কেশপুর: দীর্ঘদিন ধরে ভগ্নদশায় পড়ে রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ গুলি। রুমের মধ্যে ক্লাস করা তো দূরের কথা, ভিতরে ঢোকার মত পরিবেশটুকুও নেই। বারবার এসআই অফিস, ডিআই অফিস, পঞ্চায়েত সমিতি ও সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিকের দ্বারস্থ হয়েও কোনও সুরহা মেলেনি। অবশেষে হরিমন্দিরে বসিয়ে ক্লাস করার সিদ্ধান্ত নেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুর ব্লকের ৪ নম্বর গোলাড় গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত পালংপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
অফিস রুমের ছাদ ঝুলে রয়েছে। একটু বৃষ্টি হলেই ছাদ দিয়ে নীচে বৃষ্টির জল প্রবেশ করেছে রুমের মধ্যে। ভয়ে ভয়ে অফিসে কাজ করতে হয় শিক্ষকদের। আর ছাত্রছাত্রীদের বসার ক্লাসরুমগুলি কার্যত মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। কোনও কক্ষে দেয়ালের চাপস ভেঙে মেঝেতে পড়ে রয়েছে, তো কোনও কক্ষে দেওয়ালের চাপস ভেঙে ঝুলছে। ঝুলে রয়েছে ইলেকট্রিকের তার ও সিলিং ফ্যান। দরজা জানালাও ভেঙে চৌচির। সাপের বাসাও বেঁধেছে শ্রেণিকক্ষের মধ্যে। ছেলেরা ভয়ে ঢুকতেই চাইছে না স্কুলে। শিক্ষকরাও কোনও কিছু দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার ভয়ে বাধ্য হয়ে নদীর পাড়ের সামনে হরিমন্দিরে বসে ক্লাস করাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: শহীদ দিবসের আগে তৃণমূল ব্লক সভাপতির পদত্যাগ ঘিরে জল্পনা
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অসীম কুমার মাইতি বলছেন, আমি আসার পর থেকেই দেখছি বিদ্যালয়ের বিল্ডিংয়ের খুব খারাপ অবস্থা। প্রত্যেক বছরই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি কিন্তু কোনও সুরাহা মেলেনি এখনও পর্যন্ত। বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঁচটি ক্লাস রয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৮০ জন। কমবেশি সকলেই প্রতিদিন বিদ্যালয়ে আসে। এখানকার ছেলেমেয়েদের মধ্যে পড়াশোনায় আগ্রহও রয়েছে যথেষ্ট। আমি চাই অতি দ্রুত যাতে বিদ্যালয়ের বিল্ডিং তৈরি করে দেওয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনায় আগ্রহ থাকলেও সেইভাবে আমরা পরিবেশ তৈরি করে দিতে পারিনি।
পাশাপাশি এক অভিভাবক সুজিত মণ্ডল বলেন, আমরা ভয় পাচ্ছি বিদ্যালয়ে পাঠাতে ছেলে মেয়েদের। বিল্ডিংয়ের এমন দুরাবস্থা, যে কোনও সময় বিপদ ঘটে যেতে পারে। সরকারের কাছে আবেদন অবিলম্বে বিদ্যালয়ের প্রাচীর সহ শ্রেণিকক্ষ তৈরি করে দেওয়া হোক। এখন হরিমন্দিরে ক্লাস হচ্ছে, সেখান থেকে ছোটো ছোটো ছেলে-মেয়েরা অনেক সময় নদীর সামনে চলে যাচ্ছে। নদীতে পড়ে গিয়েও বিপদ ঘটতে পারে যে কোনও সময়। পাঁচটি ক্লাস, রয়েছে তিনজন শিক্ষক। যাতে দ্রুত বিদ্যালয় প্রাঙ্গনের মধ্যে ক্লাসের পরিবেশ তৈরি হয়, সেই দিকে সরকারকে নজর দিতে বলব।
কেশপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি চিত্তরঞ্জন গড়াই জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই বিষয়টি জানতে পেরেছি। আমি এসআই এবং ডিআইকেও জানবো। পাশাপাশি পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকেও বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। গতবছর বর্ষার সময় বিল্ডিংটি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অতি দ্রুত নতুন বিল্ডিং নির্মাণের কাজ শুরু করার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো।
দেখুন আরও অন্যান্য খবর: