শান্তিনিকেতন: সদ্য রবিতীর্থ শান্তিনিকেতনকে (Shantiniketan) ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ ঘোষণা করেছে ইউনেস্কো। অথচ কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশেই বিগত পাঁচ বছর ধরে বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে শতাব্দি প্রাচীন ঐতিহ্য ও ইতিহাসে মোড়া শান্তিনিকেতনে (Shantiniketan) রবিঠাকুরের ছাপাখানা। বিশ্বকবির সেই শান্তিনিকেতন হেরিটেজ স্বীকৃতি পেলেও বিলুপ্ত কবিগুরুর লিঙ্কন প্রেস। রবিঠাকুরের ছাপাখানা বন্ধ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার ও বিশ্বভারতীর ভূমিকায় ক্ষোভে ফুঁসছে শান্তিনিকেতন।
কবিগুরুর এই লিঙ্কন প্রেস নিছক এক প্রেস নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে ঐতিহ্য ও ইতিহাস। বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯১৭ সালের ৮ জানুয়ারি আমেরিকার নেব্রাস্কা স্টেটের লিঙ্কন শহরে অলিভার থিয়েটারে রবীন্দ্রনাথের বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘ন্যাশনালিজম’। ওই দিনই লিঙ্কনের বাসিন্দারা রবীন্দ্রনাথকে একটি মুদ্রণযন্ত্র উপহার দেন। নাম ‘দ্য লিঙ্কন প্রেস’। উপহারটি মূলত ছিল শান্তিনিকেতনের ছাত্রদের জন্য। যন্ত্রটির গায়ে ধাতুর পাতে খোদাই করা ছিল, ‘প্রেজেন্টেড টু দ্য বয়েজ় অব শান্তিনিকেতন’। অক্টোবর ১৯১৮-য় প্রকাশিত হয় শান্তিনিকেতন প্রেসে মুদ্রিত প্রথম বই, রবীন্দ্রনাথের গানের দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের করা স্বরলিপি-সহ সংকলন গীত-পঞ্চাশিকা। তারপরে বহু ইতিহাসের সাক্ষী এই প্রেস।
আরও পড়ুন: মহালয়ায় দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হয় কেন? জানুন এই রীতির গুরুত্ব ও তাৎপর্য
কেন্দ্রীয় শিক্ষা দফতর সাতটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে তাদের নিজেদের প্রেস বা ছাপাখানা বন্ধ করতে হবে। তাই শতাব্দী প্রাচীন বিশ্বভারতীর প্রেসও বন্ধ হয়।
সূত্রের খবর, ছাপাখানা বিভাগে ম্যানেজার-সহ ৩৯ জন কর্মী ছিলেন। ২০১৮ সালে ছাপাখানার দায়িত্বে থাকা ম্যানেজারকে কলকাতার গ্রন্থন বিভাগে পাঠানো হয়। বাকি কর্মীদেরও একে একে পাঠানো হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে। ওই বছর শেষের দিকে ছাপার কাজ পুরোপুরি ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। বিশ্বভারতী একটি নোটিস জারি করে জানায়, গ্রন্থন বিভাগের ডিরেক্টর চেয়ারপার্সন করে ১০ জনের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ছাপাখানা নিয়ে বৈঠকও ডাকা হয়। যন্ত্রপাতি এবং বাড়িটি নিয়ে কী করা হবে, তা ওই বৈঠকে ঠিক হবে বলেই জানা যায়। এমনকী প্রেসের মেশিনগুলিও নিলাম করা হতে পারে বলে কর্মীমহলে গুঞ্জন ছড়ায় সেই সময়।
উল্লেখ্য রবীন্দ্রনাথের হাত ধরেই ১৯১৮ সালে শান্তিনিকেতনের ছাতিমতলার পাশে ছাপাখার পথচলা শুরু হয়। সত্তর দশকে প্রেস উঠে আসে পূর্বপল্লীর মাঠের পশ্চিমে। সেই প্রেস এখন বিশ্বভারতীর ছাত্র সমন্বয় দপ্তর। নষ্ট হচ্ছে রবিঠাকুরের প্রিয় ছাপাখানার যন্ত্রাংশ।
বিশ্বকবির ছাপাখানা বন্ধ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার ও বিশ্বভারতীর ভূমিকায় ক্ষোভে ফুঁসছে শান্তিনিকেতন। শান্তিনিকেতনের প্রবীণ আশ্রমিক, প্রাক্তনী ও পড়ুয়ারা মর্মাহত কবিগুরুর প্রিয় ছাপাখানা বন্ধ হওয়ায়। তাঁদের কথায়, রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতন প্রেস আর পাঁচটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে মেলালে চলবে না। রবিঠাকুরের ছাপাখানা পরতে পরতে ইতিহাস ও ঐতিহ্যে মোরা। কেন্দ্রীয় সরকার ও বিশ্বভারতীকে ভাবা উচিৎ। কেন্দ্রীয় সরকার থেকে নির্দেশ এলো আর বিশ্বভারতী ছাপাখানা বন্ধ করে দিলো, এটা সঠিক নয়। বিশ্বভারতীর উচিৎ ছিলো কেন্দ্রীয় সরকার কে বোঝানো ছাপাখানার গুরুত্ব।
এদিকে ছাপাখানা বন্ধের বিষয়ে বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, শান্তিনিকেতনে প্রেস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে তার কারণ, এখানকার ছাপার মুদ্রণ অনেক পুরনো নষ্ট হয়ে গিয়েছে।