তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় মাত্র গতকাল সংসদে অমিত শাহকে বলেন “আপনারা কেন বলছেন না যে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের থেকে বেশি আসন জিতবেন?” কোন মুডে ছিলেন কে জানে, দুম করে তিনি উঠে বললেন, “আমি পশ্চিমবঙ্গে আসব, বুক ঠুকে গর্বের সঙ্গে ঘোষণা করব, আমরা আপনাদের চেয়ে বেশি আসন জিতব!” খেয়াল করুন, খুব ভালো করে খেয়াল করুন উনি বলেছেন উনি বুক ঠুকে ঘোষণা করতে আসবেন যে ওনারা তৃণমূলের চেয়ে বেশি আসনে জিতবেন। অর্থাৎ বদহজম হয়েছে ঠিকই কিন্তু তারমধ্যেও খেয়াল আছে। ২০২১-এ এই অমিত শাহ বলেছিলেন অবকি বার ২০০ পার। আমরা এই আজকে অনুষ্ঠানেই বলেছিলাম, গরম পড়েছে, এরকম যাঁরা ভাবছেন তাঁরা হয় রহমানিয়া থেকে রাংয়ের মাংস কিনে পেঁপে দিয়ে পাতলা করে ঝোল বানিয়ে খান, একান্ত মাছমাংসে রুচি না থাকলে গন্ধরাজ লেবুর পাতা কচলে বেলের পানা করে খান। এবারে গরম পড়ার আগেই বদহজম, সংসদে বসে বলছেন তৃণমূলের চেয়ে বেশি আসন পাবেন। ছিল ৭৭, তো হারাধনের ১০টি ছেলের মতো একে একে খসে পড়ছে, টিকটিকির ল্যাজও খসে যেতে এর থেকে বেশি সময় নেয়। আজ দক্ষিণে কাল উত্তরে, পরশু মাঝমাঠে বিধায়ক, নেতা কর্মী খসে যাচ্ছে, কেন? এমন নয় যে সেই সব অপাপবিদ্ধ যিশুরা কোনও আদর্শের জন্য বা মাননীয়ার অনুপ্রেরণায় দল ছেড়ে তৃণমুলে আসছেন, না এমন নয়, তাঁরা বুঝে ফেলেছেন আবার ঘটি হারাবে, ভেবেছিলেন একটু দেখেই নেওয়া যাক, এখন বুঝেছেন হবে না, এখন থেকেই যাবতীয় সমীক্ষা বলে দিচ্ছে তৃণমূলের আসন বাড়তে পারে বই কমবে না, তাই ডুবন্ত নৌকো থেকে ইদুরের দল বেরিয়ে অন্য নৌকোতে চাপার চেষ্টা করছে, এরই মধ্যে আমাদের ছোটামোটা ভাইয়ের স্বপ্নে শুভেন্দু আগামী মুখ্যমন্ত্রী, সেটাই বিষয় আজকে, অমিত শাহের বদহজম, স্বপ্ন দেখছেন শুভেন্দু মুখ্যমন্ত্রী হবেন।
অমিত শাহের অবস্থাটা খানিকটা সেই জমিদারের মতো, এই সামান্য বাংলাটা পেয়ে গেলে ওনাদের প্রস্থে আর দৈর্ঘ্যে রাজত্বের বেশ একটা নাম ডাক হবে, গোটা উত্তর ভারত আমাদের এই কথাটা বলা যাবে। পড়ে তো রয়েছে এই বাংলা আর ছোট্ট রাজ্য ঝাড়খণ্ড। বাংলা কব্জায় এসে গেলে ঝাড়খণ্ড আর কত দিন দুর্গ সামলাতে পারবে আর বাংলা এসে যাওয়ার মানে হল বিন্ধ্যের ওপরে ওনাদের সেই কল্পিত হিন্দু সাম্রাজ্যের কাহিনি। কাজেই ওনাদের বাংলা দরকার আর সেই বাড়া ভাতে ছাই দিয়েই যাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই রাগ চাপতে না পেরেই অমিত শাহ গতকাল সংসদে বাংলা দখলের কথা বলেছেন।
আরও পড়ুন: Aajke | স্কুলে শেখানো হচ্ছে তলপেটের তলায় কী আছে?
আমরা বলি কী স্যর, আপনি আগে একটা রাজ্য সভাপতি তো ঠিক করুন, দলের সভাপতি নেই সেই কবে থেকে, দিলীপ হবে না অগ্নিমিত্রা হবে না শুভেন্দু হবে এই লড়াইয়ের মধ্যেই অমিত শাহের জানাই নেই পোস্টার পড়ে গেছে, আমরা শমীক ভট্টাচার্যকে সভাপতি হিসেবে চাই, ওদিকে স্বপন দাশগুপ্ত নাকি বলেছেন, কেন? আমি কি মরে গেছি? সব মিলিয়ে এক নরক গুলজার চলছে, দলের সভাপতিই ঠিক করে উঠতে পারছেন না, শুভেন্দুকে মুখ্যমন্ত্রী করার কথা বলছেন। অবশ্য বলছেন মানেই যে করবেন সেটাও ভাবাটা ভুল হবে, দিল্লি তো জিতলেন, কোথায় অনুরাগ ঠাকুর? কোথায় রমেশ বিধুরি? কোথায় কপিল মিশ্রা? নৃত্যশিল্পে পারঙ্গম একজনকে গদিতে বসানো হয়েছে। তো যাই হোক আলোচনাতে ফিরি, ওনাদের প্রচারে ২৪ ঘণ্টা ব্যস্ত থাকা ইন্ডিয়া টুডের রাহুল কানওয়ার পর্যন্ত বলে দিয়েছে এখনই ভোট হলে বিজেপির ভোট খানিক কমবে বই বাড়বে না। কিন্তু কেন? এক্কেবারে প্রথম কারণ হল বাংলা বর্গি, লুঠেরাদের রুখেছে, বাংলা সাম্প্রদায়িক হানাহানির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে চিরটাকাল, বাংলাতে জাতীয় নায়ক নেতাজির ইচ্ছেতেই শ্যামাপ্রসাদের মাথা ফেটেছিল, অমিত শাহ খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন, বাংলা সব কিছু সহ্য করে নেয়, কিন্তু তার ভাষা সংস্কৃতির অপমান মেনে নেয়নি কোনও দিন, আজও মেনে নেবে না। আমাদের ঘরের উঠোনে বসে রুটি দিয়ে আলু পোস্ত খাবে আর আমিষ খেলে হিন্দু নয় গোছের প্রচার চালাবে এই অনাচার বাঙালি মেনে নেবে না। আর সেই জন্যেই এই রাজ্যে বিজেপির বীজ ছড়ালেও তা এই বাংলার জল আলো হাওয়ায় বেড়ে উঠবে না। আসলে এই বাংলাতে রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ, রবি ঠাকুর, নজরুল যে চিন্তা চেতনার ভিত্তি গড়ে দিয়ে গেছেন তাতে বিজেপি বাড়বে, বড় হবে, এমনটা হওয়াই সম্ভব নয়। তাহলে হঠাৎ হল কেন? হয়েছে কারণ বামেদের এক বড় ভোট বিজেপির ঝোলায় পড়েছে, বামরা তাঁদের জাতশত্রু মমতাকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য এটা করেছে, কিন্তু সেখানেও বিস্তর ঝামেলা লেগেছে, সেখানে দলের মধ্যেই এ নিয়ে তুমুল বাকবিতন্ডা। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, অমিত শাহের পেট গরম হয়েছে, উনি আগামী বিধানসভায় জেতার কথা বলছেন, শুভেন্দু অধিকারিকে মুখ্যমন্ত্রী করার কথা বলছেন, আপনাদের মতামত কী? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
যেভাবে উত্তর থেকে দক্ষিণে দলের মধ্যে বিদ্রোহ মাথাচাড়া দিচ্ছে, যে ভাবে দলের নেতা কর্মী বিধায়কেরা দল ছেড়ে তৃণমূলে যাচ্ছেন সেই হিসেব মাথায় রাখলে আগামী নির্বাচনে বিজেপি গোটা ৩০ আসন পেলেই নিজেকে ভাগ্যবান বলে মনে করবে। ভোট পার্সেন্টেজ এই মুহূর্তে নির্বাচন হলে ৩২-৩৩-এ নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা। অতএব হে জুমলাবাজ অমিত শাহজি, আমাদের মনে আছে আপনার অবকি বার ২০০ পারের স্লোগান, আমাদের মনে আছে এই লোকসভা ভোটের সময়ে অবকি বার ৪০০ পারের স্লোগান, আমরা বিনয়ের সঙ্গেই বলি, মানুষের ভোটে আগামী নির্বাচনে আপনারা গোটা ৩০-এর বেশি আসন পাবেন না, কাজেই নিয়ম অনুযায়ী বিধানসভাতে বিরোধী দলনেতার পদটাও থাকবে না, কাজেই প্রাণপণে চেষ্টা করুন যাতে অন্তত ওই বিরোধী দলনেতার পদটাকে কোনও রকমে ধরে রাখা যায়।