হাওড়া: পড়ুয়াদের মধ্যে ইতিহাস সচেতনতা বাড়াতে এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণের প্রাথমিক পাঠ দিতে উদ্যোগী হয়েছিল ফেসবুক গ্রুপ ‘হাওড়ার ইতিবৃত্ত’। শনিবার হাওড়ার (Howrah) ব্যাঁটরা পাবলিক লাইব্রেরি শিক্ষা নিকেতন ফর বয়েজ স্কুলে প্রাচীন মুদ্রা এবং ব্যাঙ্কনোটের এক অসাধারণ প্রদর্শনী ও ওয়ার্কশপ করেছে তারা। ইতিহাস পাঠের পাশাপাশি সেই সময়ের নিদর্শন ছাত্রছাত্রীদের চাক্ষুষ করানোর উদ্দেশ্যে এই কাজে হাওড়ার ইতিবৃত্তকে অনুরোধ করেন স্কুলের প্রধানশিক্ষক দেবকুমার দাস।
তিনি বলেন, “আমাদের স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র অক্ষয় সেন এই স্কুলে রাজ্যস্তরের ক্যারাটে প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিলেন। সেই অনুষ্ঠানে অন্যতম অতিথি তথা মুদ্রাসংগ্রাহক সুমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়কে অনুরোধ করি আমাদের স্কুলে মুদ্রার প্রদর্শনী করতে। আমাদের অনুরোধে তিনি সাড়া দিয়েছেন। অক্ষয় সেনও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁদের উদ্যোগেই আমাদের স্কুলে এই প্রদর্শনী করা সম্ভব হয়েছে।”
প্রধানশিক্ষক আরও বলেন, “ইতিহাসে মৌর্য, কুষাণ, মুঘলদের কথা আমরা পড়েছি, পড়াই। সিলেবাসে এসব থাকলেও ছাত্ররা তা দেখার সুযোগ পায় না। পড়ার পাশাপাশি সেইসব নিদর্শন দেখতে পেলে তাদের জানা আরও নিখুঁত হয়, আগ্রহ বাড়ে। সেই সময়কার শিল্পও চাক্ষুষ করতে পেরেছে তারা। ফলে শিখতেও সুবিধা হবে। এই প্রদর্শনী আমাদের স্কুলে হলেও আমরা বিভিন্ন স্কুলকে আমন্ত্রণ করেছি। সাধারণ দর্শকদেরও বাধা দেওয়া হয়নি। শনিবার ২০ জুলাই সকাল ১১টা থেকে ২টো পর্যন্ত প্রদর্শনী চলেছে। আশপাশের দশটি স্কুল এতে যোগ দিয়েছে।”
আরও পড়ুন: চিকিৎসার গাফিলতিতে রোগী মৃত্যুর অভিযোগ, হাসপাতাল চত্বরে বিক্ষোভ
প্রদর্শনীতে বিভিন্ন দেশের ব্যাঙ্কনোট দেখান অনিন্দ্য কর। তিনি রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ঘুরে স্কুলে স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের আগ্রহ তৈরি হতে পারে এমন থিমের ব্যাঙ্কনোটের প্রদর্শনী করেন। তিনি বলেন, “সংরক্ষণের গুরুত্ব ছাত্রছাত্রীদের বোঝানো দরকার। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে প্রদর্শনী করেছি। বিশ্বের সব দেশের তো বটেই, সবচেয়ে বড় ও ছোট ব্যাঙ্কনোটও আমার সংগ্রহে রয়েছে। এবারে আমি নোবেলজয়ীদের স্মারক নোট ও বিশ্ব ঐতিহ্যের স্মারক সম্বলিত স্মারক নোট দেখিয়েছি। ছাত্রছাত্রীরা অনেক প্রশ্ন করেছে, এটাই সবচেয়ে বড় পাওনা।”
রাজা পোদ্দার দেখান আলেকজান্ডার (Alexander the Great) ও তাঁর বাবা দ্বিতীয় ফিলিপের মুদ্রা। তাঁর সংগ্রহে বিভিন্ন আকারের রঙিন মুদ্রা রয়েছে। তিনি সেসবও দেখান। ইন্দ্রনাথ বাড়ুই দেখান দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়ে জাপান অধিকৃত কলোনির ব্যাঙ্কনোট। বিশ্বজিৎ নাগ দেখান ভারতের স্মারক মুদ্রা, ১০০০ টাকার কয়েন দেখে ছাত্রছাত্রীরা অবাক হয়ে যায়। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতক থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ভারতের প্রতিটি ঐতিহাসিক যুগের মুদ্রা দেখান এবং মুদ্রার বিবর্তনের ইতিহাস নিয়ে বলেন সুমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়। কীভাবে মুদ্রা রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয় তাও হাতে-কলমে দেযখান। অনিন্দ্য কর বলেন ভারতে কাগুজে নোটের ইতিহাস, বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে।
হাওড়ার ইতিবৃত্ত-এর সুমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মাত্র ২০টি মুদ্রায় আড়াই হাজার বছরের ভারতীয় মুদ্রার ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। পাঞ্চমার্ক বা অঙ্কচিহ্নযুক্ত মুদ্রা থেকে এখনও পর্যন্ত যে বিবর্তন হয়েছে ভারতীয় মুদ্রায়, তা দেখানো হয়েছে। সঙ্গে ব্রিটিশ ছাড়া ভারতে আর যেসব উপনিবেশ ছিল, অর্থাৎ ভারতে পর্তুগিজ, ডাচ, ড্যানিশ ও ফরাসি শাসকদের মুদ্রাও ছাত্রছাত্রীরা দেখেছে। এখানে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা যোগ দিয়েছিল। আমরা কয়েকটি স্কুল-কলেজ থেকে আমন্ত্রণ পেয়েছি।”
তবে হাওড়ার ইতিবৃত্ত গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা সৌভিক মুখোপাধ্যায় জানিয়েছে, এই প্রদর্শনীতে কোনও রকম আর্থিক লেনদেনের ব্যাপার নেই। প্রত্যেক সংগ্রাহক নিজেদের ভালোবাসা বা প্যাশন থেকেই এই কাজ করেন। সংগ্রহ কীভাবে সংরক্ষণ করা যায় সেসব ব্যাপারেও তাঁরা পরামর্শ দেন।
দেখুন অন্য খবর: