Thursday, October 16, 2025
HomeScrollFourth Pillar | কোথায় চলেছে দেশ? ইতনা সন্নাটা কিঁউ হ্যায় ভাই?
Fourth Pillar

Fourth Pillar | কোথায় চলেছে দেশ? ইতনা সন্নাটা কিঁউ হ্যায় ভাই?

খোলা চোখেই দেখা যাচ্ছে, আচ্ছে দিন শুধু আদানি, আম্বানির!

জাপানে বৌদ্ধসাধনার একটা বিশেষ ধারা হল ‘জেন’। এরকম শোনা যায় ‘জেন’ কথাটা এসেছে ‘ধ্যান’ থেকে। ‘ধ্যান’ থেকে ‘ঝান’, আর ‘ঝান’ থেকে ‘জেন’। তো এই জেন সাধকদের নিয়ে নানা মজার গল্প চালু আছে গোটা জাপানেই। তারই একটা দিয়ে শুরু করা যাক।

জেন সাধক চলেছেন পাহাড় পেরিয়ে। একফালি পাহাড়ি পথ। তার একদিকে পাহাড়, আর একদিকে খাদ নেমে গিয়েছে সেই পাতালে। সেই পথে চলতে চলতে দাঁড়িয়ে পড়লেন জেন সাধক। দূর থেকে ঘোড়ার ক্ষুরের আওয়াজ ভেসে আসছে। পাহাড় ঘেঁষে সরে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই ঝড়ের মতো এসে পড়ল সেই ঘোড়া। তার পিঠে কোনওরকমে বসে আছে একজন সওয়ার, তাঁকে পিঠে নিয়েই ঘোড়া যখন এগিয়ে যাচ্ছে, জেন সাধক চেঁচিয়ে বললেন, “আরে ভাই ষাচ্ছো কোথায়?”

হ্যাঁ, প্রশ্ন এটাই। ঘোড়ার সওয়ার যাচ্ছে কোথায়? তাঁর গন্তব্যে? নাকি সোজা খাদে? আজকের চতুর্থ স্তম্ভ এই গল্পটা দিয়ে শুরু করতে হল এই কারণেই যে, এই মুহুর্তের সবথেকে বড় প্রশ্ন বোধহয় এটাই যে, দেশ কোথায় যাচ্ছে? আচ্ছে দিনের দিকে? বিকশিত ভারতের দিকে? আচ্ছা, আচ্ছে দিনের আশা কী আর কেউ করে? আপনি করেন? আপনি? আমি তো করি না। কেন না, খোলা চোখেই দেখা যাচ্ছে আচ্ছে দিন শুধু আদানি, আম্বানির। বিকাশ-টিকাশ যা হচ্ছে তাও ওই বানিয়াদেরই হচ্ছে। দেশ তাহলে যাচ্ছে কোথায়?

কখনও এমন হয় যে, প্রশ্নটাই আসলে উত্তর। এই যে বলছি দেশ কোথায় যাচ্ছে, এই প্রশ্নটাই কিন্তু উত্তর। আপনিও জানেন, আমিও জানি, দেশ চলেছে অন্ধকারের দিকে, খাদের পাতালের দিকে। প্রশ্ন এই, কীভাবে যাচ্ছে? এইটুকু জানা কিন্তু সবথেকে জরুরি। কেন না, প্রতিবাদ বা প্রতিরোধের শুরু হবে কিন্তু ওই জানাটুকু থেকেই। একটি মশাল জ্বলতে জ্বলতে জ্বালিয়ে দেবে সহস্রকে। তাহলে আসুন, কী জানা গিয়েছে কতটা জানা গিয়েছে – তাই দিয়েই শুরু করা যাক।

আরও পড়ুন: 

  • (গল্প-১) আদানির নন্দনকানন: আদানির নন্দনকানন হল ভারত। না, ভুল হল। কথাটা হবে নরেন্দ্র মোদির ভারত। হ্যাঁ, নরেন্দ্র মোদির ভারতই আদানির যৌবনের উপবন, বার্ধক্যের বারাণসী – সব। কেন বলছি একথা? না বলে উপায়ই বা কী? এই দেখুন না, মার্কিন এজেন্সি সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বারবার কড়া নেড়েছে ভারত সরকারের দরজায়। মার্কিন কমিশনের বক্তব্য, ২৬৫ মিলিয়ন ডলারের ঘুষ ও জালিয়াতির অভিযোগ আছে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। ২০২৪ সালে ব্রুকলিনের প্রসিকিউটাররা অভিযোগ করেছিলেন, আদানি গ্রুপ ভারতের কিছু সরকারি কর্মকর্তাকে ঘুয দিয়েছিল, যাতে তারা আদানি গ্রিন এনার্জির উৎপাদিত বিদ্যুৎ কেনে। এর পাশাপাশি মার্কিন বিনিয়োগকারীদেরও আদানিরা এই মিথ্যে তথ্য দিয়েছিল যে, তাদের কোম্পানিতে কোনও দুর্নীতি নেই। এই নিয়েই গোলমালের শুরু। কিন্তু হা-হতোস্মি! মার্কিন এজেন্সি সিকিউরিটিস অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন জানিয়েছে, তারা বারবার ভারতের আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছে আদানি গ্রুপের কর্তা গৌতম আদানি ও তার ভাই সাগর আদানিকে সমন পাঠাতে। কিন্তু ভারত সরকার এখনও কিছুই করেনি। ১০ অক্টোবর নিউইয়র্কের আদালতে মার্কিন কমিশন বলেছে, ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে তারা, তবে ভারতের তরফে তবু কোনও উত্তর আসেনি। এবার কমিশন হেগ সার্ভিস কনভেনশন অনুযায়ী আইনি পথেই যা করার করবে। এই তো হল গল্প। যে গল্পে মোদি সরকার যে কোনও ভাবেই আদানিদের বাঁচাতে থাকবে বলে ঠিক করে নিয়েছে। সরকারের আচরণ দেখলে যে কারওই মনে হতে পারে, ইচ্ছে করেই সরকার আদানির বিরুদ্ধে এই মামলাকে ঠেকাতে চাইছে। আর তাছাড়া লক্ষ্য করে দেখুন, অপারেশন সিঁদুর হোক বা আদানি মামলা, বড় কোনও সমস্যা এলেই কিন্তু মুখে কুলুপ এঁটে থাকাটাই মোদি সরকারের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এভাবে আর কতদিন চলবে? অন্ধ হলে কি প্রলয় বন্ধ থাকে!
  • (গল্প-২) প্রতিবাদীর বরবাদি: প্রতিবাদীর নাম, সঞ্জীব চতুর্বেদী। কী করেছেন তিনি? খোদ মোদি সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন। ভাবুন একবার স্পর্ধাটা। কাঁধের উপর তো একটার বেশি মাথা নেই, আর সেই মাথাও তো লোহা দিয়ে বাঁধানো নয়, তবে এত সাহস হয় কী করে? মুশকিল হল কিছু মানুষ এরকম সাহস দেখিয়ে ফেলে। কাল কী হবে, একথা না ভেবে ঝাপিয়ে পড়েন তারা। সঞ্জীব চতুর্বেদী সেই দলেরই লোক। ছিলেন সুখে, ফরেস্ট অফিসার হয়ে। মাঝখান থেকে বিবেকের কিল খেয়ে প্রতিবাদ শুরু করলেন মোদি সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে। ফল হল এই, পরপর ১৬ জন বিচারপতি সঞ্জীবের মামলা নিতে অস্বীকার করলেন। তাঁরা পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, তাঁদের বেঞ্চে এই মামলা তাঁরা নেবেন না। সঞ্জীব চতুর্বেদী অন্য কোনও বেঞ্চে যান। কথা এটা নয় যে, মোদি সরকার দুর্নীতি করেছে। এরকম দুর্নীতির অভিযোগ তো ভুড়ি-ভুড়ি উঠেছে, আরও উঠবে। কথা এই, একটি গণতান্ত্রিক দেশে বিচারপতিরাই যদি এত ভয় পেতে থাকেন, তাহলে সাধারণ মানুষ তবে কার দরজায় যাবে? কাকে এত ভয়? শোলে সিনেমায় ইফতিকার সাহেবের সেই ডায়লগ মনে পড়ে যাচ্ছে, “ইতনা সন্নাটা কিউ হ্যায় ভাই?”
  • (গল্প-৩) বেশ বেশ আরএসএস: কেরলের কোয়াট্টামের বাসিন্দা তথ্য প্রযুক্তি কর্মী ২৬ বছর বয়সী আনন্দু আজিকে তিরুভনন্তপুরমের এক হোটেলে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। গত বৃহস্পতিবার দেহ উদ্ধারের পরেই যুবকের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট প্রকাশ্যে আসে। আর তাতেই শুরু হয়েছে গুরুতর বিতর্ক। প্রয়াত আনন্দু তাঁর সোশ্যাল মিডিয়ায় শেষ যে পোস্ট করেছেন, সেখানে স্পষ্ট ভাযায় আরএসস কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের কথা বলে গিয়েছিলেন। শিশু বয়স থেকেই তিনি সংঘসেবকদের যৌন অত্যাচারের শিকার হতেন। আনন্দু লিখেছেন, বাবার হাত ধরে মাত্র ৮ বছর বয়স থেকে সংঘে যোগ দিয়েছিলাম। আমার এক প্রাক্তন প্রতিবেশি, যিনি সক্রিয় আরএসএস মেম্বার, যার কাছে আমি প্রথম যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছিলাম। পরবর্তীতে বহু আরএসএস কর্মকর্তা আমায় দৈহিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন করে গিয়েছে। সংগঠনের অন্দরেই এসব কাজ চলত। শুধু নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলেই থামেননি আনন্দু। কেন, তিনি আত্মঘাতের পথ বেছে নিয়েছেন, তা বলতে গিয়ে আনন্দু সবাইকে আরএসএস সম্পর্কে সতর্কবার্তাও দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘আমি একা নই। এর আগেও অনেকে সংঘের লালসার শিকার হয়েছেন। ভবিষ্যতে কেউ যাতে সংঘের সান্নিধ্যে না আসে, তাই আমি সবটা জানিয়ে রাখলাম। কেননা লক্ষ লক্ষ যুবক ও শিশু প্রতি বছর আরএসএসের শিবিরে যোগ দেয়।’ বিরোধীরা মুখ খুলেছে এই নিয়ে, কিন্তু তারপর? তার আর পর আছে?

এই যে তিনটে গল্প, এর ভিতরে একটাই প্রশ্ন লুকিয়ে আছে। কোথায় চলেছে দেশ? যে দেশের সরকার পয়সাওয়ালাদের হাজারও অন্যায় চোখ বুজে মাফ করে দেয়, যে দেশের বিচারপতিরা সরকারের বিরুদ্ধে মামলা শুনতে ভয় পেয়ে পিছিয়ে আসে, যে দেশে সরকারের গডফাদার আরএসএসের কর্মীদের বিরুদ্ধে যৌন অত্যাচারের অভিযোগ তুলে আত্মঘাতী হয় এক যুবক- সেই দেশ কোথায় চলেছে? প্রশ্নগুলো সহজ, আর উত্তরও তো জানা।

Read More

Latest News