Placeholder canvas

Placeholder canvas
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ : এ বঙ্গে বিজেপি

চতুর্থ স্তম্ভ : এ বঙ্গে বিজেপি

Follow Us :

মাত্র ক’মাস আগে, যে দলের সদ্য আগত নেতা সেচ দফতর না বন দপ্তরের মন্ত্রিত্ব নেবেন, তার চিন্তায় কুল পেতেন না, যে দলে যোগদান বাংলায় নতুন শব্দের জন্ম দিল, ইয়োগদান মেলা। সেই দলে এখন মড়ক লেগেছে। মন্ত্রিত্বের স্বপ্ন দেখা আমোদগেঁড়েরা একে একে ঘর ওয়াপসিতে ব্যস্ত, কি কুক্ষণে দল ছেড়েছিলাম, এই বলতে বলতে, বাংলার এই দলে যোগ দিতে গোয়া কিংবা ত্রিপুরাও চলে যাচ্ছেন অনায়াসে, মমতা মা থেকে ডাইনি হয়ে এখন বঙ্গজননী, রাশিয়ান সার্কাসের ট্রাপিজের খেলাও ম্লান হয়ে যাচ্ছে, আসুন আজ সেই দল নিয়েই, খানিক খিল্লি করা যাক।

সিরিয়াস জিনিস নিয়ে আলোচনা হয়, আদুড় বাদুড় চালতা বাদুড়দের দিয়ে খিল্লিই করা যায়। এই দল, মানে বিজেপি যখন দেশের মাথায়, তখন স্বাভাবিকভাবেই রাজ্যের বিজেপির আলোচনাটা, রাজভবন থেকেই শুরু হবে, কারণ সেই রাজ্যপালই তো এ রাজ্যে বিজেপির একমাত্র আশা ভরসা, হিরো হীরালাল। নির্বাচনের আগে ওনার রকম সকম দেখে মনে হচ্ছিল, তাড়াহুড়োতে উনি হয়তো মুরলিধর লেনে গিয়েই শপথবাক্য পাঠ করিয়ে দেবেন, কেবল সমস্যা একটাই মনে হচ্ছিল, কাকে শপথ পাঠ করাবেন, গরুর দুধ থেকে সোনা বার করনেবালা না কি কাঁথির খোকাবাবু কে?

ওদিকে সদ্য রাজ্যসভা থেকে পদত্যাগ করে বিজেপিরও ইনটেলেকচুয়াল নেতা হাজির, এধারে আরেক রাজ্যপাল ওই শপথ পাঠ করার ইচ্ছে নিয়েই কলকাতায় হাজির। ডেপুটি, মানে উপমুখ্যমন্ত্রীত্বের জন্যও কী বড় লম্বা লাইন, ওধারে এক্কেবারে রাজভবনে গিয়ে দেখা করে এসেছেন, সাতে পাঁচে না থাকা দাদা, তিনি তথ্য সংস্কৃতি চান, টালিগঞ্জের এক এক কো চুন চুন কর চুন চুন কর চিনে নেবেন বা চিনে পাঠাবেন, ওদিকে পরবর্তী মন্ত্রিসভা নয় তো যেন চলচিত্রের অনসম্বল কাস্টিং, নকড়া, ছকড়া, সিকি আধুলি, এক আনা, দু আনার অভিনেত্রী অভিনেতারাও ইয়োগদান মেলা আলো করে আসছেন, পাশে কৈলাশ বিজয় বর্গীয়, স্টিল ক্যামেরা, নিউজ চ্যনেলের ক্যামেরা অভিনেত্রীর দিকে লেন্সে ফোকাস করছেন, বিজয়বর্গীয় তখন ফোকাস ঠিক জায়গায় হচ্ছে কী না, তাই দেখছেন।

আরও পড়ুন : চতুর্থ স্তম্ভ : চোরের মায়ের বড় গলা

সে এক হুল্লোড় চলছে, ফোন করছি কারিয়াকর্তাকে, ফোনে ভেসে আসছে সুরেলা কন্ঠ, একটু ব্যস্ত, পরে ফোন করুন। কদিন পরে মন্ত্রিত্ব সামলাতে হবে, ব্যস্ততা তো স্বাভাবিক। আজ সাজানো বাগান শুকাইয়া গেছে, বাঁজা জমিন ঘাসফুলে ছয়লাপ, পদ্মফুলের গাছও শুকাইতেছে, আসুন তাই নিয়েই বার্তালাপ, সরি খানিক খিল্লি করা যাক।

চলুন রাজভবন, একদা লোহিয়াইট সমাজতন্ত্রী চন্দ্রশেখরের মন্ত্রী ধনখড় সাহেব এখন হিন্দুরাষ্ট্রের উদগাতাদের একমাত্র ভরসা, তিনিই এই মরা সময়ে দলের পতাকা একনিষ্ঠভাবে ধরে আছেন, পদ চলে গেলে কী করবেন, সে কথা নাইবা আলোচনা করলাম, আপাতত তিনি এ বঙ্গে বিজেপির মাথা। কিছুদিন চুপ করে থাকার পর, আবার দম দেওয়া পুতুলের মত খটাং খট, খটাং খট শব্দ করে কাগজের প্রথম পাতা দখলের জন্য হাজির, শেষ তাঁকে দেখা গিয়েছিল নির্বাচন পরবর্তি তৃণমূলি অত্যাচারের প্রতিবাদে পদযাত্রা করতে, এক সাংবিধানিক সংকট তৈরি করতে পারলেই রাষ্ট্রপতি শাসন, কানে বাজছে, …যা সিমরন, জিলে তেরা জিন্দেগি, আর সেই জিন্দেগি না মিলেগা দোবারা, অতএব তিনি পাড়ায় পাড়ায়, এই দেখুন এই দেখুন, রাজ্যের আইন শৃংঙ্খলা ভেসে যায় ভেসে যায়, স্যর, ৩৬৫ চাই, রাষ্ট্রপতি শাসন চাই, বাংলার মানুষজনের রায়ের ওপর তেনার ইচ্ছে ঘুড়ি ওড়ানোর সে কি প্রবল চেষ্টা। কিছুদিন পরেই বোঝা গেল, সে গুড়ে বালি, তেমন কিছু করার কথা মোদি শাহ ভাবছেন না, তাঁরা তো ধনখড় বা কাঁথির খোকাবাবুদের কাছ থেকে রাজনীতি শেখেননি, তাঁরা ধান আর চালের হিসেব জানেন, চুপ করে রইলেন, ধনখড় বাবু বুঝলেন, এ যাত্রায় হইল না। মনের আকুল ইচ্ছার ওপর একমণি পাথর চাপিয়ে কদিন আত্মীয় স্বজন নিয়ে ব্যস্ত থাকলেন, পাবলিক মানিতে নির্বিঘ্ন আয়েস আরাম।

চুলকানি, দাদ হাজা ইত্যাদির মলম আছে বটে, তা সাময়িক, কিছুদিন পরে পরেই তা চাগিয়ে ওঠে। ধনখড় বাবুরও আবার চাগাইয়াছে। রাজ্যের আগত শিল্প সম্মেলনের আমন্ত্রণ দিলেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, এ একধরণের প্রোটোকল।  শিল্প সম্মেলনে শিল্পপতিরা আসেন, আলোচনা হয়, সব শিল্পই যে শিল্প সম্মেলন থেকে হুহু করে বন্যার বেগে রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে তা তো নয়, কিছু কথার সূত্রপাত হয়, কিছু সুযোগ সুবিধের বিনিময়ে শিল্প স্থাপন হয়, এ আজ থেকে নয়, বহুদিন ধরেই চলছে, কেবল এ রাজ্যে নয়, প্রত্যেক রাজ্যে এমন শিল্প সম্মেলন হচ্ছে, আদতে দেশটা তো পয়সাওলা শিল্পপতিদেরই, তাঁদের ডেকে এনে শিল্প স্থাপনের জন্য নানান ছাড় আর সুবিধের কথা বলার জন্যই এমন ব্যবস্থা, শিল্প হলে কিছু লোকজনের চাকরি হবে, স্থানীয় বাজার কিছুটা চাঙ্গা হবে, অর্থনীতির চুঁইয়ে পড়া এফেক্টে গরীব মানুষ জন কিছুটাতো পাবেন, তাই সব রাজ্যেই এমনটা হয়, সম্মেলনের উদ্বোধনের দিনে হাজির থাকেন রাজ্যের রাজ্যপাল, যে কোনও পুজোর আগে যেমন হাজির করা হয় নারায়ণ শিলাকে, তেমনই।

আরও পড়ুন : চতুর্থ স্তম্ভ : ডিমনিটাইজেশনের পাঁচ বছর

তার থেকে বেশি গুরুত্ব ওনার নেই, কিন্তু আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, উনি কেন জানিনা, ওনার ঘোর বিরোধীদের মাঝে মধ্যেই কোলে টেনে নেন, কাছে ডেকে নেন, এ এক অনন্য সাধারণ চিত্ত বৈকল্য, তেনার তা আছে। এই কদিন আগেই যিনি ডাইনি বলেছেন, তাঁকে ডেকে পাশে বসাতে তাঁর কোনও অসুবিধেই দেখি না, আমরা সাধারণ মানুষ যা ভাবতেও পারি না, উদাহরণ দিতে গেলে রাত ভোর হয়ে যাবে, প্রণব’দা, সুব্রত’দা, সোমেন’দা, থেকে ইদানিং কালে মুকুল রায়, সব্যসাচী দত্ত, রাজীব ব্যানার্জীর দিকে তাকান, আমি যা বলতে চাইছি তা জলের মত পরিস্কার হয়ে যাবে, এমন নয় যে দায়ে পড়ে তিনি এমনটা করেন, কোনও দায় ছাড়াই তিনি এমন কাজ করে থাকেন, তো সেই তিনি ধনখড় সাহেবকে নিছক আমন্ত্রণই করলেন না, তার সঙ্গেই প্রস্তাব দিলেন, যান না ধনখড় সাহেব, বিদেশে যান না, আমাদের খরচাতেই যান, কিছু বিনিয়োগ আনুন, রাজ্যের একটু হলেও উপকার হয়। সম্ভবত আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর মনের কথা ছিল, কেবল অন্ন ধ্বংস করে চলা, বকাটে ছেলেকে বলা, যা না বাপ কিছু কামিয়ে আন, পরিবারের একটু সুরাহা হোক, এমনটাই বলতে চেয়েছিলেন।

তো সেসব কথা শুনে তিনি বিগলিত, হেসেছেন, বলেছেন, নিশ্চয়ই, এ তো ভাল কথা। রাজ্যের কাজে লাগতে পারাটা তো আমার লক্ষ্য, সায় দিয়েছেন। সেসব ছবি ছাবা দেখানো হয়েছে, ছাপা হয়েছে। তারপরে চুলকানি চাগাড় দিয়েছে, তিনি বলেছেন, এসব শিল্প সম্মেলন কেবল ভড়কিবাজি, কিচ্ছু হচ্ছে না, এসব করে কী হয়? আমি জানতে চেয়েছি, আমাকে তো জানানোও হয় না, কেবল টাকা পয়সা নয় ছয় ইত্যাদি ইত্যাদি। ভাষা হুবহু এক না হলেও তিনি এটাই বলেছেন, বলতে চেয়েছেন। কয়েক ঘন্টার মধ্যে রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী, আপাতত মুখ্যমন্ত্রীর অর্থদপ্তরের মুখ্য পরামর্শদাতা অমিত মিত্র, সাত পুরনো বাসি কাগজপত্র এনে হাজির করেছেন, এই যে আপনি জানতে চেয়েছিলেন, তার উত্তরে আমি এই জবাব দিয়েছিলাম, শিল্প সম্মেলনে কী কী আলোচনা হয়েছে, কোন কোন শিল্প এসেছে, আসার কথা হয়েছে, কর্মসংস্থানের কতটা বৃদ্ধি হয়েছে, তার নথি হিসেব সহ বিরাট চিঠি তিনি সেই কবেই পাঠিয়েছিলেন, ধনখড় সাহেব কে। তো সেই অত্ত হিসেব, তথ্যবহুল চিঠি পড়ার সুযোগ হয়নি ধনখড় সাহেবের? নাকি বাহাত্তুরে রোগ ধরেছে, গ্রামবাংলায় একে বলে ভিমরতি, বয়স হলে হয়, স্মৃতি শক্তি লোপ পায়, সকালের কথা বিকেলে মনে থাকে না, গোপালকে শ্যামল, শ্যামলকে কাদের খান বলে ডাক দেয়, হয়, এসব বয়স হলে হয়, আর ধনখড় সাহেবের বয়স? ১৮ মে, ১৯৫১ তে জন্ম, বয়স ৭০। খুব বেশি নয় বটে, কিন্তু কমও নয়, ৭০ এ ভিমরতিতে ধরেছে, খুঁজলে পাওয়াই যাবে। তবে তাদের সমস্যা নেই, তাঁরা তো রাজ্যপাল নয়, রাজ্যপালের ভিমরতি রোগ হলে, সমস্যা বৈকি। দেখা যাক এ সমস্যা কিভাবে দূর হয়।

আরও পড়ুন : চতুর্থ স্তম্ভ : খাই খাই

এবার চলুন, রাজভবন থেকে বিজেপি দফতরে, হেস্টিংসে যাবেন ভাবছেন? ভবনের পাঁচটা তলা জুড়ে হাই ফাই পার্টি অফিস? চেম্বারের সঙ্গে অ্যান্টি চেম্বারওলা বাতানুকুল দপ্তর? সে আর নাই, রেজাল্ট বের হবার আগে অবদি সে এক পূণ্য তীর্থ ছিল, এখন কারবালার ময়দান, কেউ নাই। দল আবার পুনর্মুশিক ভব, মুরলীধর লেনে ফিরে গেছেন পরাজিত যোদ্ধারা, যাদের নাম ঝুলছিল সেই রাজ্যদপ্তরের ঘরে ঘরে, তাদের অনেকেই আবার নিজ আলয়ে ফিরেছেন, আর প্রত্যেকবার ফেরার পরে, দিলীপ ঘোষ বা ছাই ফেলতে ভাঙা কুলো শমীক ভট্টাচার্য বলছেন, এর কোনও প্রভাব দলের ওপরে পড়বে না, কি কান্ড বলুন তো। দলের সহ সভাপতি দল ছেড়ে দিলেন, দলে কোনও প্রভাব পড়বে না, দলের জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য দল ছেড়ে দিল, দলে নাকি তার কোনও প্রভাব পড়বে না, তাহলে ওই পদগুলো আছে কেন?

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর বিধানসভা এলাকা, ভবানীপুরে একজন ক্যান্ডিডেট দাঁড় করানো হল, প্রচারে এলেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, রাস্তায় রাস্তায় পদযাত্রা করলেন, সেই সাতে পাঁচে দাদা হারলেন, এখন মন দিয়েছেন চলচ্চিত্রে, যদিও সেখানেও ডাক পাচ্ছেন না, কার আর সেধে মরার ইচ্ছে হবে বলুন, সে যাই হোক সেই বিরাট নেতা চুপটি করে বসে আছেন, কদিন পরে জায়েন্ট লিপ, মানে লাফ দিয়ে কালিঘাটে যাবেন, শমীক ভট্টাচার্য বলবেন, এতে দলের কিছু এসে যাবে না, তাহলে ওই চার্টার্ড ফ্লাইটে করে এসব পয়মালকে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কেন? উত্তর নেই।

কেবল কর্পোরেশন আর মিউনিসিপালিটির ভোটটা হতে দিন, দেখবেন বিজেপি এ রাজ্যে বিরোধী দলের তকমাটাও হারাবে, তখনও শমীক ভট্টাচার্য আর দিলীপ ঘোষ ওই দলেই থাকবেন, আশা করা যায়, এবং বলবেন, এতে কিছুই যায় আসে না। কী হবে কলকাতা কর্পোরেশন নির্বাচনে? ১০ টা আসন জুটবে? মনে হয় না। হাওড়ার দিকে তাকান, বিজেপি জেলা সভাপতি সাফ বলেছেন, কদিন আগে যাকে প্রকাশ্যে নারদার টাকা নিতে দেখা গেছে, সেই শুভেন্দু অধিকারীর কাছ থেকে দলের আনুগত্যের সার্টিফিকেট নেব না, বলেছেন ২৮ বছর ধরে বিজেপি করছি, ৬ মাস আগে আসা কোনও নেতার কাছে এসব জ্ঞান শুনব না, বলার ক’ঘন্টা পরেই দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন, কিন্তু এটা তো রাজ্যের বেশিরভাগ আদি বিজেপির মনের কথা, সেই আদি বিজেপি যাদের সাকুল্যে ভোট ছিল ৯ থেকে ১২/১৪%, বিজেপি আবার সেখানেই ফিরে যাবে, এ বঙ্গে বিজেপি প্রথমে ক্ষমতায় আসার খোয়াব দেখছিল, সে স্বপ্ন – হনুমানের ল্যাজে আগুন ধরে গেছে, পরের স্বপ্ন হল, এ রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল হিসেবে থাকার, সেটাও হবে না, বিজেপি, এ রাজ্যে আবার এক অকিঞ্চিৎকর রাজনৈতিক শক্তি হয়ে উঠবে, খুব তাড়াতাড়ি, শমীক ভট্টাচার্য অবশ্য বলবেন, এতে কিছু যায় আসে না, উনি পড়াশুনো করা মানুষ, রাশিয়ার কমিউনিস্ট পার্টির উদাহরণ দেবেন, মুরলিধর লেনে ১০ ওয়াটের এল ই ডি বাল্ব জ্বলবে, তপন শিকদারের সময় ১০০ ওয়াটের হলুদ বাল্বের আলোর চেয়ে একটু বেশি উজ্জ্বল, এই যা তফাৎ।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments