জলপাইগুড়ি : জলপাইগুড়িতে উৎসবের শেষে ফের উৎসবের শুরু। দুর্গা পুজোর রেশ কাটতে না কাটতেই উত্তরবঙ্গের গ্রাম বাংলায় ফের বোধনের সুর। একদশীর সকাল থেকেই উত্তরবঙ্গের রাজবংশী অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে শুরু হয়েছে মা ভান্ডানির আরাধনা। জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ি, ধূপগুড়ি, মালবাজার, আলিপুরদুয়ার এবং পার্শ্ববর্তী কোচবিহার জেলার বেশ কিছু গ্রামে সমৃদ্ধির দেবী ভান্ডানির পুজোকে ঘিরে ফের উৎসবের আমেজ।
শুধুমাত্র রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষই নয়, বর্তমানে ভান্ডানি পুজোকে ঘিরে উৎসবে মেতে ওঠে গ্রাম বাংলার সর্বধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষ। দেবী দুর্গার অপর রূপ দেবী ভান্ডানিকে উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ বনাঞ্চলের বনবস্তিবাসীরা পুজো করে “বনদুর্গা রূপে”। উত্তরবঙ্গের বনাঞ্চলেও তাই দেবী দুর্গার বিসর্জনের পর এক উৎসবের শেষে আর এক উৎসব শুরু হয়ে যায়। ভান্ডানি পুজোকে ঘিরে রাজবংশী সমাজে একটি সুন্দর লোককথা রয়েছে। কথিত আছে, বিসর্জনের পর উমা উত্তরবঙ্গের বনাঞ্চল দিয়ে গ্রাম্যবধূ বেশে কৈলাসে ফেরার সময় পথ হারিয়ে ছিলেন। রাতের অন্ধকারে অরন্যের ভেতর থেকে পথভ্রষ্ট গ্রাম্যবধূর কান্নার শব্দ শুনে ছুটে আসেন রাজবংশী সমাজের কিছু লোক। তাঁকে নিয়ে যায় নিজেদের গ্রামে। একটি রাত দেবী সেই গ্রামে কাটিয়ে একাদশীর দিন ফিরে যান কৈলাসে। যাবার আগে নিজের প্রকৃত পরিচয় দেন গ্রামবাসীদের। তাঁদের আতিথ্যে তুষ্ট হয়ে দেবী গ্রাম বাংলার মানুষের শষ্যের ভান্ডার সর্বদা পূর্ণ থাকবার বর দিয়ে যান। সেই থেকেই দেবী ভান্ডানির পুজোর সূচনা।
আরও পড়ুন : হাতির অস্বাভাবিক মৃত্যু, চাঞ্চল্য জলপাইগুড়ির বৈকুন্ঠপুর জঙ্গলে
ময়নাগুড়ির বার্নিশ গ্রামপঞ্চায়েতের ভান্ডারি গ্রামে প্রতিবছরের মত এবছরো একাদশীর দিন মহাধূমধাম করে পূজিত হন মা ভান্ডানি। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত এমনকি পার্শ্ববর্তী নেপাল, ভূটান এবং বাংলাদেশ থেকেও ভক্তরা ভিড় জমায় এই পুজাতে। পুজো হয় তন্ত্র মতে। সমগ্র ডুয়ার্স তথা উত্তরবঙ্গ জুড়ে ভান্ডানি পুজো হলেও এই গ্রামের পুজো পাঁচশো বছরের পুরনো। পুজো উপলক্ষ্যে বসে বিরাট মেলা। পুজো উপলক্ষ্যে মানত করে ভক্তরা নিবেদন করে পায়রা, পাঁঠা। বছরের এই একটি দিন জনসমুদ্রের চেহারা নেয় ময়নাগুড়ির এই বার্নিশ গ্রাম। পুজো কমিটির সহ সভাপতি দীনেশ চন্দ্র রায় বলেন এখানে দেবী ব্যাঘ্রবাহিনী ও দ্বিভূজা। পুজা শেষে রাতেই হয় দেবীর ভাসান।