পূর্ব বর্ধমান: জমিদারি প্রথা আজ অতীত। তবে সেই জমিদারি রীতি আর ঐতিহ্যকে বুকে ধরে এখনও পুজো হয়ে আসছে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লকের দুটি গ্রাম, পাড়াতল ও রঙ্কিনী মৌলায়। প্রায় ১০০ বছরেরও বেশি পুরনো এই পুজোতে প্রাচীন রীতি মেনেই অষ্টমীর দিন ‘হাকের ডাকে’ ও ‘খানের চোটে’ শুরু হয় এখানকার পুজো। এই প্রথা যেন আজও গ্রামবাসীদের কাছে পুরনো দিনের এক জীবন্ত ইতিহাস।
প্রথা মেনে ‘হাকের ডাক’ এই দুই গ্রামে দুর্গাপুজোর অষ্টমী তিথিতে এক বিশেষ মেজাজ নিয়ে আসে। জমিদার না থাকলেও, জমিদারি আমলের জৌলুস আর নিয়ম নিষ্ঠার এতটুকুও পরিবর্তন হয়নি। বছরের পর বছর ধরে অষ্টমীর দিন এক বিশেষ শব্দে ধ্বনিত হয় আকাশ-বাতাস। এই শব্দই এখানকার পুজোর বিশেষত্ব, যার নাম ‘হাকের ডাক’ বা ‘খানের চোট’। এই প্রাচীন প্রথা মেনেই শুরু হয় দেবীর আরাধনা। চলে বিশেষ পুজো এবং বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান। জমিদারি চলে গেলেও, এই রীতি আজও গ্রামের মানুষ পরম যত্নে বাঁচিয়ে রেখেছেন।
আরও পড়ুন: রেলপথে জুড়ছে ভারত-ভুটান, ঘোষণা কেন্দ্রের
অন্যদিকে, জামালপুর ব্লকেরই আর এক গ্রাম চকদিঘী। এখানেই রয়েছে ইতিহাসের সাক্ষী সিংহ রায় জমিদার বাড়ি। প্রায় ৩০০ বছরেরও বেশি পুরনো এই জমিদার বাড়িটি একসময় এই এলাকার অন্যতম ক্ষমতাশালী জমিদারী ছিল। ঐতিহ্যবাহী এই বাড়িতেও সাত পুরুষের দুর্গাপুজো আজও সমান জাঁকজমকের সঙ্গে পালিত হয়। এই জমিদার বাড়ির পুজো দেখতে আজও বহু মানুষ ভিড় জমান, যা প্রমাণ করে দেয় যে জমিদারি প্রথা হয়তো বিলুপ্ত। কিন্তু তার সংস্কৃতি আর ঐতিহ্য এখনও বাংলার মানুষের হৃদয়ে অক্ষুণ্ণ। পাড়াতল, রঙ্কিনী মৌলা এবং চকদিঘীর এই পুজো প্রমাণ করে পরিবর্তনশীল সময়েও বাংলার সংস্কৃতি আর ঐতিহ্য তার নিজস্ব মহিমায় জ্বলজ্বল করছে।
দেখুন অন্য খবর