দেবাশিস দাশগুপ্ত
একেই বলে ঠেলার নাম বাবাজি। যে নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) মুখে গত দশ বছরে এনডিএ জোটের (NDA Alliance) কথা প্রায় শোনাই যায়নি, বারবারই তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, মোদির গ্যারান্টির কথা, মোদি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়। সেই মোদিই এখন জোটে মোদিত, জোটে মোহিত। তাঁর মুখে জোট ছাড়া কথা নেই।
কেন এই ভোল বদল পরমাত্মার দূত নরেন্দ্র মোদির? ওই যে বললাম, ঠেলার নাম বাবাজি। এবার লোকসভা ভোটে তাঁর দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। দুই প্রধান জোটসঙ্গী জেডিইউয়ের নীতীশ কুমার (Nitish Kumar) এবং তেলগু দেশম পার্টি বা টিডিপির চন্দ্রবাবুর (N. Chandrababu Naidu) ঘাড়ে ভর দিয়ে মোদিকে তৃতীয়বারের সরকার চালাতে হবে। তাই তাঁর মুখে এখন শুধুই জোট ধর্মের কথা। অবশ্য মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন তিনি যেমন নিজেকে পরমাত্মার দূত বলেছিলেন, ভোটের ফল প্রকাশের পর তাঁর মুখে আর সেই পরমাত্মার দূতের প্রসঙ্গও উধাও। দেশবাসী নিশ্চয়ই এখনও ভুলে যাননি বারাণসীতে সংবাদমাধ্যমকে বলা মোদির সেই অমোঘ বাণী। তিনি বলেছিলেন, এখন মনে হয়, আমার জৈবিক জন্ম হয়নি। পরমাত্মাই আমাকে এই ধরাধামে পাঠিয়েছেন কাজ করার জন্য। সেই কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত পরমাত্মা আমাকে তুলে নেবেন না।
দেশবাসী এখন ভেবে চিন্তিত, সেই পরমাত্মার দূতের কী হাল। শুক্রবার এনডিএর সব জোট শরিকের বৈঠকে মোদিকে নেতা নির্বাচিত করা হল। যে মোদি গোটা নির্বাচন পর্বে শুধুই নিজের এবং বিজেপির কথা বলে গিয়েছেন, প্রচারে সারা দেশে তিনি বলেছেন, অমুকটা মোদির গ্যারান্টি, তমুকটা মোদির গ্যারান্টি, সেই মোদিরই কী পরিবর্তন। শুক্রবার পার্লামেন্টের সেন্ট্রাল হলে এনডিএর সভায় মোদির মুখে একবার মাত্র বিজেপির কথা শোনা গেল, নিজের নাম প্রায় শোনাই গেল না। কিন্তু ৩৯বার শোনা গেল শুধুই জোটের কথা। সেই ১৯৯৮ সাল থেকে অটলবিহারী বাজপেয়ি, লালকৃষ্ণ আদবানির আমল থেকে পথ চলা এনডিএর কথা তিনি তুলে ধরেছেন। এনডিএর বিভিন্ন শরিকদলের যে সব নেতা আজ প্রয়াত, তাঁদের কথাও উঠে এসেছে মোদির ভাষণে।
আরও পড়ুন: লোকসভায় বিরোধী দলনেতা হচ্ছেন রাহুল গান্ধী
লোকসভা ভোটের আগে থেকে মোদির প্রচারের মুল সুর ছিল, আমি একাই যথেষ্ট। বিজেপির জাতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডাকেও বলতে শোনা গিয়েছে, গত দশ বছরে বিজেপি নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখেছে। সঙ্ঘ পরিবারের সঙ্গেও মোদির দূরত্ব নিয়ে বিভিন্ন মহলে কথা চালাচালি হয়েছে। সঙ্ঘের সঙ্গে বিজেপির সমন্বয়ের অভাব যে এবারের লোকসভা ভোটের ফলাফলে প্রকট হয়ে উঠেছে, চর্চা চলছে তা নিয়েও।
শুক্রবার এনডিএর প্রথম বৈঠকেই মোদি শরিকদের পাশে নিয়ে চলার বার্তা দিয়েছেন। তিনি জোর দিয়েছেন সর্বমত এবং বিশ্বাসের উপর। তাঁর দাবি, এই এনডিএ জোট আগামী দশ বছর ক্ষমতায় থাকবে। ওই বৈঠকে জোটসঙ্গী নীতীশ কুমার, চন্দ্রবাবুরাও মোদিকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন। গত দশ বছরের রাজত্বে মোদিকে শরিকী কাঁটার খোঁচা খেতে হয়নি। এবার খেতে হচ্ছে। তাই তিনি বারবার জোটের কথা বলছেন। গদি বাঁচাতেই যে মোদির এই জোট বন্দনা, তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। তাই বলছিলাম, একেই বলে ঠেলার নাম বাবাজি।
অন্য খবর দেখুন