বারুইপুর: বারুইপুরের রায়চৌধুরী বাড়ির দুর্গা পুজোর (Durga Puja at Roy Chowdhury’s house in Baruipur) বয়স ৩০০ বছর। জমিদারী না থাকলেও, কোন অংশে বনেদিয়ানাতে খামতি নেই দক্ষিণ ২৪ পরগণার বারুইপুরের রায়চৌধুরী বাড়ির দুর্গা পুজোয় (Bonedi Bari Durga Puja)। বারুইপুরের ম্যাজিস্ট্রেট থাকাকালীন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এ বাড়ির পুজো দেখতে এসেছিলেন বলে দাবি রায়চৌধুরীদের। বছরের পর বছর ধরে ঐতিহ্য রীতিনীতি মেনে পুজো হয় আজও। প্রথা মেনে দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের পর নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ান রায়চৌধুরীরা।
দক্ষিণ ২৪ পরগণার অন্যতম পুরনো বারুইপুরের রায়চৌধুরী বাড়ির দুর্গা পুজো। এক সময় জেলার বাবুদের বাড়ির পুজো বলে সকলে জানতো। ৩০০ বছরের বেশি সময় ধরে এই পুজো চলছে বারুইপুরে রায়চৌধুরী বাড়িতে। ব্রিটিশ শাসক লর্ড কর্ণওয়ালসিসের সময়ে এই এলাকায় জমিদারির পত্তন হয় রায়চৌধুরীদের। আর সেই থেকেই শুরু হওয়া দুর্গাপুজো নিজস্ব জৌলুস নিয়ে আজও অমলিন। সরকারী ভাবে নীলকণ্ঠ পাখি ধরা ও দুর্গা ঠাকুর বিসর্জনের পর তা উড়ানোর উপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও, এটাই প্রধান বিশেষত্ব এই বনেদি বাড়ির পুজোর। দশমীতে বিসর্জনের পর নিলকণ্ঠ পাখি ওড়ালে, সে গিয়ে কৈলাসে ভগবান শিবকে খবর দেবে মা দুর্গা মর্ত ছেড়ে কৈলাসের উদ্দ্যেশে রওনা দিয়েছেন। এই বিশ্বাস থেকে আজও বিসর্জনের পর বারুইপুরের আদি গঙ্গার সদাব্রত ঘাট থেকে নীলকণ্ঠ পাখি উড়িয়ে আসছেন। গতবছর পাখি পাওয়া যায়নি বলে ওড়ানো হয়নি। কিন্তু এবার পাখি পাওয়া গেলে সেই পুরানো রীতি মেনেই ওড়ানো হবে নীলকণ্ঠকে, দাবি রায়চৌধুরীদের।
রায়চৌধুরীর বাড়ির সদস্য অমিয়কৃষ্ণ রায়চৌধুরী বলেন, জমিদারি চলে গেলেও নিয়ম রীতি একই আছে। এই পুজোর অন্যতম বিশেষত্ব হল, মহালয়ার পরদিন অর্থাৎ প্রতিপদ থেকেই শুরু হয়ে যায় দেবীর আরাধনা। এখনও সপ্তমি ও অষ্টমীতে পাঁঠাবলি হয়। নবমীতে হয় আঁখ ও চাল কুমড়ো বলি। ১৯৫৪ সালে সরকার জমিদারী নিয়ে নিলেও এখনো এই দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার এই বারুইপুর এলাকায় জমিদার বাড়ির পুজো বলতে এই রায়চৌধুরী বাড়ির পুজোকেই জানেন সকলে। পুজোর কটাদিন সমস্ত আত্মীয় স্বজনরা আসেন এই জমিদার বাড়িতে। তাছাড়া জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখনো বহু মানুষ আসেন এই বাড়ির পুজো দেখতে।
দশমীতে পরিবারের মহিলারা সিঁদুর খেলেন। তা দেখতে ভিড় জমে। তারপর ৪০ বাহক কাঁধে করে প্রতিমা নিয়ে যান সদাব্রত ঘাটে। এলাকার মধ্যে এই রায়চৌধুরীদের বাড়ির ঠাকুর প্রথম বিসর্জন দেওয়া হলে, তারপর একের পর এক বাকী পুজো গুলির প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। রূপোর পাখা দিয়ে দুর্গাকে হাওয়া দিতে দিতে এবং রূপোর ঝাড়ু দিয়ে রাস্তা পরিস্কার করতে করতে বিসর্জন দিতে নিয়ে যাওয়া হয় এই বাড়ির দুর্গা প্রতিমাকে। আর কৈলাসে শিবের কাছে মায়ের আসার বার্তা দিতে নীলকন্ঠ পাখি ওড়ান বাড়ির সদস্যরা।বহুদিন ধরে এই রীতিই চলে আসছে।
অন্য খবর দেখুন