নদিয়া: নীল রঙের আকাশ উঁকি দিচ্ছে পেঁজা তুলোর মতো মেঘেরা। মনে করাচ্ছে পুজো একেবারে দোরগোড়ায়। শান্তিপুরের (Nadia Shantipur) ৫০০ বছরের প্রাচীন বনেদি রায়বাড়ির (Shantipur Roy Bari Durga Puja ) দুর্গাপুজো (Shantipur Roy Bari Kulo Mata 500 Years)। লোকমুখে শোনা যায়, স্বপ্নাদেশ পাওয়ার পরে এখানে মা দুর্গার পুজো শুরু হয়েছিল। প্রথমে কুলোতে ছবি এঁকে মায়ের আরাধনা শুরু হওয়ায় মা দুর্গা এখানে কুলো মাতা নামে পূজিত হন। শান্তিপুরের বনেদি রায় বাড়ির কুলো মাতার (Kulo Mata 500 Years) ইতিহাস শুনলে আজও গায়ে কাঁটা দেবে।
লাল পেড়ে সাদা শাড়ি পরিহিত নারী রূপে দেবী এসেছিলেন তার সন্তানদের হাতে তৃষ্ণা মেটাতে। চেয়েছিলেন গঙ্গাজল। বাড়ির কর্তা-মা একটু ধৈর্য ধরার কথা বলতেই নিমেষে অদৃশ্য হয়ে যান দেবী। তার কয়েকদিনের মধ্যেই রায় বাড়ির কর্তা-মা স্বপ্নাদেশ পান দেবীকে আরাধনা করার। কিন্তু হাতে সময় কম, কয়েক দিনের মধ্যে দুর্গাপুজো। কিভাবে পুজো করবেন সেই কথা স্বপ্নের মধ্যে দেবীকে বলতেই দেবী নির্দেশ দেন কুলোতে ছবি এঁকে তার আরাধনা করার জন্য। সেই থেকেই প্রায় ৫০০ বছরের প্রাচীন প্রথা মেনে নদিয়ার শান্তিপুরের জমিদার বংশ রায় বাড়িতে পূজিত হয়ে আসছে এই কুলো-মাতা। বৈষ্ণব মতে পূজিত হয় দেবী মহিষমর্দিনী। দেবী মূর্তিতে রয়েছে নানান বৈশিষ্ট্য, যেহেতু রায় বাড়িতে দেবী যখন দেখা দিয়েছিলেন তখন ছিলেন না সন্তানেরা, তাই মহিষাসুর সিংহ বাহিনী ও দশভূজাকে একই চালায় পূজিত করা হয়।
এই বনেদি রায় বাড়ির মন্দিরটি আটচালা বৈশিষ্ট্য, যা নদিয়া জেলায় প্রায় বিলুপ্ত। একমাত্র রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের রাজবাড়ীতে আট চালার মন্দির রয়েছে। পঞ্চমী থেকে নবমী পর্যন্ত দেবী আরাধনায় রয়েছে আরও নানান বৈশিষ্ট্য, কাঁচা-পাকা ভোগ নিবেদন করা হয় কুলো-মাতাকে। অসুর সংহারে দেবীর দশ হাতে অস্ত্র থাকলেও রয়েছে তরবারি। বর্তমান রায় বাড়ির বংশধর এর কথায়, একটা সময় জমিদারি প্রায় ধ্বংসের পথে চলে যায়। স্বপ্নাদেশর পর এই রায় বাড়িতে শুরু হয় কুলোতে দেবীর আরাধনা। তারপর সময়ের পরিবর্তনে নির্মিত হয় মন্দির। এরপর দেবী মূর্তিতে পরিণত হয়। এখন থেকে প্রায় ৫০০ বছর আগের ইতিহাস এখনও প্রসিদ্ধ এই বনেদি রায় বাড়িতে। কুলো-মাতা অত্যন্ত জাগ্রত। প্রত্যেক ভক্তদের মনস্কামনা পূর্ণ করে থাকেন তিনি। দেবীর কাছে প্রার্থনা করার পর অনেকেই লাভ করেছেন সন্তান। ফিরে এসছে পরিবারের সচ্ছলতা।
আরও পড়ুন: রোমহর্ষক ইতিহাস, বেলজিয়ামের ঝাড়বাতি ও বাঁকুড়ার প্রাচীন পুজো
প্রত্যেক বছর এইরায় বাড়ির কুলো-মাতার আরাধনায় এখনও ছুটে আসেন অসংখ্য ভক্ত। বর্তমানে এই রায় বাড়ির মন্দির সংলগ্ন বাসভবন অতি প্রাচীন হওয়ার কারণে খসে পড়ছে ইটের অংশ । একাধিক বংশধর কর্মসূত্রে রয়েছেন। ছড়িয়ে ছিটিয়ে। কিন্তু কুলো-মাতার আরাধনায় ব্রতী হতে পুজোর সময় একত্রিত হন সকলেই। যে যেখানেই থাকুন পুজোর সময় ঘরে ফেরেন। পুজোর দিনগুলিতে উৎসব মুখর হয়ে ওঠে রায় বাড়ি । আত্মীয়-স্বজনের উপস্থিতিতে গমগম করে পুজো প্রাঙ্গণ। কাজের ব্যস্ততায় সারা বছর দেখা মেলে না কারোর। পুজোর দিনগুলিতে সকলে একত্রিত হয়ে এক মেলবন্ধনের আবহ তৈরি হয় রায় বাড়ি জুড়ে। পুজোর পাঁচটা দিনে আনন্দে উদ্ভাসিত হয় শান্তিপুরের রায় বাড়ি । বর্তমান রায় বাড়ির বংশধর উজ্জ্বল কুমার রায়ের কথায়, একটা সময়ে জমিদারি প্রায় ধ্বংসের পথে চলে গিয়েছিল। স্বপ্নাদেশের পরে রায় বাড়ির কুলোতে দেবীর আরাধনা শুরু হয়। তার পরে ধীরে ধীরে মন্দির নির্মাণ করা হয়। এর পরে দেবী মূর্তি তৈরি করে তাতে পুজো করা হয়। তবে মূর্তির পাশাপাশি কুলোতেও মা-র পুজো করা হয়।
দেবী আরাধনা আড়ম্বরপূর্ণ নয়, প্রাচীন প্রথা অনুযায়ী অনাড়ম্বরে পূজিত হন দেবী কুলো-মাতা। নবমীতে হয় আস মুখ, দশমীতে বাড়ির কর্তা-মা স্বপ্নাদেশ পান দেবীকে আরাধনা করার । কিন্তু হাতে সময় কম, কয়েক দিনের মধ্যে দুর্গাপুজো। কিভাবে পুজো করবেন সেই কথা স্বপ্নের মধ্যে দেবীকে বলতেই দেবী নির্দেশ দেন। কুলোতে ছবি এঁকে তার আরাধনা করার জন্য। সেই থেকেই প্রায় ৫০০ বছরের প্রাচীন প্রথা মেনে নদিয়ার শান্তিপুরের জমিদার বংশ রায় বাড়িতে পূজিত হয়ে আসছে এই কুলো-মাতা। বৈষ্ণব মতে পূজিত হয় দেবী মহিষমর্দিনী। দেবী মূর্তিতে রয়েছে নানান বৈশিষ্ট্য, যেহেতু রায় বাড়িতে দেবী যখন দেখা দিয়েছিলেন তখন ছিলেন না সন্তানেরা, তাই মহিষাসুর সিংহ বাহিনী ও দশভূজাকে একই চালায় পূজিত করা হয়। এই বনেদি রায় বাড়ির মন্দিরটি আটচালা বৈশিষ্ট্য, যা নদিয়া জেলায় প্রায় বিলুপ্ত। নবমীতে হয় আঁশমুখ। দেবীকে পায়েস নিবেদন করে নিয়ে যাওয়া হয় নিরঞ্জনের উদ্দেশ্যে। এক কথায় নদিয়ার শান্তিপুরের বনেদি রায় বাড়ির কুলো-মাতার কাহিনী রয়েছে রায় বাড়ির হৃদয় ছুঁয়ে।
অন্য খবর দেখুন