বহরমপুর: দলছুট কংগ্রেস বিধায়ক, সাংসদ ও কর্মী সমর্থকদের দলে ফেরার আহ্বান জানালেন কংগ্রেস সাংসদ তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী (Adhair Ranjan Chowdhury) ।শনিবার বহরমপুরে অধীর বলেন, মুর্শিদাবাদে (Murshidabad) তৃণমূল আগন্তুক। মুর্শিদাবাদ মূলত কংগ্রেসের ঘাটি। এখানে কংগ্রেসের (Congress) বাড়া ভাত খেয়ে গিয়েছে তৃণমূল (TMC)। এখানে তৃণমূল ভয় দেখিয়ে, টাকা পয়সার লোভ দেখিয়ে, পুলিশ, মস্তান দিয়ে জোর করে পুরসভা, জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত দখল করেছে।
অধীর বলেন, তবে মুর্শিদাবাদের মানুষকে বিভ্রান্ত করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর বেশিদিন রাজনীতি করতে পারবেন না। তৃণমূল মোদির দালালি করছে, দিদি-মোদির এই চালাকি সাধারণ মানুষ ধরে ফেলেছে। তাই এসব করে আর বেশিদিন চলবে না। কংগ্রেস নেতা আরও বলেন, মুর্শিদাবাদের অনেক বিধায়ক, সাংসদই কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে চলে গিয়েছেন।অনেক কংগ্রেস সমর্থক ও কর্মী দিদির কথায় প্রভাবিত হয়ে দল ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, এখন তাঁদের অনেকেরই মোহভঙ্গ হয়েছে।ঘরের ছেলেদের ঘরে ফেরার আহ্বান জানাচ্ছি।ঘরের ছেলেরা ঘরে ফিরে আসুক।কংগ্রেস ছাড়া দেশ বাঁচবে না।
মুর্শিদাবাদ জেলায় সাগরদিঘি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে এবার বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী বায়রন বিশ্বাস প্রায় ২৩ হাজার ভোটে জয়ী হন। তিনি ৪৭.৩৫ শতাংশ ভোট পান। সেখানে তৃণমূল প্রার্থী দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় ৩৪.৯৪ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থান দখল করেন। ১৩.৯৪ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজেপি নেমে যায় তৃতীয় স্থানে। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে এই কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী সুব্রত সাহা প্রায় ৫০ হাজার ভোটে জিতেছিলেন। সেবার বিজেপি ঞ্ছিল দ্বিতীয় স্থানে, কংগ্রেস ছিল তৃতীয়। তৃণমূল সরকারের মন্ত্রী সুব্রতর অকাল মৃত্যুতে সাগরদিঘিতে উপনির্বাচন হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না গেলেও সাগরদিঘিতে তৃণমূলের হয়ে প্রচার চালান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সহ একাধিক নেতা, মন্ত্রী, বিধায়ক, সাংসদ। কিন্তু তাতেও তিনবারের জেতা আসন দখলে রাখতে পারেনি রাজ্যের শাসকদল। পঞ্চায়েত ভোটের মুখে সাগরদিঘির এই ফলাফল তৃণমূলের কাছে বড় ধাক্কা।
আরও পড়ুন : Shantanu Banerjee | দিনভর ইডির হানা শান্তনুর গেষ্ট হাউজ, রিসর্ট, বাগান বাড়িতে
সাগরদিঘিতে প্রায় ৬৮ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট রয়েছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, সেই ভোটের বেশকিছুটা অংশ এবার তৃণমূল থেকে বাম- কংগ্রেসে ফিরেছে। কংগ্রেসের দাবি, বিজেপি এবং তৃণমূলের থেকেও তাদের দিকে ভোট এসেছে। যদিও সংখ্যালঘু ভোটে ভাঙনের তত্ত্ব মানতে রাজি নন দলনেত্রী মমতা । শুক্রবারই দলীয় বৈঠকে তিনি বলেন, সংখ্যালঘুরা আমাদের সঙ্গেই আছেন। কারন হিসেবে তাঁর ব্যাখ্যা সুব্রত সাহা তো হিন্দু ছিলেন। তিনি কী করে তিনবার জিতলেন? সাগরদিঘির হার নিয়ে মমতা ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। সেই কমিটি হারের পিছনে দলের অন্তরদন্দকে দায়ী করেছে। সাগরদিঘির ফলাফলে নেত্রী এতটাই ক্ষুব্ধ যে, শুক্রবারের বৈঠকে মুর্শিদাবাদের দুই সাংসদের বিরুদ্ধে অধীরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলার অভিযোগ আনেন।
২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই অধীর শনিবার তৃণমূলে চলে যাওয়া কংগ্রেসের এমপি, এমএলএ-দের ঘরে ফেরার ডাক দিয়েছেন। সাগরদিঘিতে কংগ্রেস প্রার্থীর জয়ের ফলে দলের নেতা-কর্মীরা অনেকটাই চাঙ্গা। একটা সময় মুর্শিদাবাদ জেলা ছিল অধীর তথা কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি। কিন্তু তৃণমূলের দাপটে কংগ্রেসের হাল জেলায় খুবই সঙ্গিন ।সাগরদিঘির ফলাফলের পর হাওয়া কিছুটা ঘুরেছে বলে মত রাজনৈতিক মহলের।
শেয়ার করুন