৯০এর দশকের বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি।স্টুডিওপাড়ায় নায়ক-নায়িকার চরিত্রে তখন চুটিয়ে কাজ করছেন প্রসেনজিত্ আর ঋতুপর্ণা।তবে সেইসময় পার্শ্বচরিত্র,মানে নায়ক কিংবা নায়িকার ভাই,বন্ধু কিংবা ছবির দ্বিতীয় নায়কের ভূমিকায় টলিপাড়ায় নজর কাড়ছিলেন আর এক অভিনেতা,তিনি অভিষেক চট্টোপাধ্যায়।কেরিয়ারের শুরুতেই তিনি পেয়েছিলেন তরুণ মজুমদারের মতো বড় পরিচালককে।১৯৮৬সালে তাঁর পথভোলা ছবিতে অভিনয় করতেই টলিউডের স্টুডিওতে পা রাখেন অভিষেক চট্টোপাধ্যায়।ছবিতে সমাজবিরোধী গুপির চরিত্রে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিলেন তিনি।আর ফিরে দেখতে হয়নি অভিষেককে।ওরা চারজন,তুমি কত সুন্দর,সুরের আকাশে কিংবা তুফান,একের পর এক সুপারহিট ছবিতে কাজ করছিলেন অভিষেক।নব্বইয়ের দশকেও বহু ছবিতে অভিনয় করছিলেন তিনি।তখন একচেটিয়া কাজ করছেন স্বপন সাহা,প্রভাত রায়, হরনাথ চক্রবর্তী,অনুপ সেনগুপ্তর মতো পরিচালকরা।পার্শ্বচরিত্রের জন্য সকলেরই প্রিয় অভিনেতা ছিলেন অভিষেক চট্টোপাধ্যায়।
নায়কের ভূমিকাতেও কাজ করেছেন,তবে তা নেহাতই হাতে গোনা বরং ইন্দ্রজিত,বাবা কেন চাকর,সন্তান যখন শত্রু,মায়ার বাঁধন কিংবা লাঠি-র মতো ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ের জন্যই দর্শকদের মনে প্রাণে থেকে যাবেন অভিষেক চট্টোপাধ্যায়।মেইনস্ট্রিম কমার্শিয়াল ছবির পাশাপাশি কাজ করেছেন প্যারালাল বাংলা ছবিতেও।জাতীয় পুরস্কার জয়ী ছবি দহন কিংবা বাড়িওয়ালি-র কাস্টিং করার সময় পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষের মাথায় ছিলেন অভিষেক চট্টোপাধ্যায়।
ছোট চরিত্র হলেও দুটি ছবিতেই নজর কাড়লেন অভিনেতা।অভিনয় তুখোড় হলেও পাকে প্রকারে নায়ক হয়ে ওঠা হয়নি তাঁর।২০০০সালের পরেও বাংলা ছবির অন্যতম বলিষ্ঠ অভিনেতা হিসেবেই কাজ করছেন অভিষেক চট্টোপাধ্যায়।ডেবিউ ফিল্ম পথভোলা-র পর আবার তরুণ মজুমদারের আলো ছবিতে অভিনয় করলেন তিনি।পর পর মুক্তি পেল অগ্নি,রাজমহল,দাদার আদেশ,স্বপ্নের মতো বক্সঅফিসে সফল ছবি।তবে সব ছবিতেই কিন্তু নায়কের ভূমিকায় সেই প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং পার্শ্বচরিত্রে অভিষেক।
কেরিয়ারের শুরু থেকে ২০১০, বাংলা ছবিতে একচেটিয়া কাজ করে গেছেন প্রয়াত অভিষেক চট্টোপাধ্যায়।তবে ততদিনে শুরু হয়ে গিয়েছে ছোটপর্দায় ধারাবাহিকের রমরমা।তাই বড়পর্দায় কাজ কমিয়ে ছোটপর্দায় মনোনিবেশ করলেন অভিনেতা।অভিনয় করলেন টাপুর টুপুর,চোখের তারা তুই,ইচ্ছে নদী,কুসুম দোলা,ফাগুন বৌ,মোহর কিংবা খড়কুটো-র মতো জনপ্রিয় মেগা ধারাবাহিকে।ছোটপর্দার পাশাপাশি বেশ কিছু ছবিতেও অভিনয় করছিলেন তিনি।বাজি ছবিতে জিতের বাবার ভূমিকায় দেখা গিয়েছে অভিষেককেই।
সম্প্রতি খড়কুটো ধারাবাহিকে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করছিলেন অভিষেক চট্টোপাধ্যায়।নিয়ম করে শ্যুটিংয়েও যেতেন।এরই মধ্যে ঘটে গেল অঘটন।বুধবার একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন তিনি।সেখানেই অসুস্থতা অনুভব করেন এবং বাড়ি ফিরে যান।সেখানেই তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।রাতে অভিনেতার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে।রাত ১টা নাগাদ দক্ষিণ কলকাতার বাড়িতেই অভিষেক চট্টোপাধ্যায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
অসংখ্য সিনেমা,একের পর এক ধারাবাহিক,ছোটপর্দা-বড়পর্দা পর্দা জুড়ে উপস্থিতি স্বত্বেও সেই অর্থে কোনওদিন নায়ক হয়ে ওঠা হয়নি,এই আক্ষেপ শেষদিন পর্যন্ত করতেন অভিষেক চট্টোপাধ্যায়।তবে দুরন্ত অভিনয় প্রতিভার জন্যেই যে দর্শকমনে অনেকদিন আগেই তিনি নায়ক হয়ে গিয়েছেন তা বোধহয় যাওয়ার আগে জানা হল না অভিনেতার।