Placeholder canvas

Placeholder canvas
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar: গুজরাত নির্বাচন- ১

Fourth Pillar: গুজরাত নির্বাচন- ১

Follow Us :

গুজরাতের নির্বাচন। রাহুল গান্ধী দু’দিন প্রচারে থেকেছেন, কেজরিওয়াল ওখানেই পড়ে আছেন, নরেন্দ্র মোদি এখনও যা জানা গিয়েছে তাতে ৪০টা র‍্যালি করবেন, ১২টা হয়ে গেছে। অমিত শাহের আপাতত স্থায়ী ঠিকানা আহমেদাবাদ, ডজনখানেক মন্ত্রী ডেইলি প্যাসেঞ্জার, দিল্লি আহমেদাবাদ প্লেনে সকালে চড়ছেন, পরের দিন ফিরছেন। বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চলে বাঙালি নেতা, তেলুগু ভাষার মানুষদের কাছে তেলুগু নেতা, মারাঠি মানুষদের জন্য মারাঠি নেতার ব্যবস্থা করেছে বিজেপি। মোটামুটি শহরের দিকে আপ-এর উপস্থিতি আছে, কিছুটা ট্রাইবাল অঞ্চলে, রাজ্য জুড়ে প্রচারের কার্পেট বম্বিং-এর দায়িত্বে অমিত শাহ অ্যান্ড কোম্পানি। কংগ্রেস স্তিমিত, দলের ক্যান্ডিডেটরা নিজেরাই জেতার জন্য যা করার করছে, গুজরাতে খাড়গে সাহেবের বক্তৃতা শোনার জন্য কেউ বসে নেই। গতবার ৭৭টা আসন পেয়েছিল কংগ্রেস, ১৮২তে ৭৭, বিজেপি ৯৯, মনে হয়েছিল ৫ বছর শান্তিতে থাকতে দেবে না বিজেপি সরকারকে। কোথায় কী? দল ছেড়ে চলে গিয়েছেন ৭ জন বিধায়ক। পাতিদার আন্দোলনের নেতা হার্দিক প্যাটেল বিজেপিতে গেছেন, অল্পেশ ঠাকোরও। জিগনেশ মেওয়ানি নিজের আসন বাঁচাতে পারলেই যথেষ্ট। এটাই ছবি। বলবেন তাহলে আর আলোচনা করে কী হবে? এ তো পরিষ্কার বোঝাই যাচ্ছে, বিজেপি আবার ফিরছে, বিরাটভাবেই ফিরছে। অমিত শাহ বলেছেন সব রেকর্ড ভেঙে যাবে, তো রেকর্ড ছিল মাধব সিং সোলাঙ্কির। ১৮২তে ১৪৯ জন কংগ্রেসের বিধায়ক ছিল, তার মানে অমিত শাহের মতে বিজেপি এবার কম করে ১৫০টা আসন পাবে। এইখানেই কহানি মে টুইস্ট হ্যায়, খেল আভি বাকি হ্যায়। কারণ এতদিন ধরে গুজরাতে দুটো দল ছিল, ছোটখাট কিছু সংগঠন মাথাচাড়া দিয়েছে। কংগ্রেস ভেঙে, বিজেপি ভেঙে বাগীরা সংগঠন তৈরি করেছে, কিছুদিন পরে কর্পুরের মতো স্রেফ উবে গেছে। এবং সেই জন্যই, ধরুন ২০১৪, গুজরাটে ২৬ জন এমপির ২৬ জনই বিজেপির, কিন্তু কংগ্রেসের ভোট ৪১ শতাংশ। ২০১৯-এ আবার ২৬-এ ২৬ বিজেপির, কংগ্রেসের ভোট ৪২ শতাংশ। বিজেপি ৪৭ শতাংশের বেশি। আর বিজেপির স্ট্রাইক রেট কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সবথেকে বেশি, বিজেপিও চায় বিরুদ্ধে কংগ্রেস থাকুক। মোদিজি হাসতে হাসতে বলবেন, ওহ তো পাপ্পু হ্যায়, মাঠের মানুষ হ্যা হ্যা করে হাসবে, হাসি থামলে মোদিজি বলবেন, তো আপ কিসে ভোট দেঙ্গে, পাপ্পু কো ইয়া মোদিকো? মাঠশুদ্ধু মানুষ চিৎকার করবে মোদি মোদি, মোদি। অমিত শাহ মনে করিয়ে দেবেন এই কংগ্রেস মানেই হল মুসলমানদের রাজত্ব, ঘৃণা উগরে দেবেন, বিষ উগরে দেবেন। বিজেপি চায় বিরোধিতায় কংগ্রেস থাকুক, কংগ্রেসকে পিটিয়ে ছাতু করে দেওয়ার বহু অস্ত্র তাদের আছে, যে অস্ত্র তাদের হাতে তুলে দিয়েছে তাদের গুরুরা, সাভারকার, গডসে, গোলওয়ালকর, হেডগেওয়ার, দেওরস, রজ্জু ভাই থেকে আজকের মোহন ভাগবত। বামপন্থীদের সামনে পেলেও বিজেপির সুবিধে, তাদের বিরুদ্ধেও বহুচর্চিত প্রাচীন অস্ত্র তাদের হাতে আছে। কিন্তু নতুন কোনও দল সামনে এলেই বিপদে পড়ে যায় বিজেপি, তাদের অসহায় দেখায়, তখন দল ভেঙে, হুমকি দিয়ে, ইডি, সিবিআই-এর ভয় দেখিয়ে নিজেদের অজান্তেই নিজেদের অক্ষমতা জাহির করে ফেলে। তাদের জীর্ণ দেখায় বাংলায়, দিল্লিতে, পাঞ্জাবে, ওড়িশায়, অন্ধ্রে, তেলঙ্গানায়। আর দক্ষিণে তারা ঐতিহাসিকভাবেই দুর্বল, সেও তাদের ওই হিন্দুত্বের চড়া সুরের জন্যই। তো এবারের গুজরাত নির্বাচনের সব হিসেব গুলিয়ে দিয়েছে ওই একা আপ, কেজরিওয়াল। মোদি–শাহ ধরেই নিয়েছিলেন মুখোমুখি কংগ্রেসকে ধরাশায়ী করে আবার চাণক্যের জামা গায়ে পরে অমিত শাহ মুচকি হাসবেন আর মোদিজির মাথায় ফুল ঝরে পড়বে। কিন্তু সে গুড়ে বালি, দুই পক্ষের খেলার মাঝে আপ এসে গিয়ে সব হিসেব গুলিয়ে যাচ্ছে। কেবল মোদি–শাহের নয়, নির্বাচন পণ্ডিতরাও দিশেহারা, আজ একরকম বলছেন, তো কাল আরেকরকম। কারণ কংগ্রেসের নেতৃত্ব থাকুক আর না থাকুক, গুজরাতে সরকার বিরোধিতা চরমে উঠেছে, অ্যান্টি ইনকমবান্সি এড়াতেই বিজয় রুপানিকে সরিয়ে, নীতিন প্যাটেলকে সরিয়ে, ৩৪ শতাংশ এএলএ-কে সরিয়ে ভূপেন্দ্র প্যাটেলকে আনতে হল, তাতেও সরকার বিরোধিতা কমেনি। গত সাত-আট মাস আহমেদাবাদে একের পর এক আন্দোলন হয়েছে। পঞ্চায়েতে ক্লারিক্যাল পোস্টে নিয়োগ নিয়ে আন্দোলন, নার্সিং স্টাফদের আন্দোলন, ছাত্র, আদিবাসীরা রাস্তায় নেমেছে। এই চরমে ওঠা অ্যান্টি ইনকমব্যান্সি কেবল মুখ্যমন্ত্রীকে সরিয়েই মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। সেইজন্যই গুজরাত নির্বাচন মুখোমুখি দুই দলের হলে নিশ্চিতভাবে সামান্য হলেও কংগ্রেস এগিয়ে থাকত। কিন্তু আপাতত হিসেব ঘেঁটে গেছে। আপ নেমেছে মাঠে। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে যে অস্ত্র আছে তা দিয়ে আপ-এর বিরুদ্ধে লড়া যাবে না, তা সবচেয়ে ভাল করে জানে বিজেপি, অতএব বেশ কিছুদিন আগে থেকেই তারা দিল্লিতে ইডি, ইনকাম ট্যাক্স ইত্যাদি দিয়ে একটা মাহোল তৈরি করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু দিল্লির দুর্নীতির আঁচ গুজরাতে এসে পৌঁছবে এটা বেশ শক্ত, তার ওপর গুজরাতে বিজেপির স্থানীয় নেতাদের দুর্নীতিও কিছু কম নয়। কাজেই অন্তত শহরে আপ-কে মোকাবিলা করাটা বেশ কঠিন, এবং ঠিক সেই জন্যই অমিত শাহ নিজে, এবং গোদি মিডিয়ার এক বিরাট অংশ হঠাৎ করে বলতে শুরু করেছে, আপ শুরু করেছিল ভালই, কিন্তু হঠাৎ তাদের জোশ খতম, তারা এখন দুটো কি তিনটে আসনেই লড়ছে। অমিত শাহ নিজেই গতকাল বলেছেন, ওসব আপ টাপ কেউ নেই, সামনে আছে কংগ্রেস, তাকে হারাতে হবে। এবং মনে করিয়ে দিয়েছেন ২০০২-এর কথা, ওদের এমন শিক্ষা দেওয়া হয়েছে যে কোট আনকোট ওরা ঘরে ঢুকে গেছে, অত্যাচার অনাচার করার কথা ভাবতেও পারছে না। ওদেরকে বলতে অমিত শাহ কাদেরকে বোঝাচ্ছেন তা পরিষ্কার। প্রধানমন্ত্রী মাঝে মধ্যেই যাকে বলেন রেওড়ি কালচার, বিরোধীরা নাকি কিছু টাকা, বিদ্যুৎ ফ্রি, যুবকদের টাকা দেওয়ার, বৃদ্ধদের পেনশন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচন জেতার চেষ্টা করে। যদিও ইউপিতে এইসব দিয়েই লাভ্যার্থী বর্গ তৈরি হয়েছিল, সেটাও মোদিজি নিজেই বলেছেন। গুজরাতেও সেরকম উপুড়হস্ত হয়েছে বিজেপি, বাংলায় সাইকেল দিচ্ছে, আমরা স্কুটি দেব, এখানে দুয়ারে রেশন নিয়ে টাচ মি নট খোকাবাবুর কী রাগ, গুজরাতে বিজেপি ক্ষমতায় ফিরলে দুয়ারে রেশন যাবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু ওই যে বললাম সব হিসেব গিয়েছে ঘেঁটে। এমনিতে প্রথমে মনে হয়েছিল আপ তো কংগ্রেসের ভোট কেটে বিজেপির রাস্তা সাফ করে দেবে, সেটা হতেই পারে, কিন্তু এখন একটা অন্য সম্ভাবনাও উঠে আসছে, আপ শহরে তাদের প্রচারে দাগ কেটেছে, আর সেখানে বিজেপির পাকাপোক্ত আসনগুলো নাকি নড়বড় করছে, আর কংগ্রেস নাকি তাদের গ্রামীণ আসন ধরে রাখবে। শহরের মানুষজন নাকি পরিবর্তনের কথা বলছে, গ্রামের মানুষের এখনও পছন্দ হাত চিহ্ন। কাজেই গুজরাট নির্বাচন এক দুর্বোধ্য ধাঁধা হয়ে উঠেছে। একদল বলছেন আপ আর কংগ্রেস অ্যান্টি ইনকমব্যান্সি ভোট ভাগাভাগি করে বিজেপিকে রেকর্ড আসন দিতে চলেছে, অন্যদিকে অনেকেই বলছেন দু’ধারি তলোয়ারের মুখে পড়েছে বিজেপি, শহরে আপ, গ্রামে কংগ্রেস। কী হবে কেউ জানে না, ৮ তারিখের আগে বলাও সম্ভব নয়। কিন্তু কী হলে কী হতে পারে তা তো বলাই যায়, বিজেপি তার ভোট রাখতে পারল, আপ ১৪-১৫-১৬ শতাংশ ভোট পেল, কংগ্রেস ৩০-৩২ শতাংশ ভোট পেল, তাহলে বিজেপি সত্যিই ১৫০ বা তার কাছাকাছি আসন পাবে। শহরে আর গ্রামের ভোট দু’রকমের হলে অনেকদিন পরে একটা হাং অ্যাসেম্বলি দেখবে গুজরাত। আপ ২-৩-৪ শতাংশ ভোট পেলে আবার একটা কংগ্রেস বিজেপি নেক টু নেক ফাইট হবে, সেক্ষেত্রে বিজেপি ১৫০ তো বহু দূর, ৮৫-৯০ পেয়ে কোনওক্রমে সরকারে আসতে পারে। কাজেই রেজাল্ট নিয়ে চিন্তা বিজেপির আছে। তবে একটা চিন্তা বিজেপিকে কুরে কুরে খাচ্ছে, আপ যদি ১৫-১৮-২০ শতাংশ ভোট পেয়ে যায়, তাহলে খেলা কিন্তু ২০২৭-এ হবে, ঠিক যেমনটা হয়েছে পাঞ্জাবে। ২০১৭তে পাঞ্জাবে আপ ১১৪টা আসনের মধ্যে মাত্র ২০টা আসন পেয়েছিল, কিন্তু ২৩.৭ শতাংশ ভোটও পেয়েছিল, ৫ বছর পরে এ বছর ফেব্রুয়ারিতে আপ ৪২ শতাংশ ভোট পেয়েছে, ৯২টা আসন পেয়ে ক্লিন সুইপ, আক্ষরিক অর্থেই ঝাড়ু চালিয়েছে। বিজেপির মাথায় সেটা আছে, তারা প্রতিদিন চেষ্টা করছে আপকে নির্বাচন থেকে সরানোর, মাঝে মধ্যেই খবর আসছে, আপ-এর প্রতিদ্বন্দী নির্বাচন থেকে সরে গেছেন, কেন? মাঠে যদি আপ নাই থাকে, তাহলে আপ-এর প্রার্থী খামোখা সরে যাবে কেন? বিজেপি একটা নির্বাচন লড়ে, সামনের আরও দুটো নির্বাচনকে মাথায় রাখে। তাদের মাথায় আছে ২০২৪, ২০২৭, কাজেই বিবৃতি যাই আসুক, বিজেপি আপ-এর বিরুদ্ধে জোর লড়াই দিচ্ছে, যদিও সেই লড়াই সেয়ানে সেয়ানে হচ্ছে, বিজেপি বলেছে মেরিটের ভিত্তিতে ছাত্রীদের স্কুটি দেওয়া হবে, কেজরিওয়াল জানিয়েছেন, প্রত্যেককেই দেওয়া হবে। নার্সিং স্টাফদের বকেয়া টাকা মেটানোর কথা বলেছে বিজেপি, আপ জানিয়েছে তাদের পে স্কেল বাড়ানো হবে, ইনসিওরেন্স-এর বকেয়া টাকাও দেওয়া হবে। অর্থাৎ দু’ দলই আপাতত কল্পতরু। এর থেকে বাইরে কংগ্রেস এক স্থানীয় লড়াই লড়ছে। তাদের গুজরাত থেকে খুব বেশি আশা নেই, তারা তাদের আসন ধরে রাখার চেষ্টা করছে, তাদের আপাতত ফোকাস কর্নাটক। কিন্তু গুজরাতের মানুষ কী ভাবছেন? আদিবাসীরা কী ভাবছেন? প্যাটেলদের ঝুকাও কোনদিকে? গুজরাতে নির্বাচনের ইস্যু কী? তাই নিয়ে আলোচনা কাল।      

 

RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments