Wednesday, June 11, 2025
Homeরাজনীতিপলিটিকাল বিট: ধেয়ে এল জুতো, জর্জ বুশের পাশে বাংলার পার্থ

পলিটিকাল বিট: ধেয়ে এল জুতো, জর্জ বুশের পাশে বাংলার পার্থ

Follow Us :

হাওলা সন্দেহ করা হচ্ছে। ৪৮ কোটি টাকা ক্যাশ। একাধিক মহিলা এবং সোনার বাট। সব মিলিয়ে পার্থ-কেচ্ছা এখন দুর্নীতির মাইলস্টোন। যদিও সেটা এই লেখার বিষয় নয়। এই লেখার বিষয় জুতো। জুতো ছোড়ার ইতিহাস। সেই ইতিহাস যদি আমরা ঘেঁটে দেখি তো দেখব, এত দিন জর্জ বুশ, হিলারি ক্লিনটন,  মনমোহন সিং, রাহুল গান্ধী, চিদাম্বরম, কেজরিওয়াল বা নীতীশ কুমার, যত জন নেতার দিকে জুতো ছোড়া হয়েছে সব ক্ষেত্রেই নিক্ষেপকারী পুরুষ। পার্থকে ২অগস্ট মঙ্গলবার জোকার আইএসআই হাসপাতালে যিনি জুতো ছুড়লেন, সেই ব্যক্তি একজন মহিলা। জেন্ডার ইকুয়ালিটির বিচারে পার্থ জর্জ বুশ বা রাহুল গান্ধীদের থেকে এক কদম এগিয়েই রইলেন বলা যায়। প্রগতিশীল জুতোপেটার চেষ্টাও বলা যেতে পারে! আরও আছে।

এর আগে দেশে বিদেশে যত জন নেতা-নেত্রীর দিকে জুতো ছোড়া হয়েছে সবগুলিই ছিল বেশ চকচকে, কালো, দামী জুতো। অন্তত দেখে তেমনই মনে হয়েছিল। পার্থকে লক্ষ্য করে যে জুতো ছড়া হল, সেই জুতো আসলে জুতোই নয়, যা আসলে পয়জার বা চটি, কালোও নয়। মাটিতে সেই ফাটা ধুসর চটি বা লেডিস স্যান্ডেল মুখ উল্টে পড়েছিল, ক্যামেরায় তার ছবি আমরা দেখেছি। আধ-ফাটা শস্তা চটি। ফলে পার্থর উপর এই হামলার একটা প্রলেতারিয়েত অ্যাঙ্গেলও আছে। সেটা ফেলনা নয়। গরিব মানুষের জুতো খাওয়া আর বড়লোকের হাসপাপি জুতোর মার দুটো কি এক জিনিস হতে পারে! বডি শেমিং অনুচিত কাজ। কিন্তু এটা তো মানতে হবে, লিকলিকে মনমোহন সিংয়ের তুলনায় সামনে পিছনে এবং দুই পাশে পার্থর অনেকটাই প্রসারিত চেহারা। সেই অর্থে বলা যায় মনমোহনের পাশে অনেকটাই সহজ টার্গেট ছিল পার্থ। তবু মিস হল। সেই মহিলা পারলেন না। এক সাধারণ বঙ্গ মহিলার জুতো পার্থ পর্যন্ত পৌঁছল না, তা দেখে নাকি এক অপজিশন লিডার বলেছেন, এ থেকেই প্রমাণ হয়, পশ্চিমবঙ্গের মহিলারা অপুষ্টিতে ভুগছেন। তাদের শরীরে শক্তির অভাব ঘটেছে। শুধু তাই নয় সেই অপজিশনবাবু নাকি ওই জুতো পার্টি অফিসে নিয়ে গিয়ে ধুপ-ধুনো দিয়ে পুজো কচ্ছেন বলেও শোনা গিয়েছিল। বলছেন ওটা নাকি অন্টিটিএমসি জুতোঠাকুর। খুব জাগ্রত। 

জুতো যদি রাজনৈতিক যুদ্ধের অস্ত্র হয়ে ওঠে তার একটা অর্থনৈতিক দিক আছে। জুতো, চটি, স্যান্ডেল, বুট, গামবুট, পয়জার এগুলো যদি রাজনীতির হাতিয়ার হয়ে যায়, তাহলে গুলি, বন্দুক, বোমা, ওয়ানশটার, পিস্তলের যে কটেজ ইন্ডাস্ট্রি এবং যে বাজার আমাদের রাজ্যে পুঁইশাকের লক লক করে বেড়ে উঠেছে, তার কী হবে? সেই ব্যবসা এখন তো অনলাইনে চলে, হোম ডেলিভারি চালু হয়েছে, বহু তরুণ যুবক ডেলিভারি ম্যানের কাজ করে দু’পয়সা রোজগার করছে, বেকারি কমছে, তার কী হবে? খবর পাওয়া গেল খাগড়াগড়ে নাকি এই নিয়ে বড় মিটিং হয়েছে। সেখানে নাকি ঠিক হয়েছে তারা সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করবে। সরকারের কাছে তাদের প্রস্তাব, যেমন মোবাইল ফোনের জ্যামার লাগানো হয় বড় বড় ভিআইপিদের আশে-পাশে, সেখান থেকে আর ফোন করা যায় না। তেমনি পলিটিকাল লিডারদের আশে-পাশে জুতো-জ্যামার লাগাতে হবে। ইচ্ছে হলেও তখন আর কেউ পা থেকে জুতো খুলতে পারবে না। আঠার মতো জুতো লেগে থাকবে পায়ের সঙ্গে। জুতো ছোড়া তো কোন ছাড়। তবে কেউ যদি এক্সট্রা জুতো পকেটে করে নিয়ে আসে তাহলে আলাদা কথা। 

লোকে কথায় কথায় বলে জুতিয়ে লাল করে দেব। জুতোপেটা করব। জুতোখাবি! জুতো চাটাবো। কিন্তু মানুষের মনে জুতো এত নীচে নামল কী করে? রামায়ণে তো আছে ভরত রামের জুতো পেয়ে ধন্য হয়ে ছিলেন। জুতো পুজোই করতেন তিনি। গুপী-বাঘা যে জুতো পরে দেশে-বিদেশে বেড়াতে যেত, সেই জুতো তো ওরা মরে গেলেও ছুড়ে মারবে না কাউকে। জুতো যতক্ষণ শ্রীচরণে, ততক্ষণ ঠিকঠাক। কীরকম? ধরুন দামী জুতো পায়ে আছে। লোকজন তারিফ করছে। অনেকে দাম জানতে চাইছে। কিন্তু যেই সেটা খুলে ছুড়ে মারা হল, অমনি সেটা একটা নিকৃষ্ট জিনিসে পরিণত হল। জুতোর এই এক অদ্ভুত চরিত্র। যতক্ষণ পায়ে, ততক্ষণ ভাল। যেই ছুড়ে মারা, অমনি সেটা কুৎসিত জিনিস। অথচ বলা হয় পৃথিবীর সেরা দু’লাইনের ছোট গল্প এই জুতো নিয়েই- ‘For sale. Baby shoes. Never worn.’

আরও প্রশ্ন আছে। জুতো ছোড়া কি অপরাধ? গুলি ছোড়া, চাকু ছুড়ে মারা, তির ছোড়া অপরাধ। গায়ে না লাগলেও। পাথর ছোড়াও অপরাধ। কাশ্মীরে হলে তো কথাই নেই। চেয়ার, বালতি, পেপার ওয়েট, অ্যাসিড, এসব ছুড়ে মারাও অপরাধ। কিন্তু জুতো ছুড়ে মারা, যদি আঘাত না করে, তাহলে কী করে অপরাধ হয়? অ্যাটেম্পট টু মার্ডার বলা যাবে না। জুতিয়ে লাল করা গেলেও যেতে পারে, জুতিয়ে খুন অসম্ভব। তাছাড়া জুতিয়ে বললে অনেক ক্ষণ ধরে পেটাতে হবে। একবার ছুড়ে মারা এবং যদি আঘাত না করে, তাহলে কোন ধারায় মামলা হবে? প্রকাশ্যে অপমানের চেষ্টা বলা যেতে পারে। তবে ‘অ্যাটেম্পট টু ডিফেম’, এরকম কোনও আইন তো নেই। 

অপজিশনবাবুরা পার্থর দিকে এই জুতো ছোড়ার ঘটনায় বেজায় খুশি। সরকারি দলের মুখপাত্র অবশ্য বলেছেন এই কাজ আইন হাতে নেওয়ার শামিল, শাস্তি একমাত্র আদালতই দিতে পারে। জুতো নয়। তবে এই ঘটনার পর বাঙালির মধ্যে জুতো ছোড়ার প্রবণতা বাড়ছে কিনা জানতে নাকি একটি সমীক্ষা চালাচ্ছে এক নামী কোম্পানি। তাদের বিশ্বাস, এর পর নাকি ছোড়ার জন্য অনলাইনে হালকা অথচ দ্রুতগামী জুতো এবং বিভিন্ন মাপের জুতোর মালার চাহিদা বাড়তে পারে। তবে নেতাদের উপর রাগ বাড়ছে দেখে সরকারও বসে নেই। খুব শিগগিরি নাকি সরকার অনলাইনে ‘থ্রোইং-শু’ বিক্রি বন্ধের জন্য আইন আনতে চলেছে। যদিও সরকার এখনও এর সত্যতা স্বীকার করেনি।

লেখক: শুভাশিস মৈত্র

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Jagannath | রথের রশি নিয়ে টানাটানি, জগন্নাথের আশীর্বাদ কার দিকে? দেখুন সরাসরি
00:00
Video thumbnail
Make In India | লিথিয়াম না সোডিয়াম, কোন ব্যাটারি করবে বাজিমাত?
00:00
Video thumbnail
Poland-Russia | পোল্যান্ড-রাশিয়া সংঘ/র্ষ শুরু তৃতীয় বিশ্বযু/দ্ধ আসন্ন? এবার কী করবে NATO?
00:00
Video thumbnail
NATO | তৃতীয় বিশ্বযু/দ্ধ শুরু হবে কী নিয়ে? জেনে নিন স্পেশাল রিপোর্টে
00:00
Video thumbnail
Donald Trump | পরিস্থিতি হাতের বাইরে, সেনা পাঠিয়েও হচ্ছে না নিয়ন্ত্রণ, এবার কী করবেন ট্রাম্প?
07:03:22
Video thumbnail
বাংলা বলছে (Bangla Bolche) | উত্তরে শক্তি বাড়াচ্ছে তৃণমূল, গড় রক্ষা করতে পারবে বিজেপি? ২৬-এ কী হবে?
01:01:16
Video thumbnail
Colour Bar | সব শেষ, কেঁদেই চলেছেন পূজা
06:32
Video thumbnail
Indian Defence | আকাশ প্রতিরক্ষায় আরও উন্নত ড্রোন আনছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক, কতটা শক্তিশালী এই ড্রোন?
02:39:31
Video thumbnail
Meghalay Update | সোনম কাণ্ডের পর বেফাঁ/স মন্তব্য মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী
04:20
Video thumbnail
Indian Railways | IPL | ভারতীয় রেলে দুই ছবি, জওয়ান বনাম আইপিএল, দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
05:12