কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: স্থান আন্দামান জেল। সময় ব্রিটিশ শাসনকাল। কুখ্যাত সেই সেলুলার জেলে বন্দি ছিলেন বীর দামোদর সাভারকর। সেখানে তিনি বুলবুল পাখির ডানায় বসে জেলের গারদ পেরিয়ে খোলা আকাশে চলে আসতেন। ঘুরে ঘুরে দেখতেন তাঁর মাতৃভূমিকে। না, আরব্য রজনীর গপ্প নয়। আলাদিনের মতো জাদু ফরাসে সাভারকরের উড়ে বেড়ানোর আজগুবি কাহিনি লেখা রয়েছে কর্নাটকের অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে।
আর তাতেই মুণিঋষিদের মতো সাভারকরের ‘অলৌকিক ক্ষমতা’র বাস্তবতা নিয়ে দেশজুড়ে হাসাহাসি শুরু হয়ে গিয়েছে। ফাঁসি অথবা কালাপানি অর্থাৎ সেলুলার জেলের নাম শুনলে অনেক বড় বড় বিপ্লবীও ফাঁসি চেয়ে নিতেন। সেখানে গারদের ফাঁক গলে বুলবুলির পিঠে সওয়ার হয়ে সমুদ্র পেরিয়ে দেশভ্রমণে বেরনোর অলীক বর্ণনা পড়ে হাসি চাপতে পারছে না আজকালকার কচিকাঁচারা। স্বভাবতই সাভারকরকে নিয়ে এহেন বাড়াবাড়ি নিয়ে কাঠগড়ায় হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দল বিজেপি। কারণ সাভারকর হলেন তাদেরই পিতৃপুরুষ।
ইতিহাস বিকৃতি তো বটেই, শিশুমনে অবৈজ্ঞানিক ধ্যানধারণা রোপণ করারও অভিযোগ উঠেছে। বিজেপি শাসিত কর্ণাটক সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বিনায়ক দামোদর সাভারকরের জীবনের এই অংশটি ইচ্ছাকৃতভাবে ঢুকিয়েছে পাঠ্যপুস্তক পর্যালোচনা কমিটি। সেখানে লেখা রয়েছে, আন্দামান জেলে বন্দি অবস্থায় সাভারকর বুলবুল পাখির ডানায় বসে মাতৃভূমি দেখতে বেরতেন। বইতে আরও লেখা আছে, তিনি যে কুঠুরিতে বন্দি ছিলেন, সেখানে একটি চাবি ঢোকানোর ছিদ্র পর্যন্তও ছিল না। কিন্তু, বুলবুল পাখিটি প্রতিদিন তাঁর কুঠুরিতে আসত। তারপর তিনি তাঁর পিঠে চেপে দেশের অবস্থা দেখতে বেরতেন।
আরও পড়ুন: TMCP Foundation Day: আজ মমতা-অভিষেক কী বার্তা দেন, কৌতূহল তা নিয়ে
বিরোধীদের অভিযোগ, বিজেপি কর্ণাটকে হিন্দুত্বের গরিমা প্রচারের চেষ্টায় আজগুবি চিন্তাধারা শিশুমনে ঢোকাচ্ছে। রোহিত চক্রতীর্থের নেতৃত্বাধীন পাঠ্যপুস্তক পর্যালোচনা কমিটির সংশোধিত পাঠ্যসূচিতে এই অংশটি আলাদা করে সংযোজিত হয়েছে। প্রসঙ্গত, এর আগেও রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা কেশব বলিরাম হেগড়েকরের ভাষণ পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা নিয়েও বিতর্ক দেখা দিয়েছিল।
শুধু রাজনৈতিক বিতর্ক নয়, শিক্ষকরাও এনিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এক শিক্ষক বলেন, সাভারকরের এই অংশটি যদি রূপক বা কল্পনা হিসেবে লেখা হতো, তাতেও পড়াতে অসুবিধা হতো না। কিন্তু, এটা এমনভাবে বলা রয়েছে যেন, ঘটনাটি সত্যি। আর সেখানেই আমাদের ছাত্রদের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তারা এই ঘটনার সত্যতা কী জানতে চাইছে।
যদিও তাতেও লাজলজ্জা নেই কর্ণাটকের বিজেপি সরকারের। রাজ্যের স্কুলশিক্ষা ও সাক্ষরতা বিষয়ক মন্ত্রী বি সি নাগেশ সাফাই দিয়ে বলেন, সাভারকর হলেন এক মহান স্বাধীনতা সংগ্রামী। তাঁকে আরও মহিমান্বিত করার কিছুই নেই। লেখক যা লিখেছেন তা অক্ষরে অক্ষরে সত্যি। একথা শুনে অনেকেই বলছেন, সত্য সেলুকাস….!