Friday, November 21, 2025
HomeScrollAajke | মনে দুঃখ থাকলে শুভেন্দু অধিকারীর ভাষণ শুনতে পারেন, মন হাল্কা...
Aajke

Aajke | মনে দুঃখ থাকলে শুভেন্দু অধিকারীর ভাষণ শুনতে পারেন, মন হাল্কা হয়ে যাবে

শান্তিকুঞ্জে যে রাজনৈতিক ক্ষমতা জমাট বেঁধেছিল, সেটাও ওই ‘দিদিমণি’র জন্যই!

Written By
অনিকেত চট্টোপাধ্যায়

স্বপ্নে পোলাও আর কাতলা কালিয়া কে না খেয়েছে! যিনি হামেসা খান, তাঁর স্বপ্নেও এসেছে; যিনি একদিনও খাননি, বিয়েবাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে সেই সুঘ্রাণ পেয়েছেন, তিনিও স্বপ্নে ওই পোলাও-কালিয়ার স্বপ্ন দেখেছেন। হ্যাঁ, গড়পড়তা বাঙালি সেই স্বপ্ন দেখে এবং সেই এক ও অভিন্ন ঘিয়ে জব-জব পোলাও-এর সুঘ্রাণও পান। কারণ স্বপ্নের পোলাওয়ে কাউকে আমি অন্তত ঘি কম দিয়েছে বলে শুনিনি। এক চটকায় ঘুম ভাঙার পরেও নাকে সেই সুঘ্রাণ লেগে থাকে, গোবিন্দভোগের পোলাওয়ে গাওয়া ঘিয়ের গন্ধ। হ্যাঁ, সেই গন্ধ লেগে রয়েছে আমাদের শান্তিকুঞ্জের খোকাবাবু শুভেন্দু অধিকারীর নাকে। আহা সেই সব দিনের স্বপ্ন! ওনাকে মুর্শিদাবাদ জয় করতে পাঠানো হল, তিনি জয় করে ফিরলেন, দিদি খুশি। কিন্তু তিনি কি বুঝেছিলেন যে, সে জয়ের সিংহভাগ কৃতিত্ব তাঁর নয়, দিদিমণির? মমতা না থাকলে উনি সারা রাজ্যে ঘুরে বেড়ানোর জায়গাটুকুও পেতেন না। ইন ফ্যাক্ট, মমতার পক্ষপাতিত্বে কেবল উনি নয়, শান্তিকুঞ্জে যে রাজনৈতিক ক্ষমতা জমাট বেঁধেছিল, সেটাও ওই দিদিমণিরই জন্য। না, সম্ভবত সেটা বোঝার বোধবুদ্ধি ওনার নেই। তাই মাত্র গতকাল তিনি কীর্নাহারে এলেন, জনসভায় জানালেন, তিনি নন্দীগ্রাম না শুরু করলে দিদি নাকি দিদিমা হয়ে যেতেন, বাংলার ক্ষমতায় আসতে পারতেন না। কী অবোধ উচ্চারণ! শোনার পরে ৩৬ মিনিট হেঁসেছি, অনেকদিন পরে বিশুদ্ধ হাস্যরস। সেদিন মঞ্চের তলায় দাঁড়িয়ে থাকা শুভেন্দু অধিকারী নাকি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাংলার মসনদে বসিয়েছিলেন। সেই বিশুদ্ধ হাস্যরসই বিষয় আজকে, মনে দুঃখ থাকলে শুভেন্দু অধিকারীর ভাষণ শুনতে পারেন, মন হাল্কা হয়ে যাবে।

কীর্ণাহারবাসীদের শুভেন্দু অধিকারী জানালেন, তাঁরই দয়া ও দাক্ষিণ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাকি এই বাংলা থেকে বাম শাসনের পতন এনেছেন, তাঁরই সাহায্যে মমতা বসেছেন বাংলার মসনদে। হা-হা, হি-হি, হো-হো। সে থাক, কেবল জানতে মন চায়, ও শুভেন্দু বাবু, সে কোন মন্ত্র ছিল, যা উচ্চারণ করে আপনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাংলার গদিতে বসিয়েছিলেন? ২০২১-এর নির্বাচনে ‘অব কি বার দো’শ পার’ বলার পরে কি সেই মন্ত্রটা পড়তে ভুলে গিয়েছিলেন? যে মন্ত্রে একজন কে সিংহাসনে বসালেন, সেই মন্ত্র নিজেই ভুলে মেরে দিলেন? এবং এখানেই থামেননি, জানিয়েছেন, উনি কেষ্ট মোড়ল বা কাজল শেখের চেয়েও বড় গুন্ডা লক্ষণ শেঠ বা সুশান্ত ঘোষকে ঠান্ডা করে দিয়েছিলেন। তো একটা সিম্পল প্রশ্ন আছে, খুঁজে পেতে দেখলাম, আপনার পিতাশ্রী, যাঁকে আপনি শিশিরবাবু বলেই সম্বোধন করেন, সেই তিনি কিন্তু কংগ্রেস থেকে ২০০১-এ তৃণমূলে, মানে মমতার তৃণমূলে আসার পরেই প্রথম বিধায়ক হিসেবে বিধানসভাতে গিয়েছেন। তার আগে ওই কাঁথি মিউনিসিপালিটিতেই আটকে ছিলেন। কেন বলুন তো? আপনার বাবাকেও সেই মন্ত্র দেননি? আপনি নিজে ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত তো কংগ্রেসেই ছিলেন, কোন দুববো ঘাস উৎপাটিত করেছেন? কেন ওই তৃণমূল থেকেই ২০০৯-এ সাংসদ হলেন তমলুক থেকে? তৃণমূলের স্ট্যাম্প ছাড়া যে পরিবার কাঁথির বাইরে বের হতে পারেনি, সেই পরিবারের বড়খোকা আজ নিজের উচ্চাকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করার জন্য বিজেপিতে গিয়েছেন, বাংলার মসনদে বসার জন্যই গিয়েছেন, বেশ করেছেন! কিন্তু তার জন্য আবোল-তাবোল বকতে হবে?

আরও পড়ুন: Aajke | বিজেপি না মমতা? আগে টার্গেট ঠিক করুন বামেরা

বীরভূমে ১৫ দিন পর পর আসবেন? নাকি ৭-৮টা আসন চাই, আছে মোট ৮টা, তারমধ্যে ৭-৮টা চাই? আগের ফলাফলগুলো দেখে নিন। ২০১৬-তে বীরভূমে তৃণমূলের ভোট ছিল ৪৮.৩ শতাংশ, বামেদের ২৩ শতাংশ, কংগ্রেসের ১২ শতাংশ, আর বিজেপির ১১ শতাংশ। হ্যাঁ, এটাই বিজেপির কোর ভোট। ১১টার মধ্যে একটা কংগ্রেস, একটা সিপিএম, আর বাকি ৯টা তৃণমূলের। ২০২১-এ তৃণমূলের ৫২ শতাংশ, বাম কংগ্রেসের মিলে ৫.৮ শতাংশ, আর বিজেপির ৩৯.৭ শতাংশ। একটা আসন বিজেপির – দুবরাজপুর, আর বাকি ১০টা তৃণমূলের। ২০২৪-এর লোকসভা, কেষ্ট মোড়ল জেলে, দু’টো আসন – বোলপুর আর বীরভূ। তৃণমূলের ভোট ৫২.১ শতাংশ, বিজেপির ৩৪.৩ শতাংশ আর কং-বাম ১০.৬ শতাংশ। মানে বোঝা গিয়েছে শুভেন্দু বাবু? গ্যাপটা হল ১৮ শতাংশের? মনে হয় এই গ্যাপকে খুব জোর দুই কি তিন শতাংশ কমাতেও পারবেন? আর বামেরা খানিক বেড়ে গেলে? দুবরাজপুরও হাত থেকে যাবে, হাতে থাকবে আপনা প্রিয় খঞ্জনি। কাজেই নিজের জেলাতেই মন দিন, অন্তত মুখ পুড়িয়ে লোক হাসানো থেকে বাঁচুন। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, কীর্ণাহারে গিয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, তিনি না সাহায্য করলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোনওদিনও রাজ্যের ক্ষমতায় আসতেন না। এটা কতখানি সত্যি?

সেই ঋষির কথা মনে পড়ে যাচ্ছে, যে গল্প রামকৃষ্ণদেব বলতেন। এক ঋষিকে এসে তাঁর শিষ্য জানাল যে, একটা ইঁদুর সেই উপরে বাঁধা হাড়ির দিকে বেড়ালের মতো লাফ দিচ্ছে, সম্ভবত হাঁড়ির নাগালও পেয়ে যাবে। কী উপায়? ঋষি বললেন ইঁদুরটাকে মেরো না, ওর গর্তটা খুঁড়ে দেখ, যা আছে নিয়ে এস। শিষ্য গর্ত খুঁড়ে দেখে এত্ত ধান, সে সেগুলো নিয়ে এল। ঋষি দেখে বললেন, এবারে দেখো ইঁদুরটা অতদুর লাফাচ্ছে কী না। শিষ্য জানাল, না মুনিবর, ইঁদুর তো এখন এক হাতও লাফাতে পারছে না। রমকৃষ্ণদেব বলতেন, এই হল গিয়ে খুঁটির জোরে ম্যাড়ার নাচ। দিল্লিতে সরকার আছে, সেই জোরেই বাংলা নিয়ে নেবেন – এইরকম এক উদ্ভট চিন্তা থেকেই আবোল-তাবোল বকা। নির্বাচনের ফলাফল এলে কিছুদিন বন্ধ থাকবে এই কথাবার্তা, কিন্তু দুঃখ হল তাহলে আমরা হাসব কার কথায়?

দেখুন ভিডিও:

Read More

Latest News