২৪জুলাই ১৯৮০,বাঙালি চলচ্চিত্রপ্রেমীদের জীবনে এক চির স্মরণীয় দিন।কারণ সেইদিনই চলে গিয়েছিলেন বাঙালির মহানায়ক উত্তম কুমার।।যাঁর প্রয়াণের পর একদল বাঙালি মনে করেছিলেন বাঙলা ছবির যুগ শেষ।কিন্তু তখন কে জানত আর বছর খানেক পরই হিরো হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবেন টলিপাড়ার নতুন সুপারস্টার। যিনি নিজের কাঁধে চার দশক ধরে এগিয়ে নিয়ে যাবেন ইন্ডাস্ট্রিকে।আর কেউ নন তিনি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়।আজ যে মানুষটার ষাটতম জন্মদিন।ছোট্ট জিজ্ঞাসা ছবিতে বাবা বিশ্বজিতের ছেলের চরিত্রে অভিনয় করে বেশ কয়েক বছর আগেই যিনি পা রেখেছেন স্টুডিওপাড়ায়।প্রথম ছবিতেই সকলের মন জয় করে নিল ছোট্ট প্রসেনজিৎ ওরফে বুম্বার সাবলীল অভিনয়।হিরো হিসেবে প্রথম কাজ দুটি পাতা ছবিতে।বাবা বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় তখন বম্বে ইন্ডাস্ট্রির বড় তারকা।যদিও বুম্বার টলিপাড়ায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথটা মোটেও সহজ ছিল না।একসময় দমদম থেকে টালিগঞ্জ ডেলি প্যাসেঞ্জারি করতেন,তাও আবার পাবলিক বাসে।সেই দিনগুলো কোনওদিন ভুলতে পারেননা টলিপাড়ার নাম্বার ওয়ান।তাই তো আজও কাছের মানুষ ছবির প্রচারে হাসিমুখে উঠে পড়েন বাসে।চারজন অচেনা মানুষের সঙ্গে গা ঘেষাঘেষি করে বসতেও সাবলীল তিনি।স্মৃতিচারণে বারবার উঠে আসে সেই স্ট্রাগলিং দিনগুলোর কথা।যখন প্রতিদিন দমদম টু টালিগঞ্জ যাতায়াত করে জুতোর প্রায় শুকতলা খইয়ে ফেলতেন।কেরিয়ারের শুরুর দিকেই তরুণ মজুমদারের পরিচালনায় কাজ করলেন পথভোলা ছবিতে।মাল্টিস্টারার সেই ছবিতে কে নেই?তাপস পাল তখন কেরিয়ারের তুঙ্গে।সঙ্গে রয়েছেন অভিষেক চট্টোপাধ্যায়,সন্ধ্যা রায়,উৎপল দত্তরা।তারই মাঝে নজরে এলেন প্রসেনজিৎ।এরপর টলিউডের চেনা মুখ হয়ে উঠলেও তখনও নিজের মহিমা দেখানোর তেমন সুযোগ পাননি তিনি।
সালটা ১৯৮৭,মুক্তি পেল অমর সঙ্গী।এরপর,বাকিটা শুধুই ইতিহাস।কেরিয়ারে বড় সাফল্যটা পেলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়।আশা ও ভালোবাসা থেকে ছোট বউ।আমার তুমি থেকে অমর প্রেম, বাঙলা ছবির চকোলেট হিরো ইমেজ মানে তখন বুম্বা ছাড়া আর কারও কথা ভাবাই যায় না।বাঙলা ছবিতে তখন মেইনস্ট্রিম কমার্শিয়াল ছবির রমরমা।এরই মধ্যে অন্যরকম ছবি করছেন পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ।উনিশে এপ্রিল ছবিতে ছোট্ট একটি চরিত্রে প্রসেনজিৎকে অভিনয়ের সুযোগ দিলেন তিনি।আর সেই থেকেই শুরু হল ঋতুপর্ণ ও প্রসেনজিৎ জুটির পথ চলা।দুজনের বন্ধুত্ব ও ছবি নিয়ে আলোচনা করার দিন আজ নয়,তবু প্রসেনজিতের জন্মদিনে তাঁর কেরিয়ার নিয়ে আলোচনায় উৎসব,খেলা,চোখের বালি কিংবা নৌকাডুবি-র মতো ছবির কথা না বললে বোধহয় কিছুই বলা হয় না।কারণ,ঋতুপর্ণ ঘোষ খুঁজে বের করেছিলেন হিরো বা তারকা নয়,অভিনেতা প্রসেনজিৎকে।যাঁকে পরবর্তীকালে সদব্যবহার করেছেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়,কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো পরিচালকরা।নাইনটিজের মাঝামাঝি হিরো মানে তখন একজনই,তিনি প্রসেনজিৎ।চুটিয়ে ছবি করছেন অঞ্জন চৌধুরী,স্বপন সাহারা।ততদিনে এসে গিয়েছেন হরনাথ চক্রবর্তীও।হরনাথের সঙ্গে জুটি বেঁধে বাংলা ছবিতে জোয়ার আনলেন প্রসেনজিৎ।অভিনয় করলেন প্রতিবাদ,শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ,দায় দায়িত্ব-এর মতো ব্লকবাস্টার হিট ছবিতে।২০০৯ থেকেই নিজের অভিনয়ের ধরণ পাল্টালেন বুম্বা।সৃজিতের হাত ধরে অভিনয় করলেন অটোগ্রাফ,বাইশে শ্রাবণ,মিশর রহস্যের মতো সফল ছবিতে।পাশাপাশি কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের কিশোর কুমার জুনিয়র,দৃষ্টিকোণ তারকার কেরিয়ারের অন্যতম সেরা ছবি। ২০০২সালে প্রসেনজিতের না অভিনয় করা ছবি সাথী ছবিতে অভিনয় করেটলিপাড়ায় পা রাখলেন টলিউডের নতুন তারকা জিৎ।বছর খানেকের মধ্যে এসে গেলেন দেবও।বাঙালি দর্শকের কাছে তাঁরা তিন টলি সুপারস্টার যুযুধান প্রতিপক্ষ।যদিও বাস্তবে সম্পর্কটা বন্ধু কিংবা ভাইয়ের চেয়ে কোনও অংশে কম নয়।তাই তো জিতের প্রযোজনায় আয় খুকু আয় ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব লুফে নেন বুম্বা।দেবের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অভিনয় করেছেন কাছের মানুষ ছবিতেও।
একটা সময় প্রসেনজিতের নতুন ছবি মানেই ছিল সিনেমাহলের সামনে লম্বা ভীড় আর বক্সঅফিসে নতুন রেকর্ড।সেটা শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ হোক বা বাইশে শ্রাবণ।বারবার নিজের ক্যারিশ্মা প্রমাণ করে দেখিয়েছেন বুম্বা।আজ ষাট বছর বয়সেও তিনি চিরযুবা।নিজের কাঁধে ইন্ডাস্ট্রিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে যিনি আজও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।অভিনেতা-অভিনেত্রী থেকে টেকনিশিয়ান টলিপাড়ায় যে কোনও সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসেন তিনি।যদিও করোনাকালের পর থেকে সময়টা খুব একটা ভাল যাচ্ছে না টলিউড দ্য ইন্ডাস্ট্রির।দীর্ঘ চার বছরেরও বেশি সময় পর চলতি বছরে মুক্তি পেয়েছে সৃজিতের কাকাবাবু সিরিজের তৃতীয় ছবি কাকাবাবুর প্রত্যাবর্তন।বক্সঅফিসে মোটেও ভাল ফল করেনি ছবি।দিতিপ্রিয়ার সঙ্গে আয় খুকু আয় নিয়ে হাইপ তৈরি হলেও ছবির রোজগার তথৈবচ।অবশেষে শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে দেবের প্রযোজনায় পথিকৃত বসুর ছবি কাছের মানুষ।অনেকদিন পর ফের একসঙ্গে দেখা যাবে টলিউডের দুই সুপারস্টারকে।ছবির সাফল্য নিয়ে আশায় বুক বাঁধছেন অগণিত বুম্বাভক্ত।টলিউডের পাশাপাশি বুম্বাদাকে আপন করে নিয়েছে বলিউড ইন্ডাস্ট্রি।একাধিক ওটিটিতে আসছে তাঁর নতুন ছবি ও ওয়েব সিরিজ।যেখানে অভিনয় করছেন অনেক বলিউড তারকা।আজও নতুন ও ভাল কাজ করার খিদে মেটেনি তাঁর।তাই আজ জন্মদিনে প্রসেনজিতের নামের পাশে বোধহয় লেখাই যায় বুম্বা সিক্সটি নট আউট।