বসিরহাট: সন্দেশখালি-কাণ্ডের (Sandeshkhali Incident) চার মাস পর বসিরহাটে পা রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। কিন্তু গেলেন না সন্দেশখালিতে। মঙ্গলবার সভার শুরুতেই সন্দেশখালির প্রসঙ্গ টেনে মমতা বলেন, এখানে যা ঘটেছে, যে ভাবে মা-বোনেদের অসম্মান করা হয়েছে তাতে আমি মর্মাহত। তাঁর হুঁশিয়ারি, মা-বোনেদের সঙ্গে কেউ যেন অসম্মানের খেলা না খেলে। ওই ঘটনা সামনে না এলে মানুষ বুঝতেই পারত না বিজেপি কী গভীর চক্রান্ত করেছিল। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ভোটের আগে বিজেপির প্ল্যান-এ ছিল সন্দেশখালি। ওদের সব পরিকল্পনা মা-বোনেরা বাতিল করে দিয়েছেন। এখনও প্ল্যান বি জারি রয়েছে। সেটা হল ধর্মস্থানে অশান্তি তৈরির চেষ্টা করা।
গত ৫ জানুয়ারি সন্দেশখালিতে তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের (Sheikh Shahjahan) বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়ে আক্রান্ত হন ইডির অফিসাররা। তারপর থেকে শাহজাহান পলাতক ছিলেন। তাঁর বাহিনীর বিরুদ্ধে জোর করে জমি দখল, মাছের ঘেরিতে নোনা জল ঢুকিয়ে দেওয়া, মহিলাদের উপর নির্যাতন করার বহু অভিযোগ ওঠে। শাহজাহান ঘনিষ্ঠ শিবু হাজরা, উত্তম হালদার প্রমুখ গ্রেফতার হলেও ৫৫দিন অধরা ছিলেন সন্দেশখালির ত্রাস শাহজাহান। আদালত গোটা ঘটনার সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়। ৫৫ দিন পর পুলিশের হাতে ধরা পড়েন শাহজাহান। ইতিমধ্যে স্থানীয় এক বিজেপি নেতার ভিডিও ভাইরাল করে তৃণমূল। তাতে ওই বিজেপি নেতাকে বলতে শোনা যায়, সন্দেশখালির মহিলাদের ধর্যণ ও নির্যাতনের অভিযোগ সাজানো। টাকার বিনিময়ে মহিলাদের দিয়ে মিথ্যে বয়ান লেখানো হয়েছে। সেই সব ভিডিও হাতে নিয়ে পাল্টা প্রচারে নামে তৃণমূল।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে (Narendra Modi) কটাক্ষ করে মমতা বলেন, তাঁর আমলে ভারতবর্ষে সবচেয়ে বেশি মেয়েদের উপর অত্যাচার হয়েছে। উত্তরপ্রদেশে মহিলাদের উপর অত্যাচার হয়েছে। দলিতদের উপর অত্যাচার হয়েছে। আমাদের এখানে হয় না। আমাদের এখানে যে দু-একটা ঘটনা হয়, আমরা সঙ্গে সঙ্গে তার ব্যবস্থা নিই। রাম হোক বা রহিম হোক কাউকে ছা়ড়া হয় না। সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। মোদিবাবু খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন মোদির গ্যারান্টি বলে। এটা বেআইনি। আমরা বারবার বিচার চেয়েও পাচ্ছিলাম না। অবশেষে হাইকোর্ট কাল বলে দিয়েছে, হ্যাঁ এটা বেআইনি। ওরা বলছে ৪০০ পার, আমি বলছি পগার পার। ওরা ২০০ টাও সিট পাবে না।
আরও পড়ুন: মমতাকে কুকথা, অভিজিতের প্রচারে ২৪ ঘণ্টার নিষেধাজ্ঞা
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রসঙ্গে টেনে মমতা বলেন, ভোটের আগে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার করে দেব বলেছিলাম, করেছি। কৃষকদের সাহায্য করার কথা বলেছিলাম, করেছি। যা যা বলেছিলাম সব করেছি। বিনা পয়সায় আপনারা রেশন পাচ্ছেন। মোদি টাকা বন্ধ করে দিয়েছেন। ১০০ দিনের কাজের টাকা আমরা দিয়ে দিয়েছি। ভে়ড়ি দখলের প্রসঙ্গে মমতা বলেন, অনেক মাছের ভেড়ি আছে। অনেকে অনেকের ভেড়ি দখল করে নেয়। আমরা তাই একটা পলিসি তৈরি করছি। গায়ের জোরে কেউ ভেড়ি কেড়ে নিতে পারবে না। যার ভেড়ি সে চাষ করুক। না হলে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলো চালাক। সরকারের রেকর্ডে নাম রাখতে হবে। সরকারকেও তার জন্য একটা শুল্ক দিতে হবে।
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, দেড় বছরের মধ্যে বসিরহাটে বাড়ি বাড়ি পানীয় জল পৌঁছে যাবে। তিনি বলেন, প্রত্যন্ত এলাকা সন্দেশখালি। দক্ষিণ ২৪ পরগনাটাও আবার অনেক বড়। একদিকে সুন্দরবন, বাঘের কামড়। অন্যদিকে পুরো বনভূমি, জলাভূমিতে ভর্তি। তাই সুন্দরবন নিয়ে একটা মাস্টার প্ল্যান তৈরি করছি। তাতে আপনাদের জেলা নতুন জেলা হবে। ওদিকে সাগর, সুন্দরবন, বকখালি নিয়ে আর একটা জেলা হবে। জেলা হলে নতুন সাবডিভিশন হবে, ব্লক হবে। বেশি দূরে যেতে হবে না, কাছাকাছি কাজ হয়ে যাবে।এইসব জায়গাগুলোকে পাকাপোক্ত করতে হবে। জল, আকাশ, নদীনালা আমাদের হাতে থাকে না। ১৫ কোটি ম্যানগ্রোভ চারা লাগিয়েছি সমুদ্র পার শক্ত করতে।
অন্য খবর দেখুন