কলকাতা: এক নজিরবিহীন নাগরিক মিছিলের সাক্ষী থাকল শনিবার আগরতলা (Agartala)। সেই মিছিলে কোনও রাজনৈতিক দলের পতাকা ছিল না। ছিল জাতীয় পতাকা। মিছিলের পুরোভাগে হাঁটতে দেখা গিয়েছে বাম জমানার মুখ্যমন্ত্রী (former Chief Minister) মানিক সরকার (Manik Sarkar), কংগ্রেস জমানার মুখ্যমন্ত্রী সমীর রঞ্জন বর্মনকে (Samir Ranjan Burman )। এককালের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রাক্তন মন্ত্রী পাশাপাশি হেঁটেছেন। মিছিলে ছিলেন বামফ্রন্টের (Left Front) অন্য শরিকদলের নেতারাও। হেঁটেছেন কংগ্রেসের অনেক নেতা, শহরের বিশিষ্টজনেরা।
দিন কয়েক আগেই বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের রাজ্য নেতারা যৌথ সাংবাদিক (joint press conference) বৈঠক করে ত্রিপুরা থেকে বিজেপিকে (BJP) হঠানোর ডাক দেন। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক জীতেন্দ্র চৌধুরী এবং রাজ্য কংগ্রেসের নেতা সুদীপ বর্মন পাশাপাশি বসে বলেছেন, রাজ্যে সংবিধান এবং গণতন্ত্রকে বাঁচানোর জন্যই ধর্মনিরপেক্ষ এবং গণতান্ত্রিক শক্তিগুলি আজ এক জায়গায় আসতে বাধ্য হয়েছে। বরং বলা ভালো, পরিস্থিতি সকলকে বাধ্য করেছে এই জায়গায় আসতে।
আরও পড়ুন: Pre-poll fighting in Tripura : জিরানিয়ায় হামলা, ত্রিপুরায় ৩ পুলিশ অফিসারকে সরিয়ে দিল নির্বাচন কমিশন
ত্রিপুরার ভোটে এই প্রথম বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের আসন সমঝোতা হতে চলেছে, যা কিছুদিন আগেও ভাবা যেত না। মানিক সরকার এবং সমীর বর্মন নাগরিক মিছিলে পাশাপাসি হাঁটবেন, আগরতলার মানুষ তা-ই বা কবে ভাবতে পেরেছিল। কিন্তু বিজেপিকে রুখতে সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করে তুলেছেন বাম-কংগ্রেস নেতারা। বাম-কংগ্রেসের এই আসন সমঝোতার প্রক্রিয়ায় তিপ্রা মথাকেও শামিল করার চেষ্টা চলছে। বাম এবং কংগ্রেস নেতারা দাবি করেছেন, আসন সমঝোতার বিষয়টি অনেকটাই এগিয়েছে।
ওই সাংবাদিক বৈঠক থেকেই ঘোষণা করা হয়েছেল, বিজেপির অপশাসন অবসানের দাবিতে শনিবার আগরতলায় পতাকাবিহীন নাগরিক মিছিল করা হবে। আমার ভোট, আমার অধিকার, এই দাবিকে সামনে রেখে এদিন মিছিল হল। মিছিলের আরও দাবি ছিল, সন্ত্রাসমুক্ত পরিবেশে ভোট করতে হবে। পূর্বসিদ্ধান্ত অনুযায়ী মিছিলে ছিল শুধুই জাতীয় পতাকা, কেউ রাজনৈতিক দলের পতাকা আনেননি। ভিড়ও ছিল চোখে পড়ার মতো। মহিলাদের উপস্থিতিও ছিল নজরকাড়া।
আরও পড়ুন: Tripura Assembly Election 2023: ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচন ও কিছু ফ্যাক্টর
এই মিছিলের ২৪ ঘণ্টা আগেই শুক্রবার ঋষ্যমুখ বিধানসভা কেন্দ্রের মতাইয়ে এক বিশাল জনসভায় সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মানিক সরকার বলেন, বিজেপির পরাজয়ের ঢাক বেজে গিয়েছে। ত্রিপুরার স্বার্থে এবং মানুষের কল্যাণে বাম, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির জয়কে এবার নিশ্চিত করতে হবে।
এই সেই মতাই। ১৯৬৬ সালে ফরেস্ট জুলুমের বিরুদ্ধে এখানে লড়াই হয়েছিল। তাতে শহীদ হন মা মোহিনী। সেই মতাইকেই দীর্ঘ ৫৮ মাস অবরুদ্ধ করে রেখেছিল শাসক বিজেপি। এমনটাই অভিযোগ সিপিএমের। সেখানে বামেদের একেবারে কোণঠাসা করে রাখা হয়েছিল। অভিযোগ, শুক্রবারও বিজেপি হুমকি দিয়েছিল মানুষকে, যাতে সিপিএমের এই সভায় কেউ না আসে। তবু হুমকি অগ্রাহ্য করে লাল পতাকা হাতে দলে দলে মানুষ আসে সভায়।