এ রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মোদিজির বিকল্প, মধ্যে বাকিরা কমা, ফুটকি, কোলন, সেমিকোলন, আশ্চর্যবোধক বা জিজ্ঞাসা চিহ্নের বেশি কিছুই নয়। সে আলোচনার শুরুতেই বলে নেওয়া যাক আমি চাই না চাই এখনও যে কোনও অর্থেই সিপিএম এ দেশের বামপন্থার মুখ এবং মুখোশ একসঙ্গেই, কারণ তাঁরা বামপন্থী নন, কিন্তু তাঁদের একটা শক্তপোক্ত বামপন্থী মুখোশ আছে। সিপিএম-এর পরাজয়কে বামপন্থার পরাজয় বলেই মানুষ মনে করেন, সিপিএম-এর শূন্য হয়ে যাওয়াটাকে মানুষ বামপন্থার হার বলে মনে করে। সিপিএম-এর ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা বা সেই চেষ্টার ব্যর্থতাকেও বামপন্থার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা বা ব্যর্থতা বলেই মনে করেন। আর সেই সিপিএম একটা স্লোগান দারুণভাবে রপ্ত করেছে, শোলে ছবির জেলার আসরানির স্লোগান, হম নহি শুধরেঙ্গে, আমি বদলাব না। যে ন্যানো কারখানার চরম ভুল এক সিদ্ধান্ত ওনাদের ঘটিমাটি বিক্রি করে দিয়েছে, খেয়াল করে দেখুন ওনারা এমনকী ২০২৪-এও সিঙ্গুরে সেই কারখানার কথা বলেই চলেছেন, একবারের জন্যও বলছেন না যে সেখান থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে একটা বিশ্ব প্রসিদ্ধ গাড়ির কারখানা, আম্ব্যাসাডর যাদের বিখ্যাত ব্র্যান্ড, সেই কারখানা বন্ধ হল কেন? সেই কারখানাটাকে বাঁচানোর জন্য সিপিএম কী করেছিল? হিন্দমোটরের শ্রমিকদের জিজ্ঞেস করলেই বলে দেবে, তাঁরা কী কী করেছিলেন। তাঁরা বদলাবেন না, গুজব আর মিথ্যে প্রচারের এক উৎসমুখ হয়ে উঠেছেন তাঁরা, কিন্তু তা দিয়ে যে আন্দোলন সম্ভব নয়, আজকের দিনে সেসব মিথ্যে যে ক’ মিনিটের মধ্যে ধরা পড়ে যাবে তাঁরা সেটা বুঝতে চাইবেন না, প্রতিটা বিষয়ে তাঁরা সেই গুজব আর মিথ্যের সাহায্য নেবেন। সত্যি বলতে কি আপাতত সেই বামপন্থীদের এই দেশে মুখোমুখি লড়তে হয় কাদের সঙ্গে?
কেরালাতে তাঁরা আছেন, লড়াই সোজাসুজি কংগ্রেসের সঙ্গে, সেই লড়াইকে তীব্র রূপ দেওয়ার জন্য কেরালার সিপিএম নেতারা কংগ্রেসকে বিজেপির বি টিম বলে। বাংলাতে কার সঙ্গে? ইন ফ্যাক্ট কারও সঙ্গেই নয়, কিছুদিন পরে নোটার সঙ্গেও লড়াই থাকবে না কিন্তু যদি ওনাদের প্রচারের দিকে তাকাই তাহলে সাফ বোঝা যাবে যে ওনাদের লড়াইটা তৃণমূলের সঙ্গে, যে কোনওদিন গণশক্তি খুলে দেখে নিন ৭০-৭৫ শতাংশ রাজনৈতিক খবর তৃণমূলের বিরুদ্ধে, ওদিকে দেশাভিমানি, মালয়ালম সিপিএম মুখপত্র খুলে দেখুন, বেশিরভাগটাই কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লেখা। মানে দেশে ওনাদের লড়াই বিজেপির সঙ্গে নয়, কিন্তু ওনারা সারা দেশে নিজেদের বিজেপির বিরুদ্ধে একমাত্র বিশ্বাসযোগ্য শক্তি হিসেবেই তুলে ধরার চেষ্টা করেন, মুখে বলেন, মাঝেমধ্যে নয়, সর্বত্র তাঁদের লেখাতে থাকে সেই কথা কিন্তু ফলেন পরিচয়তে, কাজের বেলায় তাঁদের বিজেপি বিরোধিতার কোনও জমি নেই, কোনও বাস্তব অবস্থাই নেই। সেই তাঁদের আপাতত টার্গেট মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যে কোনওভাবে সে দেড়শো গ্রাম বীর্যের তত্ত্ব এনে হোক, রাজ্যের আর্থিক উন্নয়নের যাবতীয় তথ্যকে অস্বীকার করেই হোক, ব্যক্তিগত কুৎসা করেই হোক, এমন একটা পর্যায়ে সিপিএম দল এই মমতা বিরোধিতায় নিয়ে গেছে যাকে এক ধরনের সাইকোলজিক্যাল প্যারানয়া বললেও ভুল হবে না, এক ধরনের মানসিক ব্যাধি যা কারও উপরে, কিছুর উপরে প্রবল হিংসেতে ভুগতে থাকে, আর সেই বোধ তাকে ক্রমশ হতাশার দিকে ঠেলে দেয়, প্রত্যেকেই শত্রু, বা এক কল্পিত শত্রুর খোঁজ চলতে থাকে। মাঝেমধ্যেই মনে হয় এই তৃণমূলকে হারাতে পারলে, সরাতে পারলেই কেল্লা ফতে, সামনে যে বিজেপি আছে, তা তাঁদের চোখে পড়ে না, সম্ভবত ওই মানসিক অসুখের জন্যই চোখে পড়ে না। ধরুন মমতা গেলেন অক্সফোর্ডে, সেখানে কেলগ কলেজে বক্তৃতা দেবেন, বিষয় ‘সামাজিক উন্নয়ন: নারী, শিশু ও প্রান্তিক অংশের উন্নয়ন’।
তো এসএফআই সেই সেমিনারে গিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করল। আচ্ছা এর আগে, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে নরেন্দ্র মোদি গেছেন, অস্ট্রেলিয়ার পার্থ-এ ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়াতে গেছেন, কোথাও শুনেছেন সিপিএম বা এসএফআই সেখানে বিক্ষোভ দেখিয়েছে? না, কোথাও নয়, একবারের জন্যও নয়, দেশের মধ্যে তো বাদই দিলাম, কেন? ওনারা আসলেই মনে করেন মোদিজি ততখানি শত্রু নয়, যতখানি শত্রু হলেন এই কালীঘাটের বস্তির এক মহিলা, এই যে হাওয়াই চটি নিয়ে ব্যঙ্গ সেটা বলেই দেয় যে মোদিজির মতো মঁ ব্লাঁ পেন আর কার্টিয়ের-এর রোদচশমা পরা মোদিজিকে তাঁরা ছাড় দিতেই পারেন মমতাকে নয়। কেন? এক কালীঘাটের বস্তি থেকেউঠে আসা মহিলা ওনাদের বাড়াভাতে ছাই ঢেলে দিয়েছে। আর তাই সামনে আরএসএস থাকুক, মোহন ভাগবত থাকুক, মোদিজির ফাসিস্ত রেজিম থাকুক, সিপিএম-এর অর্জুন চক্ষু দেখছে কেবল মাছের চোখ, চোখের মধ্যের ছবিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মোদিজি কেন, একজন বিজেপি উচ্চ নেতৃত্বের সেমিনার, আলোচনা সভা, প্রেস দ্য মিট বা এইরকম অনুষ্ঠানে এসএফআই-কে দেখেছেন, গিয়ে চেল্লামেল্লি করতে? করেননি কারণ তাঁরা ওই ৩৪ বছরের মৌরুসিপাট্টাটা কেড়ে নেয়নি, ঘটিবাটি বিকিয়ে তাদের জন্য রাস্তায় বসতে হয়নি, তাই মমতা হলেন একমাত্র শত্রু। অন্যদিকে মমতা, হ্যাঁ, ২০১১-তে এ রাজ্যের বাম সরকার, সিপিএম সরকারকে সরানোর জন্য তিনি কোনও উপায় বাদ রাখেননি, এমনকী বিজেপির হাত ধরেছেন, বুঝেছেন ওই রাস্তায় হবে না, কংগ্রেসের হাত ধরেছেন কারণ সিপিএম ওই সেই সুযোগ ওনার হাতে তুলে দিয়েছিল, পরমাণু চুক্তি খায় না মাথায় দেয় না বুঝেই কংগ্রেসের সরকার ফেলে দেওয়ার, বা বলা যাক নিজের শক্তিকে ওভার এস্টিমেট করে সেদিন কংগ্রেসকে হারাতে গিয়ে নিজেরাই হেরেছেন, কিন্তু ২০১৪ সালে মোদি রাজত্ব শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মমতা তাঁর ফোকাস বদলে নেন, সিপিএম শেষ, তিনি বুঝেছিলেন বিজেপির সঙ্গেই লড়তে হবে, আর বিজেপিও বুঝেছিল এ রাজ্যে সিপিএম শেষ, তৃণমূলের সঙ্গেই লড়তে হবে। তারপর থেকে এ বাংলার লড়াই বিজেপি আর তৃণমূলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ, এই বাইনারি থেকে বের হতে গেলে হয় গোটা দেশে বিজেপির এক চরম পরাজয় প্রয়োজন না হলে এ বাইনারি সহজে ভাঙবে না। তৃণমূল যদি কোনওদিনও হারে, তাহলে ক্ষমতায় আসবে বিজেপি, অতি মূর্খের কল্পনাতেও সেখানে সিপিএম আসার কোনও খোয়াবনামা নেই।
আরও পড়ুন: Fourth Pillar | মোদি–আরএসএস, এক স্বৈরতন্ত্রী দানবের চেহারা নিয়েছে
তাহলে এ রাজ্যে সিপিএম কী করতে পারত? একটা কনস্ট্রাকটিভ বিরোধী হয়ে নিজেদের সংগঠন আর আদর্শকে ধরে রাখতে পারত, তৈরি করতে পারত সেই মুহূর্তের জন্য যখন বিজেপি ক্ষমতায় আসবে, সেদিন বাইনারিটা বিজেপি সিপিএম করা যায় কি না তার প্রস্তুতি নিতে পারত। এই মুহূর্তে তৃণমূলের দুর্নীতির বিরোধিতা, তৃণমূলের ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থানের সমর্থন করা, মানুষের দৈনন্দিন সুবিধে অসুবিধে নিয়ে মানুষের সঙ্গে থাকা, এটাই করতে পারত। কিন্তু না, তাঁদের ওই মানসিক অসুখ থেকে বার হয়ে আসার না আছে ইচ্ছে না ক্ষমতা। কাজেই তাঁরা শর্টকার্ট পদ্ধতিটা বেছে নিয়েছেন। সেই পদ্ধতি হল কোনও একটা ইস্যু বের করে তাকে ম্যাগনিফাই করার জন্য মিথ্যে ফেক এলিমেন্ট জুড়তে থাকো। মানে ধরুন, এই যে আরজি কর ধর্ষণ আর হত্যা, এই ইস্যুটা এমনিতেই কি ছোট কিছু? আমাদের মহানগরের প্রাণকেন্দ্রে এক মহিলা ডাক্তারকে তার কর্মস্থলে ধর্ষিতা হতে হয়েছে, তাঁকে খুন করা হয়েছে। মমতা ব্যানার্জি বিরোধী থাকাকালীন এরকম একটা ইস্যুই যথেষ্ট ছিল, সারা রাজ্য স্তব্ধ হয়ে যেত, কিন্তু না, ওনাদের মনে হল এটাকে আরও ম্যাগনিফাই করতে হবে, এক্কেবারে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ আর পালাবদল। আর তারজন্য বিকাশ ভট্টাচার্য থেকে পাড়ার খোকন, মিথ্যের পর মিথ্যে, মিথ্যের পর মিথ্যে জুড়ে দিতে থাকল। আর কিছুদিন পর থেকেই সেই মিথ্যেগুলো একের পর এক বেলুনের মতো ফাটতে শুরু করল। এতগুলো মিথ্যে দেখে শুনে মানুষের ধারণা হল সবটাই এক রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছাড়া কিছুই নয় আর সেই হতাশার মধ্যে আসল ইস্যু, জরুরি ইস্যুগুলো হারিয়ে গেল। মমতা ২০১৯-এ লোকসভা লড়েছেন, অনেকগুলো আসন বিজেপি পেয়েছে, তারপরে দেখুন রিকভারি কাকে বলে, ২০২১, তাক লাগিয়ে দিয়েছেন, হ্যাঁ নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহের মুখোমুখি এ রাজ্যে কে ছিলেন? মমতা। গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ মানুষ আর আরএসএস বিজেপির মধ্যে এক প্রকাণ্ড দেওয়াল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
২০২৪, আবার, সেই একইভাবে আরও বেশি আসনে জয়। হ্যাঁ বাংলা থেকে ৪২ জন সাংসদ দিল্লি কাঁপাচ্ছে, গত কয়েক মাসের মধ্যে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, সাকেত গোখলে, ডেরেক ও’ব্রায়েন, মহুয়া মৈত্রদের সংসদে ভাষণ শুনুন, চোখে চোখ রেখে বিরোধিতা চলছে, কে নোটবন্দির প্রথম বিরোধিতা করেছে? কে কাশ্মীরে ৩৭৭-এর বিরোধিতা করেছে? কে রাম জন্মভূমি উদ্বোধনের দিনে শহরে সব ধর্মের মানুষদের নিয়ে মিছিল করেছে? কে নির্বাচন কমিশনকে বলতে বাধ্য করল যে ভোটার তালিকাতে সত্যি গন্ডগোল আছে? আমরা গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ মানুষেরা বুঝতে পারছি, হাজার একটা দুর্নীতির অভিযোগ, কিছু ক্ষেত্রে অগণতান্ত্রিক কিছু সিদ্ধান্তের পরেও দেশ জোড়া ফাসিস্ত শাসনের বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পুরোভাগে আছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সিপিএম? মমতা বিলেতে গেছেন, আমরা সব্বাই জানি এসব অপটিক্স-এর ব্যাপার, নেতানেত্রীরা বিলেত বিদেশ যান, তা অস্বাভাবিক কিছুই নয় আর তা দিয়ে এক্কেরে বিশাল রাজভোগ বৃষ্টি শুরু হবে তাও নয়। এ আমরা জানি। ফি বচ্ছর জ্যোতি বসু যেতেন, বউ ছেলে, ছেলের বউকে নিয়েই যেতেন, ফি মাস নরেন্দ্র মোদি যান, মমতা তো তবু সেই তালিকার এক্কেবারে তলায়, সেই কবে গিয়েছিলেন, সেবারেও সাংবাদিকেরা সঙ্গে ছিল, তাঁর সঙ্গে গলা মিলিয়েছিল, আমি যে গান গেয়েছিলেম ইত্যাদি, তো তাঁদের একজনকে জেলে পুরেছিল মোদি সরকার, উনিই সেই সাদার মধ্যে কালো ভেড়াটি, যিনি সাংবাদিকতার শীর্ষ দেখেছেন আবার চুরির দায়ে জেলেও গেছেন। তো যাই হোক, সেও তো বছর তিনেক আগের কথা। তো এবারেও মমতা বিদেশে গেছেন। যাওয়ার আগেই সিপিএম মুখপত্রে জানাল যে ওনাকে কেউ ডাকেইনি, অক্সফোর্ডে মমতা, ছ্যাঃ ছ্যাঃ, এই খবর কীভাবে সিপিএমকে জনগণতান্ত্রিক বিপ্লবের দিকে এক পা এগিয়ে দেবে জানি না কিন্তু এই খবর ছেপে আসলে তেনারা ওই সেই পুরনো গায়ের ঝাল ঝাড়ার চেষ্টা করলেন। সে প্রচেষ্টা মাঠে মারা গেল। এবারে সেই সিপিএম লন্ডন থেকেই অপারেশন মমতা শুরু করে দিলেন, কে বা কাহারা আরজি কর প্রাক্তনী সংগঠনের নামে এক বিশাল চিঠিতে মমতা যে কত অগণতান্ত্রিক তা বুঝিয়ে অনুরোধ করলেন কেলগ কলেজে তাঁর ওই বক্তৃতা যেন বন্ধ করা হয়। মানে মমতার সেমিনার বন্ধ করলেই তো ওই জনগণতান্ত্রিক বিপ্লব মাইলখানেক এগিয়ে আসবে, তাই এই অনুরোধ।
তো অমন উড়ো চিঠিতে এখন বিয়েও ভাঙে না, এমন এক বিখ্যাত রাজনৈতিক নেতার সেমিনার কি ভাঙা যায়? কিন্তু ওই আরজি কর প্রাক্তনীদের অনেকেই সাফ জানিয়ে দিল যে এ কাজ তাঁদের নয়, আবার মুখ পুড়ল। আসলে মমতা শুনলেই সিপিএম-এর ছোট সেজ মেজ বড় নেতাদের পালস রেট বেড়ে যাচ্ছে, রক্তের চাপ অনুভব করছেন, কারও কারও পুরনো কলিক পেইন ফিরে আসছে, সঙ্গে রক্ত আমাশা। সবটাই এক অসম্ভব মমতা ঘৃণা থেকে জন্ম নেওয়া এই অসূয়া আমরা বার বার দেখছি। আর তারপরেই আমরা দেখলাম তাঁরা সেই কেলগ কলেজের সেমিনারেই হাজির। এবং এক অসভ্যতা, সেমিনার চলতে দেব না। একটা সেমিনারে মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে দেওয়া হচ্ছে না, ওটা তো কোনও আলোচনা সভা ছিল না, উনি বলবেন, অন্যরা শুনবেন, শেষে দুজন ওনার সঙ্গে এই বিষয় নিয়ে কথা বলবেন, এই তো ছিল কর্মসূচি, সেখানে ঝামেলা করাটা অসভ্যতামো নয়? এবারে তার প্রতিক্রিয়া সারা রাজ্যজুড়ে দেখা যাবেই, কী বলবেন তখন? এখনও বচাখুচা দেড় দু’ পিস নাট্যকারের নাটক চলাকালীন যদি তৃণমূল কর্মীরা ঠিক যা যা অক্সফোর্ডের সভাতে করা হয়েছে সেটাই করেন? এখনও লিস্টে থাকা দু’ একজন গায়কের অনুষ্ঠানে যদি এটাই হয়? বা ধরুন আপনাদের দলের সেমিনারে, সম্মেলনে? সেখানে ঢুকে যদি ঠিক এটাই করা হয়? শান্তিপূর্ণভাবেই করা হয়, বলতে দেব না, গাইতে দেব না, সম্মেলন চলতে দেব না, তাহলে কী বলবেন? তখন মানবাধিকারের কথা তুলবেন তো? সেই কান্না শোনানোর লোক পাবেন কমরেডসরা? এই বাঁদরামো আমরা বজরং দলের দেখেছি, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের দেখেছি, যোগেন্দ্র যাদবের মুখে কালি মাখাতে দেখেছি, স্বামী অগ্নিবেশের সভা ভন্ডুল করতে দেখেছি। এসএফআই কি নিজেদের সেই উচ্চতায় নিয়ে যেতে চায়? জনবিচ্ছিন্ন এক দল রাজ্যের ৪০টা লোকসভাতে জামানত পর্যন্ত বাঁচাতে পারে না, এক দল যে মাত্র ২০১১-র মার্চ মাসেও বিধানসভায় ২৩৫ জন বিধায়ক নিয়ে গর্ব করত, তারা আজ শূন্য, আ বিগ জিরো। কিন্তু এই জনবিচ্ছিন্নতার কারণ না খুঁজে তাঁরা কেবল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই তাঁদের শত্রু ধরে নিয়েই রাজনীতিটা করে যাচ্ছেন, এরফলে আগের করা ভুল ভ্রান্তিগুলো তারা বুঝতেও পারছেন না, ঠিক করে নেওয়া তো দূরের কথা। এবং যত দিন যাচ্ছে ততই আরও বেশি করে জনবিচ্ছিন্নতার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হতাশাও বাড়ছে। আজ এই মুহূর্তে এই বাংলাতে কেন গোটা ভারতবর্ষেও মোদিজির বিরুদ্ধে চোখে চোখ রেখে লড়াইটা চালাতে পারেন একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, এই বাস্তবতাকে স্বীকার করে নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।