পীযূষ গঙ্গোপাধ্যায়ের স্মৃতিচারণে সুদীপ্তা চক্রবর্তী
আমি পীযূষ দা কে পীযূষ কাকা বলেই ডাকতাম ছোটবেলায়। কারণ বাবার মাধ্যমেই আমরা পীযূষ দাকে চিনেছি। বেহালা অঞ্চলের নাট্য কর্মী হিসেব স্বাভাবিক ভাবেই আমাদের পরিবারের সঙ্গে তাঁর পরিচিতি হয়েছিল। তাই আমাদের বেড়ে ওঠাটা ওর সামনেই হয়েছে। পরবর্তী সময়ে যখন আমিও কাজ শুরু করি তখন পীযূষ কাকা থেকে পীযূষ দা বলা শুরু করি। পীযূষদা ‘চেতনা’ নাট্যদলে অভিনয় করতো ‘জ্যেষ্ঠপুত্র ‘ ।পীযূষ দার সঙ্গে আমার বাবাও সেই নাটকে অভিনয় করতেন, সেই সময় থেকেই পীযূষ দাকে দেখা ও চেনা। এর পর প্রতি শনি, রবিবার হলেই আমাদের বাড়িতে তিনি আসতেন, চা খাওয়া, আড্ডা দেওয়া চলত। পীযূষদার বিয়ে , ছেলে হওয়া, ছেলের অন্নপ্রাশন , পৈতে সবকিছুতে গেছি। সম্পর্কটা পারিবারিক ছিল। পরবর্তী সময়ে আমিও কাজ করেছি অনেক কিছু বদলেছে, পীযূষ দাও টেলিভিশন, সিনেমাতে কাজ করছেন, তবে প্রেমটা থেকে গেছে।
ভীষণ সাদাসিধে একটা মানুষ ছিলেন, সারাজীবন হৃদয় দিয়ে ভাবতেন, কাজ করতেন। মাথা দিয়ে কিছুই কাজ করতেন না। এখন যখন ইন্ডাস্ট্রিটা দেখি তখন ভাবি পীযূষ দার খুব অসুবিধা হত এই সময়ে নিজেকে মানিয়ে নিতে । আমার মনে হয় তাঁর জীবনের যে দুর্ঘটনা ঘটেছিল, তার কারণও কোথাও তিনি হৃদয়ের কথা শুনে কাজ করেছিলেন বলে। পীযূষ দা একটু দুঃখ বিলাসী ছিলেন, আর সেই দুঃখ কে উপভোগ করতেন, গান গেয়ে মজা করে দুঃখ কেও যেন উপভোগ করতেন। আসলে দুঃখ থাকলে তো অভিনেতার ইমোশন গুলো ভালো প্রকাশ পায়।
আমি যখন পীযূষ দার দুর্ঘটনার খবর পাই , সেই সময় আমি মা হবো। আর কদিন মাত্র বাকি শাহিদার জন্ম হওয়ার, না পারছি যেতে না পারছি বাড়িতে থাকতে, অস্থির লাগছিল, অভিষেক বলেছিল একবার যাওয়ার কথা , তবে সেই অবস্থাতে আমি যেতেও পারছিলাম না। কান্নাকাটি করছি আর টিভির সামনে বসে আছি , অসহনীয় অবস্থায় কাটিয়েছি। কারণ পীযূষ দা তো আমার ছোটবেলা জুড়ে ছিল। আজ আবার সব মনে পড়ে গেল। সকালটা মন খারাপ হয়েগেল।
অনুলিখন – সুচরিতা দে