কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: ১৩ হাজারের বেশি ভারতীয় রাষ্ট্রদ্রোহের আইনে আটকে পড়ে রয়েছেন। যে আইন বস্তাপচা ঔপনিবেশিক আইনের ধাঁচে ব্রিটিশ শাসনে তৈরি হয়েছিল। দেশ স্বাধীন হয়েছে। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তির উৎসব চলছে। রাষ্ট্রদোহের সেই পুরনো আইনটি কিন্তু আজও টিকে সংবিধানের পাতায়।
২০১০ সাল থেকে এ’পর্যন্ত রাষ্ট্রদ্রোহের আটশো মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে বহু মামলার নিষ্পত্তি হয়নি। বহু মামলায় অভিযুক্তদের জামিন বারবার নাকচ হয়ে গিয়েছে। রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে সব মিলিয়ে প্রায় ৩০ লক্ষ ঘণ্টা সংশোধনাগারে বা লক-আপে বন্দি অবস্থায় কাটিয়েছেন অভিযুক্তেরা। বহুবার আইনটির সাংবিধানিক গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
১৯৬০ সাল। ভারতীয় ফৌজদারি আইনের ১২৪-এর ক’ ধারাটি সাংবিধানিক ভাবে প্রয়োগ করার বিষয়টি বহাল রাখে সুপ্রিম কোর্ট। দেশের শীর্ষ আদালত রাষ্ট্রদ্রোহের ধারাটি প্রয়োগের ব্যাপারে স্পষ্ট রূপরেখা তৈরি করে দেয়। বলা হয়, হিংসা-সন্ত্রাসে কেউ মদত দিলে বা সরাসরি সক্রিয় ভাবে অংশ নিলে পুলিস এই ধারা অভিযুক্ত নাগরিকদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করতে পারবে। কিন্তু বাস্তবে রাষ্ট্রদ্রোহের আইনটি প্রয়োগ করতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্টের বেঁধে দেওয়া সীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে। কেন্দ্র ও বিভিন্ন রাজ্য সরকারের পুলিস ও প্রশাসন বিতর্কে জড়ায়।
দেখা যায়, সরকারের নিয়ম-নীতির সমালোচনা করলেই রাষ্ট্রদ্রোহের আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে। কোথাও কোনও অন্যায়ের প্রতিবাদে আন্দোলন দানা বাঁধলেই ব্যবহার করা রাষ্ট্রদ্রোহের আইন। কখনও ভিমা কোরেগাঁও। কখনও শাহিনবাগ। কখনও পিঞ্জরা তোড়। কখনও অসমের নাগরিকপঞ্জী বিরোধী আন্দোলন। একাধিকবার এই আইন প্রয়োগ করা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
Editors Guild Of India Welcomes Supreme Court's Historic Order on #SEDITION @IndEditorsGuild pic.twitter.com/jSEmvpgGPk
— Live Law (@LiveLawIndia) May 11, 2022
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি। জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলায় ৪০ জন আধাসামরিক বাহিনীর জওয়ান নিহত হন। ওই সময় থেকে ২০২১ সালের অগাস্ট। তালিবান যখন আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে। এই দুই বছরের মধ্যে অসমের ২৭ জন মুসলিম সংখ্যালঘুর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। যে অভিযুক্তেরা নিরক্ষর, পড়াশোনা জানেন না। ইংরিজি বলতে পারেন না। এমনকি সোশাল মিডিয়া ব্যবহারেও তেমন সড়গড় না। শুধুমাত্র বিশেষ হিন্দু সংগঠনের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিস তাঁদের গ্রেফতার করে এবং রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা শুরু হয়।
অসম, ২০১৬। বিজেপি অসমের ক্ষমতায় আসে। দেখা যায় রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা হঠাৎ করে সংখ্যায় বেড়ে গিয়েছে। অভিযুক্ত কারা? সরকারের নাগরিকপঞ্জী সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে যাঁরা সরাসরি সমালোচনা করেছেন। দেখা যায় তাঁদেরকেই বেছে বেছে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দিয়েছে পুলিস। অভিযুক্তরা দীর্ঘ আইনি জটিলতায় আটকে পড়েন। বহু ক্ষেত্রেই অভিযুক্তেরা পুলিসি হেফাজতে বন্দিদের মর্যাদা এবং অধিকার থেকে বঞ্চিত হন।
আরও পড়ুন: Abhishek Banerjee: অসমে বিজেপিকে হঠানোই মূল লক্ষ্য, গুয়াহাটিতে বললেন অভিষেক
কয়েক দশক ধরে উত্তরপ্রদেশে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে। যোগী প্রশাসনের সঙ্গে তুলনা করলে প্রায় ৯০ শতাংশ বেশি। পরিসংখ্যান খতিয়ে দেখা গিয়েছে বেশির ভাগ অভিযোগই করা হয়েছে কোনও উগ্র।হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের তরফে। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললেই রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করা হয়েছে। হিন্দুত্ববাদীরা এটা তাঁদের কর্তব্য মনে করেছেন। নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধেও রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার রাষ্ট্রদ্রোহ আইন পুনর্বিবেচনা করে দেখার কথা বলেছে। এখানে বলে রাখা ভাল ২০১৪ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ৪০৫ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করা হয়েছে।