Thursday, October 16, 2025
HomeScrollAajke | তৃণমূলের বিজয়া সম্মেলন, বিরোধীদের বিসর্জন?
Aajke

Aajke | তৃণমূলের বিজয়া সম্মেলন, বিরোধীদের বিসর্জন?

এই তো সেদিনের কথা। পশ্চিমবঙ্গে এসে মোদিজি কী বললেন?

এবারের মতো শেষ হয়েছে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো। বিসর্জনের সিঁদুরে গঙ্গার জল লাল করে কৈলাসে ফিরেছেন মা। কিন্তু, বারোমাসে তেরো পার্বণের বাঙালি, তার উৎসব কি এত তাড়াতাড়ি শেষ হয়? আর সেই তেরো পার্বণের ভিতরে রাজনীতিও যে মিশে গেছে তাতেও তো কোনও সন্দেহ নেই। হ্যাঁ, রাজনীতি বাঙালির অন্যতম উৎসব। প্রতিবাদে-প্রতিরোধে বাঙালি এই উৎসব পালন করেছে আর করে চলেছে এখনও। আর সেই উৎসবেরই ঢেউ লাগল তৃণমূলের অন্দরে। কীসের উৎসব? কেমন উৎসব? বেশ তবে খুলে বলা যাক।

ফুলবদলের ঢেউ উঠেছে বাংলাতে। তৃণমূলের নিশান বিরোধীর হাতে। হ্যাঁ, সোনারপুর থেকে ঝাড়গ্রাম, গড়বেতা- সব জায়গায় একই ছবি। তৃণমূলের বিজয়া সম্মেলনীতে পরিবারের লোকজন নিয়ে হাজির হচ্ছেন সিপিএম বা বিজেপির মতো বিরোধীরা, হাতে তুলে নিচ্ছেন ঘাসফুলের পতাকা। ২৬-এর ভোটের আগেই এই ধস নেমেছে বাংলার বিরোধী শিবিরে। কী করে হচ্ছে? সোজা উত্তর, মমতা-ম্যাজিক। আর সেই জাদুর রহস্য তো কোনও ম্যাজিশিয়ানই খুলে বলেন না। খালি চোখের সামনে ঘটে যায় ইন্দ্রজাল। ঠিক এই ম্যাজিকটাই এই মুহূর্তে ঘটে চলেছে বাংলার রাজনীতিতে।

সোনারপুর দিয়েই শুরু করা যাক। এখানকার প্রতাপনগর পঞ্চায়েতে বিজেপি সদস্য কার্তিক সর্দার আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসে। রাজপুর রবীন্দ্রভবনে তৃণমূলের বিজয়া সম্মেলনীর মঞ্চেই হাতে ঘাসফুলের পতাকা তুলে দিয়ে স্বাগত জানানো হয় কার্তিকবাবুকে। সোনারপুর দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক লাভলি মৈত্র উপস্থিত ছিলেন সেই অনুষ্ঠানে। কিন্তু প্রশ্ন এই, কার্তিকবাবু বিজেপি ছাড়লেন কেন? তাঁর নিজের কথায়, এলাকা উন্নয়নের স্বার্থে শেষ পর্যন্ত তৃণমূলেই ভরসা রাখছেন তিনি। ঝাড়গ্রামের ছবিটা তো আরও উৎসবমুখর। সোজা কথায় ঝাড়গ্রামে তছনছ হয়ে যাচ্ছে গেরুয়া শিবির। এখানে তৃণমূলের বিজয়া সম্মেলনী ও গুণিজন সম্বর্ধনার অনুষ্ঠানে দলে দলে বিজেপি নেতাকর্মীদের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। মেদিনীপুরের গড়বেতাতেও একই ছবি। প্রায় দেড়শো জন বিজেপির কর্মী সমর্থক যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। দলবদলের এই তরঙ্গ রোধিবে কে? কথা বলব এই নিয়ে কিন্তু তার আগে আসুন গোটা ব্যাপারটা একবার ভালো করে দেখে নেওয়া যাক।

আরও পড়ুন: Aajke | ধর্ষণের অভিযোগ এলেই, বুউউউম, এনকাউন্টার?

দেখলেন তো? অবস্থা যা দাঁড়াচ্ছে তাতে একথা বলাই যায়, ২৬-এর বিধানসভায় এই বাংলা ঢেকে দেবে ঘাসফুল। কথায় বলে ওস্তাদের মার শেষ রাতে। আর সেটাই করে দেখালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর জাদুকাঠির ছোঁয়ায় হাজারও বিরোধীর ভিড় এখন তৃণমূলে। কিন্তু এই ঘটনা ঘটাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্ত করল কারা? সোজা উত্তর, বিরোধীরাই। দেখুন, সিপিএমের কথা বলে এখানে সময় নষ্ট করতে চাইছি না। কেন না, বাংলার মাঠেঘাটে, চা দোকানে, চণ্ডীমণ্ডপে এ খবর কিন্তু রটে গেছে যে, ভূতেরও ভবিষ্যত আছে কিন্তু সিপিএমের কোনও ভবিষ্যত নেই। শুধু ভবিষ্যত নয়, হাল ধরার মতো নেতৃত্বও কি আছে? দেখুন না, বিমান বোসকে এই বয়সেও রাস্তায় নেমে চাঁদা তুলতে হচ্ছে। একটা ঠিকঠাক কৌটো নাড়ানোর মতো নেতাও নেই সিপিএমে। কাজেই সিপিএমের কথা থাক। বরং বিজেপিকে নিয়ে একটু মাথা ঘামালে লাভ আছে।

এই তো সেদিনের কথা। পশ্চিমবঙ্গে এসে মোদিজি কী বললেন? বললেন, বিজেপির উন্নয়ন দেখে মানুষ আর তৃণমূলকে চাইছে না। এখন মোদিজি তাঁর ভাষণে যা বলেন, তার সবটা তো আর নিজে ভেবেচিন্তে বলেন না। অত সময়ই বা কোথায়? আর তাই, মোদিজির ভাষণ সাজিয়ে দেওয়ার লোক থাকে, লোক থাকে তথ্য জোগানোরও। এখন কথা হল, পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে মোদিজিকে তথ্য জোগাচ্ছে কারা? জোগাচ্ছে এখানকার নেতারাই। অর্থাৎ, শমীক-শুভেন্দু-সুকান্তরা। কিন্তু মোদিজি কি ভুলে গেছেন, এই বঙ্গবিজেপিই এর আগে কি তথ্য পাঠিয়েছিল বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে? বলেছিল বুথে বুথে সৈন্য প্রস্তুত। খোঁজখবর নিয়ে কী জানা গেল? সেই সব সৈন্যদের অনেকে জানেই না, তাদের নাম লিস্টিতে ঢুকিয়ে দিল্লি পাঠিয়েছেন বঙ্গনেতৃত্ব। এমনকী তৃণমূল কর্মীকেও চালিয়ে দেওয়া হয়েছে বিজেপির সৈন্য বলে। এই তথ্য জানার পরেও কিন্তু মোদিজি বললেন, বিজেপির উন্নয়ন দেখে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ এবার দলবদলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। হ্যাঁ, এইটুকু কিন্তু মোদিজি ঠিক বলেছেন। বিজেপির উন্নয়ন দেখে দলে দলে মানুষ এখন তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন। সবথেকে বড় ঢল নেমেছে জঙ্গলমহলে। টানা দু’দিন ধরে তৃণমূলের বিজয়া সম্মেলনীতে শয়ে শয়ে বিজেপি কর্মীরা যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। যে ঘটনা ঘিরে স্বাভাবিক ভাবে উচ্ছ্বসিত শাসক শিবির। ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুরের তপসিয়ায় তৃণমূলের বিজয়া সম্মেলনীর মঞ্চে প্রায় পঞ্চাশটি পরিবারের ৭৫ জন মানুষ নিশান উড়িয়েছেন তৃণমূলের। তাহলে ব্যাপারটা কী দাঁড়াল? তৃণমূলের বিজয়া সম্মেলন, বিরোধীদের বিসর্জন? মমতার কামব্যাক তাহলে নিশ্চিত? আসুন দেখে নিই এই নিয়ে মানুষ কী বলছে?

তাহলে ব্যাপারটা কী দাঁড়াল? সেকথা তো স্বামী বিবেকানন্দ কবেই বলে গিয়েছেন- খালি পেটে ধর্ম হয় না। আজ শুভেন্দু অধিকারী যতই বলুন না কেন ভাতের থেকে জাত বড়, বাঙালি সেই নিয়ে মাথা ঘামায় না। শুভেন্দুর এসব কথা যোগীরাজ্য উত্তরপ্রদেশে চলতে পারে, কিন্তু শ্রীরামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দের বাংলায়, বিদ্যাসাগর, রামমোহন আর রবীন্দ্রনাথের বাংলায় এসব কথা দাঁড়ায় না। বাঙালি খুব ভালো করেই জানে যে সমস্যাটা এটা নয় এখানে কেন আকাশছোঁয়া হনুমান মন্দির হচ্ছে না। বাঙালির চিরদিনের প্রার্থনা তো অনেক আগেই লেখা হয়ে গেছে মঙ্গলকাব্যে- আমার সন্তান যেন থাকে দুধেভাতে। আর বাঙালির রবীন্দ্রনাথ তো সরাসরিই বলেছিলেন, ধর্মের বেশে মোহ এসে যারে ধরে, অন্ধ সে জন মারে আর শুধু মরে। মমতা একথা জানেন কারণ, মমতা আদ্যোপান্ত খাঁটি বাঙালি। কিন্তু শমীক শুভেন্দু সুকান্ত বিজেপিতে থাকতে থাকতে আর কি বাঙালি আছেন? বাঙালি কিন্তু এঁদের উপর আর ভরসা রাখছে না। তৃণমূলের বিজয়া সম্মেলনী সেটাই সরাসরি বুঝিয়ে দিল।

Read More

Latest News