হাওড়াঃ বালি পুরসভার ফিনান্স অফিসার কল্যাণ প্রামাণিককে শো-কজ করা হল। পুরসভার প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা হাওড়া সদরের মহকুমা শাসক অমৃতা রায় বর্মণ বৃহস্পতিবার ওই অফিসারকে নোটিস ধরান। আগামিকাল শুক্রবার বিকেল পাঁচটার মধ্যে শো-কজের জবাব দিতে বলা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে ফাইল আটকে রাখা, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খোলা-সহ একগুচ্ছ অভিযোগ আনা হয়েছে। এদিক কল্যাণ নিরাপত্তা চেয়ে বালি থানায় আবেদন করেন। পুলিশ সেই আবেদনও খারিজ করে দিয়েছে।
বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠেছে, বালি পুরসভায় একাধিক আর্থিক দুর্নীতি ধরে ফেলায় ওই অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উঠেপড়ে লেগেছে স্থানীয় প্রশাসন। পুরসভা সূত্রের খবর, বালিতে্ কোনও টেন্ডার ছাড়াই তৃণমূলের পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। অর্থ দফতরের নির্দেশিকা অমান্য করে কোটি কোটি টাকা চুরির ঘটনা ঘটেছে। ফিনান্স অফিসার সেই চুরি আটকানোর চেষ্টা করেন। তাঁকে ঠিকাদারদের বেআইনিভাবে পাইয়ে দেওয়া কাজের টাকা দিতে চাপ দেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ডায়মন্ড হারবারে পুনর্নির্বাচন চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ বিজেপি প্রার্থী
গত মঙ্গলবার ফিনান্স অফিসারের ঘরের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ করে তৃণমূল পরিচালিত ঠিকা কর্মী ইউনিয়ন। রাত পর্যন্ত অফিসে আটকে রাখা হয় কল্যাণকে। অবিলম্বে বকেয়া টাকা মিটিয়ে দিতে হবে দাবি করা হয়। কল্যাণ ইউনিয়নকে জানিয়ে দেন, তিনি কোনও বেআইনি বিলে সই করবেন না। খবর পেয়ে পুরসভায় আসেন প্রশাসক। তাঁর হস্তক্ষেপে ঘেরাওমুক্ত হন কল্যাণ। কিন্তু প্রশাসক অনিয়মের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে ফিনান্স অফিসারকে শো-কজ করার হুমকি দেন।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে কাজে যোগ দিয়ে কল্যাণ জানতে পারেন, সরকারি নিয়ম অগ্রাহ্য করে গত বেশ কয়েক বছরে বিনা টেন্ডারে তৃণমূল ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দেওয়া হয়েছে এবং বকেয়া টাকা মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন ফাইল দেখে তিনি বুঝতে পারেন, অর্থ দফতরের নির্দেশ অমান্য করে ২ কোটি ৩০ লক্ষ টাকার বিল মেটানো হয়েছে। তিনি এই বেআইনি কাজের বিরুদ্ধে সরব হন। তিনি নগরোন্নয়ন সচিবকে বিষয়টি জানান। তাতে কাজ না হওয়ায় কল্যাণ নবান্নে অর্থ দফতরের অফিসার এবং হাওড়ার জেলাশাসক, মহকুমা শাসককে লিখিত জানান।
কল্যাণ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বিভিন্ন ফাইলে বহু অনিয়ম ধরা পড়েছে। বিভিন্ন মহল থেকে বেআইনি বিল ছেড়ে দেওয়ার জন্য তাঁর উপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। সূত্রের খবর, গত ২৮ জুন প্রশাসক পুরসভায় একটি সভা ডাকেন। সেই সভায় অফিসার, তৃণমূলের প্রাক্তন কাউন্সিলর এবং স্থানীয় তৃণমূল নেতারাও হাজির ছিলেন। তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। কর্মীদের অভিযোগ, দলীয় নেতাদের সামনে বেশ কিছু কর্মীকে হুমকি দেওয়া হয়। ফিনান্স অফিসারকে দ্রুত বিল ছেড়ে দিতে বলা হয়। সভার পরই ফিনান্স অফিসারকে না জানিয়ে তাঁর দফতরের তিন কর্মীকে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হয়।
দেখুন আরও অন্যান্য খবর: