কলকাতা: পুরসভা এবং কর্পোরেশনগুলি টাকা খাওয়া ছাড়া কোনও কাজ করছে না বলে তীব্র ভর্তসনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। কারও নাম করে, আবার কারও নাম না করে মুখ্যমন্ত্রী দলের পুর প্রতিনিধিদের সতর্ক এবং হুঁশিয়ার করে দিলেন। ছাড় পেলেন না পুলিশ, আমলারা। মুখ্যমন্ত্রীর সাফ কথা, অনেক হয়েছে। আর নয়। এসব আমি বরদাস্ত করব না। মানুষ যদি পরিষেবাই না পায়, তাহলে আর পুরসভা রেখে লাভ কী। যে ভাষায় মুখ্যমন্ত্রী নবান্নে বসে নির্বাচিত পুর প্রতিনিধি এবং পুলিশ অফিসার, আমলাদের ধমকালেন, তা কার্যত নজিরিবিহীন।
লোকসভা ভোটে এবার শহরাঞ্চলে তৃণমূলের ফল খারাপ হয়েছে বিজেপির তুলনায়। দুবছর পর রাজ্য বিধানসভার ভোট। লোকসভা ভোটে তৃণমূলের ভোট একই থাকলেও বিজেপির ভোট খানিকটা বেড়েছে। বস্তুত, লোকসভা ভোট মিটে যাওয়ার পরই মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনে ঝাঁকুনি দিতে শুরু করেছেন। নবান্নে তিনি গত কদিনে বেশ কয়েকটি প্রশাসনিক বৈঠক করেছেন। সেগুলিতেও পুলিশ, আমলা, বিভাগীয় সচিবদের ছাড় দেননি। এদিন তাঁর বৈঠক ছিল পুরসভা এবং কর্পোরেশনগুলিকে নিয়ে। বিরোধীরা যে ভাষায় পুরসভাগুলির সমালোচনা করে থাকে, তার থেকেও কড়া ভাষায় মুখ্যমন্ত্রী সোমবার ধমক দিয়েছেন। বোঝা যাচ্ছিল না, মুখ্যমন্ত্রী বলছেন না কোনও বিরোধী নেতা বলছেন।
আরও পড়ুন: অবৈধ নির্মাণ ভাঙতে গিয়ে বাধার মুখে পুরনিগমের কর্মীরা
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পুরসভাগুলি যে যার মতো পারছে, সরকারি জমি বেচে দিচ্ছে। দমকলমন্ত্রী এবং বিধায়ক সুজিত বসুর নাম করে তিনি বলেন, সুজিত টাকা নিয়ে বিধাননগরে লোক বসাচ্ছে। তাঁর অভিযোগ, বিধাননগর কর্পোরেশনের কাউন্সিলররা কোনও কাজ করে না। তিনি বলেন, পুরসভাগুলি নিজেদের ইচ্ছেমতো লোক নিয়েছে। অনুমতি না নিয়ে ট্যাক্স বাড়িয়ে দিচ্ছে। কোনও পুরসভা কোনও কাজ করে না। রাস্তাঘাট পরিষ্কার হয় না, ড্রেন সাফাই হয় না, যে যার মতো বহুতল বাড়ির অনুমোদন দিয়ে টাকা কামিয়ে নিচ্ছে। এক শ্রেণির পুলিশ অফিসার, আমলাও টাকা খাচ্ছেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাস্তা দখল হয়ে যাচ্ছে। পুলিশ দেখেও দেখে না। হাত গুটিয়ে বসে থাকে। কোথাও এমএলএ, কোথাও কাউন্সিলর টাকা খাচ্ছেন। টাকার বিনিময়ে বাংলার সংস্কৃতি বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। এরপর তো শহরে বাংলায় কথা বলার মতো লোক থাকবে না। আপনারা চুরি করছেন। আর আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। যারা বাংলার সর্বনাশ করছে, তাদের আমি ছাড়ব না। রাস্তাঘাট, নিকাশি ব্যবস্থা, পানীয় জল সরববরাহ, মিউটেশন, বাড়ির নকশা অনুমোদন-সহ সব কিছু নিয়েই মুখ্যমন্ত্রী উষ্মা প্রকাশ করেন। তিনি ১৫ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে বলেছেন, আশা করি, এই সময়ের মধ্যে আমি কিছু ফল পাব। সরকারের অনুমতি না নিয়ে কোনও কাজ করা যাবে না বলে রীতিমতো হুঁশিয়ারি দেন মুখ্যমন্ত্রী।
দেখুন বিস্তারিত