হুগলি: সময়ের দাবি মেনে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শিল্প প্রচেষ্টায় ভুল ছিল না। জমি অধিগ্রহণে পদ্ধতিগত ভুল ছিল বলছে সিঙ্গুরবাসী। তবে সিঙ্গুরে টাটাদের ন্যানো কারখানা না হওয়ায় রাজ্যে শিল্প মানচিত্রে বদল হত সে কথা বলাই যায়। আর সিঙ্গুর থেকে ন্যানো বিদায় সিঙ্গুর, হুগলি তথা বাংলার শিল্প সম্ভাবনার ক্ষতি করেছে সে কথাও ভুল নয় বলছে স্থানীয়রা।
সিঙ্গুরে টাটাদের ছোটো গাড়ির কারখানা হয়নি। তবু ৯৯৭ একর জমির নাম হয়ে গিয়েছে টাটার মাঠ। হতে পারত আরও একটা টাটা নগর। রতন টাটাও বলেছিলেন, মাথায় বন্দুক ঠেকালেও সিঙ্গুর ছাড়ব না। কিন্তু অনিচ্ছুক কৃষকদের আন্দোলনে সিঙ্গুর ছাড়ে টাটা। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে জমি ফিরে পেলেও অনেক জমি এখনও অনাবাদি।
সিঙ্গুর আন্দোলন পালে হাওয়া দিয়েছিল নন্দীগ্রামে। সিঙ্গুর নন্দীগ্রামে জোড়া আন্দোলনের ফল ২০১১ সালে বাম সরকার তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পতন। যা সূচিত হয়েছিল ২০০৬ সালেই। সপ্তম বামফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ঘোষণা করেছিলেন, সিঙ্গুরে টাটাদের ছোট গাড়ির কারখানা হবে। সেইমতো শুরু হয়েছিল জমি অধিগ্রহণ। সেই জমি অধিগ্রহনের পদ্ধতি ভুল ছিল। অনিচ্ছুক কৃষকদের প্রতি নরম মনোভাব নেওয়া উচিত ছিল। তাঁদের সঙ্গে আরও আলোচনার প্রয়োজন ছিল ক্ষতিপূরণ নিয়ে এমনটাই মনে করেন সিঙ্গুরের কৃষকদের একাংশ। তবে সে সময় যারা স্ব-ইচ্ছায় জমি দিয়েছিলেন শিল্পের জন্য, তাঁদের মতে শিল্প হলে সিঙ্গুরের উন্নয়ন হত। বেকার যুবকদের কাজ হত, সেই কথা ভেবেই তাঁরা জমি দিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: শিল্প-স্বপ্নের ফেরিওয়ালা বুদ্ধদেব
দুর্গাপুর এক্সপ্রেস হাইওয়ের পাশের জমিতে চাষ হত। তাই অনিচ্ছুক চাষিরা এই জমি দিতে চাননি। টাটা শিল্প গোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা সিঙ্গুরে জমি পরিদর্শনে এসে যেদিন গ্রামবাসীদের বিক্ষোভের মুখে পরেছিলেন। সেদিনই বোধহয় লেখা হয়ে গিয়েছিল সিঙ্গুরের ভবিষ্যৎ।
এরপর আন্দোলন জোরদার,পুলিশ দিয়ে সেই আন্দোলন দমানোর চেষ্টা হিতে বিপরীত হয়। একদিকে শিল্প গড়ে উঠছে অন্যদিকে আন্দোলন চলছে। জমিদাতা পরিবারের বেকার যুবকরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন টাটাদের কারখানা কাজে লক্ষ্যে। কারখানার কাজ প্রায় শেষ ন্যানো উৎপাদন শুরু হওয়ার অপেক্ষা। দুর্গাপুর রোডের পাশে ধর্না শুরু করেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৮ দিনের ধরনা চলাকালীন রতন টাটা ঘোষণা করলেন সিঙ্গুর ছাড়ছে টাটা। আশাহত হয়েছিলেন অনেকেই।
যতদিন শিল্পের কথা উঠবে ততদিন সিঙ্গুর থাকবে আর থাকবে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নাম। পেরিয়ে গিয়েছে ১৮ বছর। এখনও সিঙ্গুরের ইচ্ছুক অনিচ্ছুক ভাগ আছে। স্ব-ইচ্ছায় জমিদাতারা মনে করেন, শিল্প হলে ছবিটাই বলদে যেত। অনিচ্ছুকদের মতে, জোর করে জমি নেওয়ার বিরুদ্ধে ছিলেন তাঁরা। তাই আন্দোলন করেছিলেন। সিঙ্গুরে শিল্পের বিরুদ্ধে তাঁরা ছিলেন না।