কুনাল চট্টোপাধ্যায়, জামালপুর, পূর্ব বর্ধমান :- অনেক জ্বালা, যন্ত্রণা ভোগ করে ভিটে মাটি ছেড়ে এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন। বহু যুগ আগের কথা। কখনও ভিন রাজ্যে শ্রমিকের (Migrant Worker) কাজ করেছেন। কখনও এখানে জনমজুরি করেছেন। অনেকেই স্কুলের গন্ডিতেও যেতে পারেননি। এসআইআর শুরু হতেই নতুন করে ভিটেমাটি হারানো, ‘দেশছাড়া’ হওয়ার আতঙ্ক গ্রাস করেছে পূর্ব বর্ধমানের (East Burdwan) জামালপুরের (Jamalpur) যুথিহাটি গ্রামের প্রায় ২০০ পরিবারকে।
আদৌ ভোটার লিস্টে (Voter List) নাম থাকবে, থাকলেও কতজনের থাকবে, না কি ডিভোটার হয়ে অজানা ঠিকানায় আশ্রয় নিতে হবে, ভেবে কূল পাচ্ছেন না সুষমা, নমিতা, মাধব, যোগনরা। পূর্ব বঙ্গ থেকে আগত সকলেই। হিন্দু হয়েও ভারতে আর থাকতে পারবেন কি না সংশয়ে ভুগছেন তাঁরা।
বছর দুয়েক আগে ফের নতুন করে ভিটে মাটি ছাড়া হওয়ার উপক্রম হয়েছিল এই গ্রামের বহু মানুষের। আচমকাই একের পর এক বাসিন্দার আধার কার্ড ব্লক হয়ে গিয়েছিল। যা নিয়ে রাজনৈতিক দড়ি টানাটানি কম হয়নি তখন। অনেক আন্দোলন, অনুরোধ, উপরোধের পর আধার ডিব্লক হলেও পরের লোকসভা নির্বাচনে অনেকের নাম বাদ চলে রায় ভোটার লিস্ট থেকে। সেই থেকেই তাঁরা এ দেশে আদৌ থাকতে পারবেন কি না তা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছিল। এখন আবার এসআইআর শুরু হতেই সেই আশঙ্কা নতুন করে গ্রাস করছে তাঁদের।

মাধব সরকার। সত্তর বছর পাড় করেছেন। ভয় মিশ্রিত উদ্বেগের ছাপ মুখচোখের বলিরেখায় ফুটে উঠেছিল। বুধবার কথাবার্তায় উৎকণ্ঠা, আতঙ্ক প্রকাশ পাচ্ছিল। তিনি বলেন, “বহু বছর আগে বাংলাদেশ থেকে এসেছি। ছোট তখন। বিয়েও হয়নি। পেটের তাগিদে তামিলনাড়ুতে কাজ করতাম। তাই ২০০২ সালের লিস্টে এখানে নাম ওঠেনি। এখন কী হবে জানি না। খুবই ভয়ে আছি। আবার কী ভিটেজাড়া হতে হবে।”
আরও পড়ুন- নিম্নচাপ কাঁটায় থমকে শীত! ফের জেলায় জেলায় বৃষ্টির পূর্বাভাস
আর এক বাসিন্দা সুব্রত বিশ্বাস। তিনি বলেন, “মোটামুটি ২০০ এর উপর মানুষের নাম নেই ২০০২ সালের লিস্টে। ভয়ে আতঙ্কে আছি। আমরা বেশ সুখে শান্তিতেই ছিলাম। আমরা সরকারি সুযোগ সুবিধা পাচ্ছি। থাল পরেও এইভাবে ভোটার লিস্টে না বাদ গেলে আমাদের কী হবে জানি না।”
এই গ্রামে প্রায় ২০০ পরিবারের বাস। ৪০-৫০ ধরে বসবাস করছেন তাঁরা। সুব্রতবাবু জানান, ২০০২ সালে লিস্টে তাঁর বাবা যোগেন বিশ্বাস ও মা নমিতা বিশ্বাসের নাম নেই। ফলে তাঁরা কীভাবে ভোটার লিস্টে থাকবেন বুঝতে পারছেন না। নমিতা বিশ্বাস জানান, তাঁরা রেশন পাচ্ছে, বার্ধক্য ভাতা পাচ্ছেন। আধার কার্ড, প্যান কার্ড সব রয়েছে। কিন্তু ভোট দিতে পারছেন না। নমিতা বিশ্বাস বলেন, “গত লোকসভা ভোটে আমার স্বামী ও আমার নাম বাদ গিয়েছে। ২০০২ সালে ভোট দিতে পারিনি।” আর এক বৃদ্ধা সুষমা হাওয়ালাদার বলেন, “আধার কার্ড, রেশন কার্ড , প্যান কার্ড আছে। ২০২৪ সালে ভোট দিতে পারিনি। গত লোকসভায় ভোটার তালিকায় নাম বাদ গেল। এসআইআর হচ্ছে। কী হবে জানি না। খুব আতঙ্কে আছি আমরা।”
ধীরেন হাওয়ালাদার নামে আর এক বাসিন্দা বলেন, “অনেকের ভোটার তালিকায় নাম বাদ গিয়েছে। আধার কার্ড, ভোটার কার্ড কেড়ে নেবে। আমার ভাইয়ের নাম আছে ২০০২ সালে। আমার নাম নেই। নাম তুলতে না পারলে আমাদের আবার বিদেশী তকমা না দিয়ে দেয়।”
গ্রামের বাসিন্দা তথা তৃণমূলের বুথ সভাপতি সজল ব্যাপারি বলেন, “দোলাচলে রয়েছে সকলেই। যেভাবে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে তাতে ভয়ে থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে আমরা সকলকে আতঙ্কিত না হওয়ার কথা বলছি। আবুঝহাটি-১ অঞ্চলের ক্যাম্প করা হয়েছে দলের তরফে। কারও কোনও সমস্যা হলে সেখানে যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে।”
দেখুন আরও খবর-







