চন্দ্রকোনা: সোমবার অর্থাৎ আজ থেকে রাজ্যজুড়ে যৌথ ভাবে হিমঘরে কর্ম বিরতির ডাক দিয়েছে হিমঘর মালিক অ্যাসোসিয়েশন (Cold Storage Owners Association) ও রাজ্য প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি। আর এই সিদ্ধান্তের ফলেই বাজারে দেখা দিতে পারে আলুর সংকট। হিমঘরে কর্ম বিরতির ফলে হিমঘরে নামবে না আর আলু। আলু না নামলে খুচরো বাজারেও আলু সাপ্লাই বন্ধ থাকবে, শুধু খুচরো বাজার নয় হিমঘর থেকে একাধিক জেলায় আলু যাওয়াও বন্ধ হয়ে যাবে। আর যার ফলে দেখা দিতে পারে বাজারে চরম আলুর সংকট।
কিন্তু কেন এমন সিদ্ধান্ত নিল হিমঘর অ্যাসোসিয়েশন ও রাজ্য প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি? জানা যাচ্ছে, বাজারে ইতিমধ্যেই আলুর দাম বেড়ে যাওয়ার ফলে পশ্চিমবঙ্গ সরকার একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। কখনও বাজারে ট্রাক্সফোর্সের হানা, কখনও আবার হিমঘরে আধিকারিকদের হানা। শুধু এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, পশ্চিমবঙ্গ থেকে একাধিক রাজ্যে আলু যায় আর সেখানেই দেখা দিয়েছে বিপত্তি, একাধিক বর্ডারে আলুর গাড়িকে পুলিশের পক্ষ থেকে আটকে দেওয়া হচ্ছে। যার ফলে গাড়িতেই নষ্ট হচ্ছে আলু। ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে প্রশাসনের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করা হলেও এনিয়ে কোন সূরাহা মেলেনি বলে অভিযোগ তুলছেন প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির পদাধিকারীরা।
তাদের দাবি, ভিন রাজ্যে আলু যাতে না যায় তার জন্য বর্ডারে রীতিমতো পুলিশি জুলুমবাজি চলে, বর্ডারে দিনের পর দিন গাড়ি দাঁড়িয়ে থেকে আলু নষ্ট হয়। চলতি সময়ে বাজারে আলুর দাম বৃদ্ধির জেরে আলু ব্যবসায়ী ও সমিতির তরফে এলাকা ভিত্তিক বিভিন্ন বাজারে ন্যায্যমূল্যের আলু বিক্রয় কেন্দ্র খুলে সাধারণ মানুষকে কম দামে আলু বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সরকার আলু ব্যবসায়ীদের কথা ভাবছে না। ভিন রাজ্য আলু না গেলে সবারই সমস্যা। আর তার ফলেই কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে হিমঘর মালিক এসোসিয়েশন ও রাজ্য প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি।
এবছর এখনও হিমঘরগুলিতে যথেষ্ট পরিমাণ আলু মজুত রয়েছে। ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি কৃষকদেরও আলু মজুত রয়েছে হিমঘরগুলিতে।ব্যবসায়ীরা হিমঘরে আলু মজুত রেখে মোটা টাকা মুনাফা লুটছে আর যার জেরে খুচরো বাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে আলু এমনই অভিযোগ উঠেছে বারবারে। যদিও আলু ব্যবসায়ীদের দাবি, এবছর এক গাড়ি আলু লোড হয়েছে অর্থাৎ ২০০ প্যাকেট আলু লোড হয়েছে ১ লাখ ৪০০০০ থেকে ৬০০০০ টাকায়। সেক্ষেত্রে আলু যখন বার করা হচ্ছে দেখা যাচ্ছে হিমঘরের ভাড়াও বেড়েছে। ২০০ প্যাকেট পিছু ভাড়া হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। সেই আলুকে রেডি করতে আরও ৪০০০ টাকা খরচ। এছাড়াও হিমঘর থেকে আলু নামিয়ে লেবার দিয়ে সেই আলু বাছাইয়ের সময় নষ্ট হয়ে যাওয়া আলু, ছোট আলু ও দাগি আলু আলাদা করতে হয়। সেক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে ২০০ প্যাকেট আলু রেডি করতে প্রায় হিমঘর ভাড়া সহ ৫০,০০০ থেকে ৬০,০০০ টাকা খরচা পড়ে যায়। এসবের পরে ব্যবসায়ীদের বিরাট কিছু লাভ হচ্ছে তা নই।
হিমঘরে লোডিংয়ের সময় বেশি দামে আলু স্টোরে লোড করতে হয়েছে। তাহলে এখন কম দামে আলু কোথা থেকে পাওয়া যাবে? প্রশ্ন ব্যবসায়ীদের। গত দু’তিন বছরের তুলনায় এবছর হিমঘরে আলু রেখে ব্যবসায়ীরা যে একেবারেই লাভের মুখ দেখছে না তা নয়, তবে ব্যবসায়ীদের কথায় বিগত কয়েকবছর যখন আলু ব্যবসায়ী থেকে চাষীরা বিপুল লোকসানে পড়েছিল তখন তো কেউ খোঁজ নেয়নি। আলু চাষের সময় যখন আলু বীজ থেকে রাসায়নিক সারের দাম চড়া হয় এবং কালোবাজারি হয় তখন সরকার চাষীদের ভুর্তুকি দিয়ে চাষ করায় কোনও সহযোগিতা করেনি। আর এখন দাম বৃদ্ধি হতেই সরকার তার ভাবমুর্তি ঠিক রাখতে উঠে পড়ে লেগেছে এমনই মন্তব্য আলু ব্যবসায়ী সমিতির পদাধিকারী থেকে আলু চাষীদেরও।
আরও পড়ুন: ভাঙনের মুখে কপিলমুনির আশ্রম, সমুদ্রগর্ভে মেলাচত্বরের অনেকাংশ
এবছর মাঠ থেকে সরাসরি বিক্রির পরও হিমঘরেও আলু মজুত রেখেছে চাষীরাও। তুলনায় কম হলেও এখনও জেলার হিমঘরগুলিতে আলু চাষীদের আলু মজুত রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। হিমঘরে কর্মবিরতির জেরে সমস্যায় পড়তে হবে হিমঘরে আলু মজুত রাখা চাষীদেরও। এবিষয়ে চাষীদের দাবি, সরকার আলু ব্যবসায়ী সমিতির মধ্যে টানাপোড়েনে এই কর্মবিরতির জেরে সমস্যায় পড়তে হবে তাদেরও। কারণ হিমঘর থেকে আলু নামিয়ে তা বিক্রি করা না গেলে আর্থিকভাবে সমস্যা দেখা দেবে বর্ষায় চাষের কাজে। তাই দ্রুত সমস্যা মিটুক চাইছেন চাষীরাও।
অন্যদিকে, খুচরো বাজারে আলুর দাম এখনও ঊর্ধমুখী। তার উপর হিমঘর থেকে আলু না নামানো হলে বাজারের খুচরো আলু বিক্রেতারা আলু আলু এনে ব্যবসা করবে কী করে সেই নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। চন্দ্রকোনা রেগুলেটেড বাজারে এমনিতেই আলুর জোগান আগের তুলনায় অনেক টাই কমে গিয়েছে। হিমঘরে কর্মবিরতি এবং সেখানে আলু না নামলে বাজারে আলু বিক্রেতাদের ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম। বাজারের আলু বিক্রেতারা জানিয়েছে, তারা প্রতিদিনের জন্য হিমঘর থেকে আলু কিনে এনে বাজারে ব্যবসা করে। এছাড়া কোনও বিকল্প নেই। সেই হিমঘর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য আলু না নামালে আলুর জোগানে ভাটা পড়বে বাজারে। হিমঘর থেকে আলু না মিললে ব্যবসা বন্ধের আশঙ্কা করছেন বাজারের খুচরো বিক্রেতারা। তারাও চাইছে, সুষ্ঠ সমাধান হয়ে যাতে কর্মবিরতি বেশিদিন না গড়ায়।
এদিকে আজ সকালে চন্দ্রকোনার হিমঘরগুলিতে গেলে দেখা যায় হিমঘরের কর্মীরা থাকলেও সেডে আলু নামানোর কাজ বন্ধ। লেবারদের দেখা নেই। চন্দ্রকোনার চন্ডীমাতা হিমঘরের এক কর্মী কর্মবিরতি প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, হিমঘরে কর্মীরা আমরা সবাই এসেছি কিন্ত সেডে আলু নামছে না। ব্যবসায়ীরা আলু নামাচ্ছে না, ফলে আমরা বসে আছি। তবে ঘটনা যাই হোক খোলা বাজারে আলু না পাওয়া গেলে সাধারণ মানুষের হেঁসেলেও যে ভাটা পড়বে তা বলাই যায়। আর আলুর বর্তমান বাজার মূল্যের থেকে আরও চড়া হবে দাম আর তাতে আরও যন্ত্রণায় পড়বে আমজনতাই। এখন দেখার পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়।
দেখুন বিস্তারিত খবর