Saturday, November 1, 2025
HomeScrollAajke | আরজি কর ধর্ষণ খুন নিয়ে সিনেমা? কে করছেন? কাদের ইশারায়?
Aajke

Aajke | আরজি কর ধর্ষণ খুন নিয়ে সিনেমা? কে করছেন? কাদের ইশারায়?

সবথেকে বড় প্রশ্ন, এই সিনেমায় সিবিআই-এর ভূমিকা কী দেখানো হবে?

ডুবন্ত মানুষ খড়কুটো ধরেই বাঁচার চেষ্টা করে। বঙ্গ বিজেপির অবস্থা খানিক সেইরকম। এই বঙ্গ বিজেপির এক ‘কালচারাল হনু’র মাথা থেকে বেরিয়েছে এই বুদ্ধি, আরজি কর ইস্যু, যা সরকারের বিরুদ্ধে নাগরিক প্রতিবাদের এক ইতিহাস হয়ে উঠেছিল, সেটাকে নিয়ে যদি একটা সিনেমা করে আবার সেই আবেগকে উসকে দেওয়া যায়, তাহলে তৃণমূল সরকার বিরোধী এক বিরাট আবেগকে আবার তুলে আনা যাবে, ইভিএম-এ তার প্রতিফলন দেখা যাবে। হ্যাঁ, এরকম একটা আলোচনার পরে সেই ‘কালচারাল হনু’র ইচ্ছে অনুযায়ী এক পরিচালকে বাছা হয়েছে। সেই হনুই নাকি নিজেই ঐ সঞ্জয় রাইয়ের ভূমিকাতেই নামতে চেয়েছিলেন, পরে নিজের আপাত ধর্ষকের অতীত ইতিহাসের কথা মনে রেখেই অন্য আরেকজনকে বাছা হয়েছে, যিনি আগে মঞ্চে বেশ কিছু কাজ করেছেন। এবং প্রসার ভারতীর পয়সাতে করলে শুরু থেকেই বিতর্ক শুরু হবে, ছবির খানিকটা বিজ্ঞাপনও হয়ে যাবে – এটা মাথায় রেখেই সেই খবরকে মিডিয়াতে খাইয়ে দেওয়া হয়েছে। এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত মাথামোটা পরিচালক জানিয়েছেন, তিনি নাকি ধর্ষিতার আসল নামই ব্যবহার করতে চান, তাই তাঁর বাবা-মা’র অনুমতি নিতে গিয়েছেন। ওনার জানাই নেই যে বাবা-মা অনুমতি দিলেও সেই নাম ব্যবহার করা যাবে না। সে যাই হোক, বাবা-মা’র তরফে জানানো হয়েছে, তাঁরা এই অনুমতি দেবেন না। আজ বলেছেন, দেবেন না, আগামীকাল দেবেন হয়তো। ওনাদের মানসিক অবস্থায় সিদ্ধান্ত বদলাতে তো সময় লাগবে না। কিন্তু সে অনুমতি আসুক বা না আসুক, আরজি কর না বলে জিআর কর হাসপাতালের ধর্ষণ আর হত্যা নিয়ে ছবি বানানোর সমস্যাটা কোথায়? একেবারেই নেই। আর সেটাই বিষয় আজকে, আরজি কর ধর্ষণ খুন নিয়ে সিনেমা? কে করছেন? কাদের ইশারায়?

বঙ্গ বিজেপির ‘কালচারাল হনু’ এবং তাঁর সঙ্গীসাথী বা বঙ্গ বিজেপির নেতাদের অনেকেই এই ব্যাপারে একমত হয়েছেন। নির্বাচনের আগে এই সিনেমা বাজারে এলে বিজেপির বিরাট লাভ হবে বলেই তাঁরা মনে করেন। এমনকি রাজ্য সরকার যদি হলে রিলিজ হতে না দেয়, তাহলেও ওটিটিতে রিলিজ হবে, বহু লোকের পুরনো আবেগ, রাগ, সরকার বিরোধিতা আবার চাগাড় দিয়ে উঠবে বলে তাঁদের মনে হয়েছে। এই জন্যই বঙ্গ বিজেপির এই ‘হনু’দের আমার বরাবরই ‘কালিদাস’ বলেই মনে হয়, যে ডালে বসে আছে, সেই ডালটাকেই কাটতে ওস্তাদ সব লোকজন। এদেরকে ‘নিজলিঙ্গাপ্পা’ বললেও ভুল হবে না। হঠাৎ শান্তিকুঞ্জের ‘মূর্তিমান অশান্তি’ বলে ফেললেন, “মুসলমানদের ভোট আমরা চাই না”, ভাবুন। প্রায় ৩১ থেকে ৩২ শতাংশ মুসলমান মানুষজন আছেন এই বাংলাতে, তাঁদের ভোট ছাড়াই ওনারা বাংলা দখল করবেন। কোথাও কিছু নেই, হঠাৎ সার-সার, মানে এসআইআর নিয়ে ক্ষেপে উঠলেন। দলের মধ্যে একটু বোধবুদ্ধি আছে এমন প্রত্যেকেই এখন বুঝতে পারছেন, ‘বাঁশ কেন ঝাড়ে, কেস হয়ে গিয়েছে’, এই এসআইআর-এর কোপটা গিয়ে পড়বে ঐ মতুয়া, রাজবংশী, আদিবাসীদের উপর। এই মুহুর্তেও যাদের এক বড় অংশ বিজেপিরই ভোটার।

আরও পড়ুন: Aajke | রবি ঠাকুরের ‘সোনার বাংলা’ গাইলে আপনি দেশদ্রোহী

ঠিক সেই রাস্তা ধরেই এনারা আরজি কর আবেগকে আবার তুলে আনতে চান। সেই আবেগে যারা রাস্তায় নেমেছিলেন, তাঁদের ১০ শতাংশ ও কি বিজেপির সমর্থক? যাঁরা রাত দখলে নেমেছিলেন, যাঁরা ধরণা দিয়েছেন, মিছিল মিটিং করেছেন, ‘পথে এবার নামো সাথী’ গান গেয়েছেন, তাঁদের একজনও কি বিজেপির সমর্থক? এই বিজেপির হনুদের, দিলীপ ঘোষ থেকে শুভেন্দু পর্যন্ত, একজনকেও একটা সভাতেও বসার চেয়ার দিয়েছে, ঐ ‘কালচারাল হনু’কে তো সভার হাফ কিলোমিটার আগেই শ্লোগান দিয়ে তাড়িয়েছে, সেই আবেগকে উসকে দিয়ে কিছু মমতা বিরোধী ভোটকে বামেদের দিকে পাঠানোর চেষ্টা করছেন বঙ্গ বিজেপির এই আহাম্মকেরা? আমি নিশ্চিত জানি, বামেরা, তাদের কালচারাল ফ্রন্ট থেকে আরজি করের ঘটনা নিয়ে পথনাটিকা লিখবেন, রাস্তায় রাস্তায় সেই নাটক তাঁরা করবেন। খুব স্বাভাবিক, কারণ তাঁদের তোলা ইস্যু, সে মাঝপথে যতই দিশেহারা হয়ে যাক না কেন, তাঁরা সেই ইস্যুকে আগামী বিধানসভার নির্বাচনী ইস্যু করে তোলার চেষ্টা তো করবেনই। কিন্তু বঙ্গ বিজেপি সেই ইস্যুকে তুলে ধরে আদতে কী করতে চাইছে? আর সবথেকে বড় কথা সিবিআই-এর ভূমিকা, সিনেমাতে কী দেখানো হবে? সিবিআই তদন্ত করছে না? তারা আসল অপরাধীকে ছেড়ে অন্য কাউকে ধরে অপরাধী বানানোর চেষ্টা করছে? আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, মাঝপথেই দিশা হারিয়ে চুপসে যাওয়া আরজি কর আন্দোলনের প্রতিবাদী ডাক্তারেরাই এখন প্রশ্নে মুখে। তাঁদের ডাকা মিটিং মিছিলেই আর লোকজন যাচ্ছেন না। সেই ধর্ষণ আর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে সিনেমা করে বাংলার ভোতারদের কতটা প্রভাবিত করা যাবে?

‘বড়লোকের দরজি’ বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল জানিয়েছেন, “সিনেমাটার জন্য আমি নির্যাতিতার পরিবারকে রাজি করানোর চেষ্টা করছি।” তো সেই সিনেমাতে সিবিআই-এর ভূমিকা নিয়ে কী বলা হবে? তিনি জানেন? জানাবেন? যাই হোক, আমরা আবার একটা ‘বেঙ্গল ফাইল’ বা ‘কেরালা স্টোরি’র অপেক্ষায় থাকলাম। ‘কেরালা স্টোরি’ কেরলের মানুষজন কেবল দেখননি তাই নয়, কেরলের মানুষ ছবিটাকে এক রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা হিসেবেই চিহ্নিত করেছেন। বাংলার মানুষের মনে ‘বেঙ্গল ফাইলস’ জলছবির ছাপও ফেলতে পারেনি। যে দেশে প্রতি ঘন্টায় সাড়ে তিনখানা ধর্ষণ হয়, সেই দেশের শাসক দল একটা ঘটনাকে নিয়ে যে আবেগ তৈরি করতে চাইছেন, তা (১) ওনাদের বিপক্ষে যাবে, (২) যেটুকু আবেগ তৈরি হবে, সেটা বামেদের কিছুটা হলেও সাহায্য করবে (৩) সিবিআই সংক্রান্ত অনেক জটিলতা নিয়ে বহু প্রশ্নের সামনে দাঁড়াতে হবে ওই বঙ্গ বিজেপির ওই ‘কালচারাল হনু’কে।

Read More

Latest News