২০২৬-এর ভোট এসে গিয়েছে। আর এসে গিয়েছে ইডি, সিবিআই। হ্যাঁ, অন্য কোনও সময় দেখা যাক বা না যাক, বিরোধীশাসিত রাজ্যে ভোটের সময় ইডি আর সিবিআইকে কিন্তু দেখা যাবেই। ভোট মিটে গেলে কী হয়? তদন্তের ফলে রাশি রাশি খাজানা যে কত উদ্ধার করে সেতো দেখাই যায়। তাহলে ভোটের পালা চুকলে কী বলে ইডি, সিবিআই? আমরা দুটি ভাই, ভোটের গাজন গাই, খুচরো কিছু তদন্ত করে, কোথায় ফিরে যাই, ও সে কোথায় ফিরে যাই! কোথায় যায় ফিরে? সাপ যেমন গর্তে ঢোকে ঠিক সেভাবেই ভোটের পর ইডি সিবিআই কি ফিরে যায় বিজেপির সেই অন্দরমহলে, যেখানে চক্রের ভিতরে চক্র, তার ভিতরে চক্র? যেখানে জাল বোনা চলে দিনরাত, কীভাবে ফাঁসানো যায় বিরোধীদের। স্বৈরাচারের থাবাকে আরও শক্ত করা যায় কীভাবে?
আজ্ঞে হ্যাঁ, কথাটা শুনতে যেমনই লাগুক না কেন, ভিত্তি আছে তার। আপনি পরিসংখ্যানের দিকে তাকিয়ে দেখুন না, তাহলেই সাফ বুঝতে পারবেন ভোট এলেই ইডি আর সিবিআই এই জোড়া ফলাকে বাজারে নামায় কারা, আর কেনই বা নামায়? তৃণমূল নেতা সুজিত বসুর ঘটনাটা মনে করুন। এই তো গত শনিবারের টাটকা খবর। সুজিত বসুকে হাতেনাতে পাকড়ানোর জন্য হানা দিয়েছিল ইডি। তল্লাশি চালিয়েছে মোট ১৩টা জায়গায়। উদ্ধার হয়েছে কত? ৪৫ লক্ষ টাকা। হ্যাঁ, ১৩টা জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে মিলেছে মোট ৪৫ লক্ষ টাকা। অর্থাৎ গড়ে এক একটা জায়গা থেকে উদ্ধার হয়েছে সাড়ে তিন লাখের কাছাকাছি। সেই সঙ্গে চলছে বালি খাদান নিয়ে তদন্ত। খাতা পত্র দেখা হচ্ছে। ট্রাক থেকে বালি নামিয়ে ফেলা হচ্ছে। সব মিলিয়ে জোরদার তদন্ত চলছে। আচ্ছা, সরকারের কি কাজ কম পড়েছে? তা না হলে, খুচরো তদন্তের জন্য কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে এমন বেলাগাম ছোটানোর মানে কী আছে? আরে হাত দিন না আদানি-আম্বানির হিসেবের খাতায়। কত টাকা লোন আছে তাঁদের? সরকারকে শোধ দিয়েছে তাঁরা? দেবে কোনওদিন? ইডি সিবিআইয়ের হিম্মত আছে আম্বানির প্রাসাদপুরী অ্যান্টিলিয়ার দোরগোড়া অবধি যাওয়ার? না মশাই না, হিসেব কিন্তু মোটেই এত সোজা নয়। সরকারি টাকা খরচ করে ইডি, সিবিআইকে যারা রাজ্যে রাজ্যে পাঠাচ্ছেন, তারা খুব ভালো করেই জানেন, কেন এসব হচ্ছে। বলব সে কথা। তার আগে আসুন একটু দেখে নিই, ভোটের আগে কেমন তদন্ত করে ইডি, সিবিআই।
আরও পড়ুন: Aajke | তৃণমূলের বিজয়া সম্মেলন, বিরোধীদের বিসর্জন?
সত্যিটা তো এই, বিজেপি সরকারের হাতে ইডি, সিবিআই আছে, কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। কিন্তু পারে না পশ্চিমবঙ্গের মানুষের স্বাধীন মতামতকে এক ইঞ্চিও নিয়ন্ত্রণ করতে। মোদি সরকার বুঝে গিয়েছে, ঐ যোগী রাজ্যের উগ্র হিন্দু চালচলনকে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ আসলে অশিক্ষা বলে মনে করে। মোদি সরকার বুঝে গিয়েছে, হনুমান জয়ন্তী আর রামনবমী করে পশ্চিমবঙ্গে ভোট পাওয়া যাবে না। মোদি সরকার বুঝে গিয়েছে, ২৬-এর ভোটে মমতা ব্যানার্জীর হাতে গোহারা হারা ছাড়া তাদের আর কোনও উপায় নেই। কী হবে তাহলে? রবীন্দ্রনাথ তার লোকহিত প্রবন্ধে লিখেছিলেন, ‘বৃথা আশা মরিতে মরিতেও মরে না।’ আর তাই, বিজেপি শেষমেষ সেই রাস্তাই নিয়েছে, যে রাস্তা স্বৈরাচারীর। সোজা কথায়, ভয় দেখিয়ে কাজ হাসিল করতে চাইছে তারা। আর তাই ইডি, আর তাই সিবিআই। কিন্তু কী হয় তারপরে? বজ্র্য আঁটুনি ফস্কা গেরো? ভোট এলেই ঝাঁপিয়ে পড়ে কেন্দ্রীয় এজেন্সি। ২০১৯, ২০২৪, আর এখন ২০২৬-এর নির্বাচনের আগে ফের ময়দানে হাজির তারা। এখন প্রশ্ন এই, ভোটের আগেই এইসব তদন্তকে কীভাবে দেখছে মানুষ?
তাহলে এই চলবে? আজ্ঞে হ্যাঁ, এটাই চলবে। বিজেপি কোনওদিনই পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসবে না, আর তাদের এই ইডি, সিবিআই হামলাবাজিও চলতে থাকবে। যতদিন না ইন্ডিয়া জোট মোদিজির সিংহাসন ধরে টান মারছে, ততদিন এই ভোট সার্কাস চলতেই থাকবে। আরে মশাই, তবু তো এখন নেতাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। এরপর কিন্তু উচ্চবর্ণের হিন্দু না হলেই, তাঁরা সংখ্যালঘু বা দলিত হলেই, নজর পড়তে পারে, ইডি-সিবিআই ওরফে মোদি সরকারের। মনে রাখবেন, শেষের সেদিন ভয়ঙ্কর। তার আগেই যা করার করতে হবে।