তমলুক: অন্যের ২ কোটি টাকার সম্পত্তি প্লট আকারে বিক্রির অভিযোগে কাঁথির তৃণমূল কাউন্সিলারের (Trinamool Councilor of Kanthi) বিরুদ্ধে। ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই জেলাশাসককে তদন্তের নির্দেশ দিল নবান্ন। সূত্রের খবর, অন্যের সম্পত্তি প্লট আকারে বেচে দেওয়ার অভিযোগে তৃণমূল কাউন্সিলার ও তাঁর শাগরেদদের বিরুদ্ধে। কাঁথি পুরসভার ৭নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলার অতনু গিরি (Trinamool councilor Atanu Giri) ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে। প্রত্যেকের বিরুদ্ধে কাঁথি থানায় এফআইআর হয়েছে। মঙ্গলবার জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজী এনিয়ে তদন্ত করে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত জেলাশাসক(ভূমি) বৈভব চৌধুরীকে নির্দেশ দিয়েছেন।
শেরপুর মৌজায় প্রায় ৭৭শতক জমি দু’কোটি টাকার বেশি দামে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। ওই সম্পত্তির আসল মালিক কানাকড়ি পাননি। নিজের সম্পত্তি বেহাত হয়েই জমির মালিক আশিস মাইতি পুলিশ , রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও অভিযোগ করেছিলেন। তার ভিত্তিতে নবান্ন থেকে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের ডেপুটি সেক্রেটারি পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসককে তদন্ত করে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
২০১০সালে কাঁথি পুরসভার ৭নম্বর ওয়ার্ডে শেরপুর মৌজায় প্রায় ৭০লক্ষ টাকা দিয়ে ৭৭শতক জমি কিনেছিলেন আশিস মাইতি। আশিসবাবুর বাড়ি দেশপ্রাণ ব্লকের আঁউরাই গ্রাম পঞ্চায়েতের নামালডিহা গ্রামে। তিনি চিংড়ি মাছের ব্যবসা, মাছের খাবার এবং বরফ কলের মালিক। ৮৫জনের বেশি কর্মচারী তাঁর সংস্থায় কাজ করতেন। ওই জমি নেওয়ার পর কনভার্সান করার সময় আশিসবাবু জানতে পারেন, বহুমূল্য ওই জমিতে যাতায়াতের প্রবেশ পথ নেই। এজন্য কনভার্সান আটকে যায়। পারিপারিক আর্থিক সংকটের জেরে ওই জায়গায় বিক্রি করার পরিকল্পনা করেন। স্থানীয় কাউন্সিলার সহযোগিতা করার নাম করে তাঁর সামনে উপস্থিত হন। ওই বহুমূল্য জমিতে যাতায়াতের এরপরই ওই জায়গা বিক্রি করে নেওয়ার টোপ দিয়ে আশিসবাবুকে তাঁরই এক শাগরেদের কাছ থেকে ২৫লক্ষ টাকা ঋণ নিতে বাধ্য করেন।
আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত অফিসের মধ্যে সচিবকে মারধর! ভাইরাল ভিডিও ঘিরে বিতর্ক
২০২০সালে বহুমূল্য ওই জমি বিক্রি করার জন্য আশিসবাবু কাউন্সিলার ঘনিষ্ঠ কাবুল বেরাকে পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি করেন। তাতে শর্ত ছিল, জমি বিক্রি করার পর আশিসবাবুকে টাকা দিতে হবে। তারপর অভিযুক্ত কাবুল তাঁর স্ত্রী এবং কাঁথি পুরসভার কর্মী দিলীপ কাণ্ডারকে ওই জমির পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি করে দেন। দিলীপবাবু তার ওই জমি দেখিয়ে কাঁথি সুপার মার্কেট বাজার সমিতি থেকে ২৫লক্ষ টাকা লোন নিয়ে নেন। গোটাটাই একটা র্যাকেট। পরবর্তীতে ওই র্যাকেট ৭৭শতক জমি বিক্রি করে দিয়েছে। আশিসবাবু কানাকড়িও পাননি। এরপরই তিনি ৭নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার অতনু গিরি এবং তাঁর সাঙ্গপাঙ্গদের বিরুদ্ধে কাঁথি থানায় এফআইআর করেন। পাশাপাশি এনিয়ে মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যপাল সহ প্রশাসনের নানাস্তরে অভিযোগ পাঠান।
এ নিয়ে আশিস মাইতি বলেন, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ব্যাঙ্কে ঋণ হয়ে যায়। ওই জমিটি বিক্রি করা জরুরি হয়ে পড়েছিল। অতনু গিরি ও তাঁর সঙ্গীসাথীরা জমি বিক্রি করে দেওয়ার টোপ দিয়ে নানাভাবে আমাকে ফাঁসিয়ে দেউলিয়া করে দিয়েছে। আমার জমি দু’কোটির টাকার বেশি মূল্যে প্লট করে বিক্রি করে দিয়েছে। আমি ইতিমধ্যে প্রত্যেকের বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর করেছি। ওরা নানা জায়গায় ম্যানেজ করার চেষ্টা করছে। প্রশাসনের উপর আস্থা আছে। আশাকরি, আমি সুবিচার পাব। অভিযুক্ত কাউন্সিলার অতনু গিরি বলেন, ঘটনাটি আমাদের ওয়ার্ডের। সেই সুবাদে আমি সালিশিতে ছিলাম। কিন্তু, এখানে আমার সরাসরি কোনও যোগ নেই। আশিস মাইতি আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তুলছেন সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজী বলেন, অত্যন্ত গুরুতর অভিযোগ। অতিরিক্ত জেলাশাসককে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
অন্য খবর দেখুন