Wednesday, October 29, 2025
HomeScrollFourth Pillar | SIR কি গণতন্ত্র ও নারীসুরক্ষা ধ্বংসের ষড়যন্ত্র? কী বলছে...
Fourth Pillar

Fourth Pillar | SIR কি গণতন্ত্র ও নারীসুরক্ষা ধ্বংসের ষড়যন্ত্র? কী বলছে তথ্য?

পশ্চিমবঙ্গের সব মতুয়া বা নমশূদ্ররা অনলাইনে নিজের নাম যাচাই বা অভিযোগ জানাতে পারবেন তো?

‘আসি আসি করি অবশেষে/২৮ তারিখ এসেছে সে’। বলছি SIR-এর কথা। বহু টালবাহানার পর, বহু কথার পর, অবশেষে ২৮ তারিখে ঘোষণা হয়ে গেল পশ্চিমবঙ্গ সহ ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন বা SIR-এর সিদ্ধান্ত। এর মধ্যে রয়েছে তামিলনাড়ু, পশ্চিমবঙ্গ ও কেরল, যেখানে আগামী এপ্রিল-মে মাসে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে।

তৃণমূল নেতা ডেরেক ও ব্রায়েন বলেছেন, বিহারের রিহার্সালের পর এবার লক্ষ্য পশ্চিমবঙ্গ। কথাটায় যে কিছু হলেও সত্যি আছে সেকথা তো সকলেই জানেন। কেন না, বিহারে SIR নিয়ে গোলমাল কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট অবধি পৌঁছেছিল। যার ফলে বিহারে আধার কার্ডকে বাতিল করেও শীর্ষ আদালতের নির্দেশে অ্যাড্রেস প্রুফ বলে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে নির্বাচন কমিশন। আর বিহারের মানুষ যে SIR-কে কী চোখে দেখেছে, তার প্রমাণ তো পাওয়াই গেছে রাহুল গান্ধীর ভোটার অধিকার যাত্রায়। তেজস্বী যাদবের মতো রাহুল গান্ধী কিন্তু বিহারের ভূমিপুত্র নন। তারপরেও বিহারে রাহুলের SIR-বিরোধী পদযাত্রায় ভিড় উপচে পড়েছিল।

কী হল বিহারে? হিসেব বলছে, বিহারে বিতর্কিত SIR-এর পর রাজ্যের ভোটার সংখ্যা প্রায় ৬ শতাংশ কমেছে। বাদ পড়েছে ৪৭ লক্ষ ভোটার। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট আগামী ৪ নভেম্বর শুনানি করবে। নির্বাচনের ঠিক দু’দিন আগে। কোনও লাভ হবে কি সেই শুনানিতে? যাক গে সে সব। আসল কথা হল এই, এখনও নির্বাচন কমিশন স্পষ্ট করে জানায়নি কোন কারণে এই ৪৭ লক্ষ ভোটার বাদ পড়েছে। এও জানায়নি, নথি না থাকার কারণে বাদ পড়েছে কারা? নতুন ফর্ম সিক্স দিয়ে ভোটার তালিকায় যুক্তই বা হয়েছে কতজন?

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | কোটি কোটি তছরুপ? সরকার পুরো চুপ

কমিশনের এই রহস্যময় আলো-আঁধারির খেলা কিন্তু ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো নজরে রেখেছে। যে কারণে, SIR ঘোষণার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ডিএমকে শাসিত তামিলনাড়ু এই উদ্যোগকে ষড়যন্ত্র বলে দেগে দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন ২ নভেম্বর এ নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছেন। ডিএমকে ও তার সহযোগীদের বক্তব্য, এত কম সময়ে এত বড় প্রক্রিয়া পরিচালনা করা কঠিন এবং তাড়াহুড়ো করে করাও ঠিক নয়। ডিএমকের পাশাপাশি তৃণমূল, কংগ্রেস, আপ, ও কেরলের সিপিআইএমও কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। SIR-কে ষড়যন্ত্র বলার পাশাপাশি ডিএমকে ও তার সহযোগীরা কিন্তু আরও একটা বড় অভিযোগ তুলেছেন। তা হল, বিহারে SIR-কে ব্যবহার করে মুসলিম ও তপশিলি জাতির পাশাপাশি মহিলাদেরকেও টার্গেট করা হয়েছিল। বিহারে গণতন্ত্র কিন্তু অনেকদিন ধরেই মহিলা ভোটারদের উপর নির্ভরশীল। ২০২০ সালে বিধানসভা নির্বাচনে বিহারে ৫৯.০৭ শতাংশ মহিলারা ভোট দিয়েছিলেন। যেখানে পুরুষ ভোটারদের সংখ্যা ছিল ৫৪.০৬ শতাংশ। ২০২০-এর বিধানসভার আগে আরও দু’টো নির্বাচনেও মহিলা ভোটারদের হার ছিল বেশি। ২৪৩টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসনে মহিলারা পুরুযের তুলনায় বেশি ভোট দিয়েছিল। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনেও বিহারে একই ট্রেন্ড দেখা গিয়েছে। ওই নির্বাচনে মহিলাদের ভোট ছিল ৫৯.৪৫ শতাংশ, এবং পুরুযদের ৫৩ শতাংশ। বোঝাই যাচ্ছে, এসব কোনও হঠাৎ ঘটনা নয়। বিহারের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক কাঠামোয় মহিলারা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন। এই অবস্থায় মেয়েদের ভোটার হিসেবে বাদ পড়া শুধুমাত্র একটা সংখ্যাকেই কমিয়ে দেয় না। সামনে তুলে আনে সেই পুরুষতান্ত্রিক গোষ্ঠীকে, যারা ভোটের হিসেব নিকেশ করে এসেছে আর করছে, যারা মার্জিন পাল্টায়, যারা ভোটের কথা মাথায় রেখে সামাজিক এজেন্ডা তৈরী করে।

SIR-এর গল্পটা কী তবে ঘুরপথে সেই পুরোনো, সামাজিক, বঞ্চনার দিকে এগোচ্ছে?  এরকমটা মনে হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। কেন না, বিহারে জানুয়ারি, ২০২৫ থেকে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ পর্যন্ত যত ভোটার বাদ পড়েছে, তার ৫৯.০৭ শতাংশই নারী। গোপালগঞ্জ, মধুবনী, কিষানগঞ্জ জেলায় মহিলা ভোটারদের বাদ পড়ার হার সবচেয়ে বেশি। এর কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে, বাসস্থান পরিবর্তন, মৃত্যু, ঠিক ঠিক ভাবে ফর্ম ফিলআপ করতে না পারা এইসব। এর একটাও কিন্তু প্রশ্নের বাইরে নয়। বিশ্লেষণ বলছে, মেয়েদের নথিপত্র সংক্রান্ত গোলমালকে ইস্যু করেই বঞ্চনার শিকার বানানো হয় তাঁদের। ২০২২ সালের বিহার জাতগণনা অনুযায়ী, জন্মের নথি, স্কুল সার্টিফিকেট, ম্যারেজ সার্টিফিকেট – এসব নথির মালিকানা মহিলাদের কাছে কম থাকে। শব্দটা খেয়াল করবেন, মালিকানা। অর্থাৎ, বিহারে মহিলাদের নথির মালিক তাঁরা নন, অন্য কেউ। সোজা কথায় পুরুষ। যার ফলে, অটোমেটিক ডুপ্লিকেশন অ্যালগরিদম ভুল ভাবে মেয়েদের ডুপ্লিকেট বলে চিহ্নিত করে দেয়। কম্পিউটারের কাছে লিঙ্গ সংবেদনশীলতা নেই, ভারতের মহিলারা কীভাবে বাঁচে কম্পিউটার তার হিসেব রাখে না। এর সাথে আছে ডিজিটাল বৈষম্য। সোজা কথায় অনেকেই অনলাইনে নিজের নাম যাচাই বা অভিযোগ জানানোর সুযোগই পান না।

এ সব অভিযোগ আর সংশয় সঙ্গে নিয়েই পশ্চিমবঙ্গে লাগু হয়েছে SIR। এখানকার অবস্থাটা বিহারের থেকে একেবারে অন্যরকম, এটা ভাবা কিন্তু বড় ভুল হবে। সরাসরি প্রশ্ন করছি, পশ্চিমবঙ্গের সব মতুয়া বা নমশূদ্ররা অনলাইনে নিজের নাম যাচাই বা অভিযোগ জানাতে পারবেন তো? পশ্চিমবঙ্গের সব সংখ্যালঘুরা পারবেন তো এই ডিজিটাইজেশনকে ব্যবহার করতে? অটোমেটিক ডুপ্লিকেশন অ্যালগরিদমের শিকার হলে কী করবেন এরা? এই প্রশ্নগুলো কিন্তু ভারতের গণতন্ত্র ও নারী সুরক্ষার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। যে বঙ্গ বিজেপির নেতারা এক কোটি বাদ যাবে বলে নেচে বেড়াচ্ছেন, সেই শুভেন্দু-শমীক-সুকান্তদের রাজ্যের মানুষকে নিয়ে আদৌ কোনও মাথাব্যাথা আছে? নিরক্ষর গরীব মানুষ যদি তাঁর ভোটার অধিকার হারান, সেই সংকট বঙ্গ বিজেপির কাছে শুধু একটা সংখ্যা মাত্র, তার বেশি কিছু নয়। কিন্তু কী করবেন সেই বাদ পড়া মানুষটি? অপরাধী জানিল না কী দোষ তাহার, বিচার হইয়া গেল? বিজেপি নেতাদের কাছে এর কোনও উত্তর আছে?

Read More

Latest News