চন্দ্রকোনা: বর্ষার মরসুমে গ্রামাঞ্চলের বেহাল রাস্তাগুলির করুণ ছবি আকছার দেখা যায়, আবার সেই রাস্তা মেরামতের দাবিতে কখনও ধানের চারা পুঁতে তো আবার কোথাও রাস্তা অবরোধ করে প্রতিবাদে সরব হতে দেখা যায় এলাকার মানুষদের। এবার গ্রামের দীর্ঘদিনের বেহাল রাস্তা নিয়ে নিজের বুথেই বিড়ম্বনায় তৃণমুলের বুথ সভাপতি। বর্ষার মরসুমে গ্রামের গুরুত্বপুর্ণ কাঁচা রাস্তাটি কর্দমাক্ত হয়ে যাওয়ায় তার উপর দিয়ে যাতায়াতে চরম ভোগান্তির শিকার একাধিক গ্রামের মানুষের, একপ্রকার ঝুঁকি নিয়েই যাতায়াত করতে হয়।
বেহাল রাস্তায় যাতায়াতের সময় গ্রামের মানুষ সহ হাজারও পথচলতি মানুষের কটু কথা ও ব্যঙ্গবিদ্রুপের সম্মুখিন হতে হচ্ছে খোদ তৃণমুলের বুথ সভাপতিকে। কারণ ক্ষোভ উগরে দেওয়ার জন্য চোখের সামনে স্থানীয় মানুষ স্থানীয় বুথ সভাপতিকেই পায়। আর এতেই রীতিমতো বিড়ম্বনায় পড়তে হয় গ্রামের বুথ সভাপতিকে। অগত্যা পথচারীদের ক্ষোভ প্রশমনে কোদাল হাতে গ্রামের বেহাল রাস্তায় যাতায়াতের উপযোগী করতে দেখা গেল তৃণমূলের বুথ সভাপতিকেই।
কোদাল হাতে রাস্তার উপর থেকে কাদা সরাচ্ছেন বুথ সভাপতি এমনই এক ছবি প্রকাশ্য আসতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে। ঘটনাটি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা ২ নম্বর ব্লকের ভগবন্তপুর ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘোষকিরা গ্রামের। এই গ্রামের সাথে আশপাশের প্রায় ৮-১০টি গ্রামের সংযোগ এবং স্কুল-কলেজ থেকে বাজার-দোকান ও জরুরি প্রয়োজনে একমাত্র যোগাযোগ স্থাপন করে ঘোষকিরা গ্রামের প্রায় ৪ কিমি কাঁচা রাস্তাটি। আর সেই গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ রাস্তাটিই বছরের পর বছর বেহাল অবস্থায় রয়েছে। সেই ১৫ বছর আগে একবার বোল্ডার মোরাম দিয়ে রাস্তাটির মেরামতের কাজ হয়েছিল তারপর থেকে আর কেউ নজর দেয়নি।
আরও পড়ুন: রুদ্রমূর্তি গঙ্গার, কোনওমতে বেঁচে ফিরলেন যাত্রীরা
বর্ষার মরসুমে একটু বৃষ্টি হলেই এই রাস্তা দিয়ে একপ্রকার যাতায়াত বন্ধই হয়ে যায়। ঝুঁকি নিয়ে করতে হয় যাতায়াত এমনটাই জানিয়েছে গ্রামবাসীরা। একদিকে ঘোষকিরা থেকে খুড়শি, কোল্লা, পলাশচাবড়ী হয়ে চন্দ্রকোনা শহরের সংযোগ অপরদিকে আবার ঘোষকিরা থেকে শিলাবতী নদী পেরিয়ে কেশেডাল, ভগবন্তপুর হয়ে চন্দ্রকোনা শহরের সংযোগ রয়েছে। আর এই দুই দিকের যোগাযোগ স্থাপনে ঘোষকিরার এই বেহাল গ্রামীণ রাস্তা গুরুত্বপূর্ণ, নিত্যদিন হাজারও মানুষের যাতায়াত তার উপর কৃষি প্রধান এলাকা হওয়ায় কৃষি কাজের জন্যও এই রাস্তা ব্যবহার করতে হয় স্থানীয় কৃষকদের। গ্রামের মধ্যে রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। গ্রামের স্কুলে আসতে কাদা মাড়িয়ে একপ্রকার ঝুঁকি নিয়ে আসতে হয় স্কুল পড়ুয়া থেকে শিক্ষকদের। সমস্যার সমাধানে ঘোষকিরা বুথের তৃণমূলের বুথ সভাপতি তথা ওই গ্রামেরই বাসিন্দা আশিষ ঘোষকে দেখা গেল গ্রামের বেহাল রাস্তা মেরামতের জন্য কোদাল হাতে রাস্তার কাদা মাটি সরাতে।
বুথ সভাপতি স্বীকার করেছেন, দীর্ঘদিন ধরে এই রাস্তা বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। গ্রামবাসীরা একাধিকবার প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের তরফে একাধিকবার দলগতভাবেও জানানো হয়েছে। এসব সত্বেও রাস্তার কাজ না হওয়ায় পথচলতি মানুষ থেকে গ্রামের মানুষ ক্ষুব্ধ আর তাতে তাঁকে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এমনকি মানুষের কাছে নানান কটুবাক্য শুনতেও হয় বলে স্বীকার করেছেন তিনি। আর তাই বাধ্য হয়েই তিনি যতটুকু পারেন নিজে উদ্যোগ নিয়ে রাস্তায় যাতায়াতের উপযুক্ত করার চেষ্টা করছেন। তবে আশাবাদী তাঁর সরকার এই রাস্তার বিষয়টি ভেবে দেখবেন বলেই মত তৃণমূলের বুথ সভাপতির।
তবে গ্রামের বেহাল রাস্তা নিয়ে ঘোষকিরা গ্রামের বাসিন্দারা চরম ক্ষুব্ধ। বাসিন্দারা জানিয়েছে, সম্প্রতি বিডিও, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সহ গ্রাম পঞ্চায়েতের আধিকারিকরা এই রাস্তা পর্যবেক্ষণ করে গেছে। কিন্তু রাস্তা সংস্কার কবে হবে তার কোনও দিশা এখনও দেখাতে পারেনি।এবিষয়ে চন্দ্রকোনা ২ নম্বর ব্লকের বিডিও উৎপল পাইক জানিয়েছেন, রাস্তাটি খারাপ অবস্থায় রয়েছে আমরাও দেখে এসেছি। ব্লক প্রশাসনের তরফে জেলা পরিষদে নতুন রাস্তার জন্য প্রপোজাল পাঠানো হয়েছে। আর্থিক অনুমোদন পেলেই আমরা টেন্ডার ডেকে রাস্তার কাজ শুরু করে দেবো।
অন্যদিকে, তৃণমূলের বুথ সভাপতির কোদাল হাতে রাস্তা মেরামতকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি স্থানীয় বিজেপি। বিজেপির চন্দ্রকোনা-১ মন্ডলের সভাপতি সুকান্ত দোলুই বলেছেন, ভোটের সময় তো সাধারণ মানুষকে নতুন রাস্তা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট নিয়েছে। এখন সেই রাস্তা না করতে পেরে লোকদেখানো কোদাল হাতে বুথ সভাপতি রাস্তায় নেমেছে। এখন দেখার ঘোষকিরা গ্রামের বেহাল রাস্তার আদৌ হাল ফেরে কিনা।
আরও খবর দেখুন