এবার ‘দশেরা’ নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড মহারাষ্ট্রে। মুম্বইয়ের শিবাজি পার্কের বিশাল দশেরা উদযাপন নিয়ে তির-ধনুকের লড়াই গড়াল হাইকোর্টে। আগামিকাল, শুক্রবার এ ব্যাপারে শুনানি হবে উচ্চ আদালতে। তার আগেই মহারাষ্ট্র বিধানসভায় উদ্ধব গোষ্ঠীর দলনেতা অজয় চৌধুরি হুমকির সুরে বলেন, ওখানেই দশেরা পালনে তাঁরা গেরিলা যুদ্ধের কায়দা নেবেন। দলের আর এক নেতা, মুখপাত্র তথা প্রাক্তন মেয়র কিশোরী পেড়নেকর বলেন, ৫৬ বছর ধরে এই মাঠে দশেরা পালন হয়ে আসছে। কোভিডের কারণে ২ বছর বন্ধ থাকার পর এবার আবার হবে। আর তাতেই বাগড়া দিচ্ছে বিজেপি। এটা ওদেরই কুচক্রান্ত।
ভেঙে পড়া শিবসেনার সুপ্রিমো উদ্ধব ঠাকরে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রতিবছরের মতো এবারেও দশেরার ‘রাবণপোড়া’ হবে শিবাজি পার্কে। অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিণ্ডে শিবিরও ওই পার্কেই দশেরা করতে মরিয়া। এই পরিস্থিতিতে দুই পক্ষই যদি শক্তি দেখাতে যায়, সেক্ষেত্রে রক্তারক্তি ঘটার আশঙ্কা প্রবল। তাই পুরসভার মতে, কোনও শিবসৈনিককেই দশেরা উৎসব করতে দেওয়া উচিত নয়। মুম্বইয়ের শিবাজি পার্কের দশেরা উৎসব দীর্ঘদিনের প্রাচীন প্রথা। বিশেষত উদ্ধবের বাবা শিবসেনার প্রাণপুরুষ বালাসাহেব ঠাকরের জীবদ্দশায় এই উৎসব দলের শক্তি প্রদর্শনের ময়দান ছিল। এই উৎসবের মঞ্চে বাল ঠাকরে আগুনঝরা বক্তৃতা দিতেন। যা শুনতে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হতো। সে কারণে উদ্ধব ঠাকরে নেতৃত্বাধীন শিবসেনা সেই ঐতিহ্য বজায় রাখতে চাইছে।
আরও পড়ুন: RSS Chief সংখ্যালঘুদের কাছে পৌঁছাতে সক্রিয় সঙ্ঘ প্রধান, গেলেন দিল্লির মসজিদে
কিন্তু, সমস্যা দেখা দিয়েছে একনাথ শিণ্ডে গোষ্ঠী, যারা এখন নিজেদের আসল শিবসেনা বলে দাবি করছে, তারাও শিবাজি পার্কে দশেরা পালনের পরিকল্পনা নিয়েছে। প্রশাসন পরিস্থিতি সামাল দিতে দুপক্ষই না করে দিয়েছে। তাই উদ্ধব-শিবির হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়।
বৃহন্মুম্বই পুরসভার মতে, কোনও একটা শিবিরকে দশেরার অনুমতি দিলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। সব দিক বিবেচনা করে উদ্ধব ও শিণ্ডে দুই শিবিরকেই দশেরা পালনের অনুমতি দেওয়া হয়নি। বৃহন্মুম্বই পুরসভায় এখন প্রশাসক নিযুক্ত রয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর শিবির থেকে এখনও এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া না দিলেও বিষয়টিকে সম্মানের লড়াই বলে ধরে নিয়েছেন বালাসাহেব-পুত্র। তিনি আগামী ৫ অক্টোবর, বিজয়া দশমীর দিন দশেরা পালন করতে গোঁ ধরে বসেছেন।
গদিচ্যুত মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব বলেছেন, ওই পার্কেই দশেরা হবে। কারণ, ওই পার্কের দশেরার সঙ্গে শিবসেনা প্রতিষ্ঠাতার স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। একইভাবে শিণ্ডে গোষ্ঠীও ওই মাঠকেই চাইছে। কারণ তাদের দাবি, বালাসাহেবের হিন্দুত্ব ও মারাঠি গর্বের মূল ধারা তারাই ধরে রেখেছে। তবে শিবাজি পার্ক ছাড়াও তারা বিকল্প হিসেবে বান্দ্রা কুরলা কমপ্লেক্সের একটি মাঠ বেছে রেখেছে। মহারাষ্ট্রে সরকার পতনের পর এটাই প্রথম দশেরা। আর তা নিয়েই বিবদমান দুই গোষ্ঠী হাইকোর্টের দ্বারস্থ। শুক্রবারই শুনানির পর ফয়সালাও হতে পারে, কার দখলে থাকবে শিবাজি পার্ক।