকে গিয়েছিল। এই ১৩ মাসের সরকারে এআইডিএমকে ছিল, তৃণমূল ছিল, সমতা পার্টি, অকালি দল, শিবসেনা, বিজু জনতা দল, কর্নাটকের রামকৃষ্ণ হেগড়ের লোকশক্তি দল, পিএমকে, হরিয়ানা বিকাশ পার্টি, সিকিম ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট ইত্যাদি মিলে ২০টা দলের জোট। সরকার ভাঙল কেন? কারণ অনাস্থা প্রস্তাবের সময়ে জয়ললিতার এআইডিএমকে সরে দাঁড়াল। সরে দাঁড়াতে এক বছরের মাথায় কেবল এক ভোটে পড়ে গেল অটলবিহারীর সরকার। সেই সময়ে কার্গিলের যুদ্ধ শুরু হচ্ছে। কাজেই রাষ্ট্রপতির অনুরোধে যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত মানে আরও তিনমাস টিকে থাকল সরকার। এবং অনেক মৃত্যু, ক্ষতি কিন্তু আপাত জয়ের পরে নির্বাচন। অতএব আবার ১৯৯৯তে নির্বাচন এবং এবার এনডিএ আরও বড়। এবার এআইডিএমকে সরে গিয়ে ডিএমকে, তেলুগু দেশম এনটিআর সরে গিয়ে আসল তেলুগু দেশম চন্দ্রবাবু নাইডুর দল ইত্যাদি মিলিয়ে ২৭ জনের এনডিএ। খুব মজার কথা হল এবারেও বিজেপি সেই ১৮২ হলে হবে কি সব মিলিয়ে এনডিএ ৩০২ এবং পরে আরেকজন নির্দল যোগ দেওয়ায় ৩০৩, ঠিক আজকের বিজেপির সংখ্যা। এবং এটাই দেশের প্রথম মিলিজুলি সরকার যারা পুরো পাঁচ বছর সরকার চালাতে পেরেছে। যে এক্সপেরিমেন্ট শুরু হয়েছিল ১৯৭৭-এ, সেই কাজ এতদিনে সফল হল, এবং প্রায় এই মডেলেই এরপর আরও দুটো মিলিজুলি সরকার চালিয়েছে ইউপিএ। 

উল্লেখযোগ্য হল, সে সরকারেও তৃণমূল ছিল, ছিল রামবিলাসের লোকজনশক্তি পার্টি। কিন্তু কয়েকটা দল বেরিয়ে গেলেও এনডিএ ভাঙেনি বরং ২০১৪ তে নির্বাচনের আগে তা আবার বিরাট হয়ে সামনে এল। এবার ২৪টা দলের জোট হল, প্রি পোল অ্যালায়েন্স, সমতা পার্টি তখন অ্যালায়েন্স-এ নেই। বেশিরভাগ নেতা জেডিইউ-তে, তাঁরাও জোটে আসেননি। কিন্তু ২৪ দলের জোটে বিজেপি এবার একাই সংখ্যাগরিষ্ট ২৮২, মানে অটলের সরকারের সময় ১৮২ থেকে ১০০টা আসন বেশি, লোকসভার ম্যাজিক ফিগার ২৭২-এর থেকে ১০ বেশি আর শরিকদের মিলিয়ে ৩৩৬। এবং এইখানে এসেই এনডিএ-র আর কোনও প্রয়োজন রইল না। তাদের চলে যাওয়া বা সরে যাওয়াতে এখন বিজেপির কিছু এসে যায় না, কাজেই এনডিএ, তার বৈঠক ইত্যাদি কমতে থাকল। এবং এরপর এনডিএ-র শরিকরাও একে একে জোট ছেড়ে বের হতে থাকলেন। ২৪টা দলের জোট ছিল ২০১৪-তে। বড় দল বলতে ছিল তেলুগু দেশম, শিবসেনা, অকালি দল, লোকজনশক্তি পার্টি, উপেন্দ্র কুশওয়াহার লোক সমতা পার্টি, অপনা দল ইত্যাদি। বাকি দলগুলোর নাম ক’জন শুনেছে? আপনি শুনেছেন ইন্ধিয়া জননায়গা কাচি বা কোনাগুনাডু মাক্কাল দেশিয়া কাচি বলে দলের নাম? এঁরাও আছেন এনডিএ-তে, এঁদের নির্বাচিত সাংসদ নেই, সাংসদ নেই অথচ ২০১৪ এনডিএতে ছিলেন এমন দলের সংখ্যা ১১টা, ১৪-এ ১১টা দল কেবল নামেই ছিল। এরপর ২০১৯, এবারে ২১টা দল, ১০টা দল কোনও আসন পায়নি। বিজেপি একাই ৩০৩ আর শিবসেনা, এআইডিএমকে, অকালি দল বা জনতা দল ইউনাইটেড ছাড়া কেউই ডাবল ডিজিটের বেশি সাংসদকে জিতিয়ে আনতে পারেনি। আরও মজার হল এর মধ্যে শিবসেনা, অকালি দল আর জেডিইউ আপাতত এনডিএ-র বাইরে। শিন্ডে গোষ্ঠীকে ধরলে আপাতত এনডিএ সাংসদের সংখ্যা ৩২৯, যেখানে কেবল বিজেপিরই ৩০৩। 

খুব পরিষ্কার যে এখন আরএসএস–বিজেপির আর কোনও প্রয়োজন নেই এই এনডিএ নামের জ্যাকেটটা, কাজেই তাঁরা ১৫ মে-তে কী হয়েছিল তা নিয়ে ভাবতে রাজিই নন। মোদিজি ভুলেই মেরে দিয়েছেন সেই ইতিহাস।  তাই এবারের ১৫ মে, ন্যাশন্যাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্সের ২৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান নেই, কেউ টুইটও করেননি, কেউ ভাষণও দেননি, নিঃশব্দে পার হয়ে গেল ১৫ মে। কাজের বেলায় কাজি, কাজ ফুরোলেই পাজি।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments