রানিগঞ্জ: ভিনরাজ্যে শিক্ষকতা ছেড়ে এরাজ্যে এসে এখন দিশাহারা খুসবু, প্রিয়া, বাবলিরা। তাঁরা এতবছর স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। আত্মীয়, পরিবার-পরিজন ছেড়ে এরাজ্যেই এখন তারা আছেন। তাই স্কুলের মায়া তারা কাটাতে পারেননি। প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে একা বাড়িতে না বসে স্কুলেই আসছেন। মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন আবার পরীক্ষায় বসার।
রানিগঞ্জের বাসন্তীদেবী গোয়েঙ্কা বিদ্যালয়ে চাকরি খুইয়েছেন মোট ১২ জন শিক্ষিকা। প্রতিদিনের অভ্যাসে তাঁদের কয়েকজন স্কুলেও এসেছিলেন। কেউই প্রায় কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না। যদি কোনও উপায় বের হয়, এই ভেবে প্রকাশ্যে মুখও খুলতে চাইছেন না তাঁরা। তবুও হতাশা চেপে রাখতে পারেননি। তারমধ্যে একজন খুসবু দাস। উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা।
ভিনরাজ্যে চাকরি করতে চাননি। শিক্ষকতা করতে চেয়েছিলেন এ রাজ্যেই। তাই হেলায় ছেড়ে দিয়েছিলেন অসমের কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের চাকরি। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরি খুইয়ে রাতারাতি অথৈ জলে পড়েছেন খুসবু দাস নামে ওই শিক্ষিকা।
আরও পড়ুন: রামনবমী উপলক্ষে শুভেচ্ছাবার্তা মমতার
খুসবুর দাবি, স্কুলের চাকরিতে যোগ দেওয়ার পরে স্বাস্থ্য দফতরের চাকরি হয়েছিল তাঁর। কিন্তু ইংরাজি বিষয়ে ছেলেমেয়েদের পড়াতে পারার আবেগে স্কুলের চাকরি ছাড়তে চাননি। ইংরেজির এই শিক্ষিকার প্রশ্ন, ‘অযোগ্যদের বাঁচাতে আমাদের কেন বলি দেওয়া হল।’ হতাশা ঝরে পড়ে ওই স্কুলেরই শিক্ষিকা বাবলি রবিদাসের গলায়। সমসাময়িক হিন্দি সাহিত্য নিয়ে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করেছেন দিশেরগড়ের বাসিন্দা বাবলি। কলেজে অধ্যাপনা করবেন ভেবে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এরই মাঝে ২০১৯ সালে এই স্কুলেই চাকরিতে যোগ দেন। তারপর স্কুলের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তিনি।
বাবলি বলেন, ‘মাঝপথে এ ভাবে আমাদের অযোগ্য তকমা দিয়ে ছেঁটে ফেলা হলো। এটা মেনে নেওয়া কি সম্ভব।’ তবে জোর গলায় জানিয়েছেন হার তিনি মানবেন না। ফের পরীক্ষায় বসবেন। সফল হয়ে স্কুলের চাকরিতেই ফিরবেন। প্রিয়া কুমারী বিজ্ঞানের শিক্ষক। ধানবাদে প্রাইমারি স্কুলে টিচার ইনচার্জ ছিলেন। সেই চাকরি ছেড়ে হাই স্কুলে আসেন। নিজের পছন্দের বিষয় পড়ুয়াদের পড়াতে চেয়েছিলেন। এখন চাকরিহারা। পশ্চিম বাংলার শিক্ষা ব্যবস্থা পুরো ভেঙে পড়েছে বলে দাবি প্রিয়া কুমারীর। রানিগঞ্জের ওই স্কুলে ছাত্রীসংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। ২৮ জন শিক্ষিকার মধ্যে ১২ জনের চাকরি গিয়েছে। বাকি ১৬ জন শিক্ষিকা নিয়ে কী ভাবে স্কুল চলবে তা ভেবেই অস্থির প্রধান শিক্ষিকা শ্রুতি গঙ্গোপাধ্যায়।
দেখুন আরও খবর: