Friday, September 5, 2025
HomeScrollAajke | হুলিগানইজম– দিলীপ, শতরূপ আর কুণাল ঘোষ

Aajke | হুলিগানইজম– দিলীপ, শতরূপ আর কুণাল ঘোষ

কেমন লাগল অনির্বাণ ভট্টাচার্যের হুলিগানইজমের গান?

সে সময় শুনেছি ইউটিউব সোশ্যাল মিডিয়া ছিল না, কিন্তু হঠাৎ হিট হয়েছিল শিলৌরি বিনা চাটনি ক্যায়সে বনি। সে কী আহ্লাদ, পুজোর প্যান্ডেল থেকে জন্মদিনের পার্টি, ক্যায়সে বনি, ক্যায়সে বনিইইইইই চলছে। মাস পাঁচ ছয় পরে খেয়াল করেছিলাম উবে গেছে। কাঁচা বাদাম এসেছিল, এখন কাঁচা ছেড়ে দিন ভাজা বাদামের গানও শোনা যায় না। আবার হঠাৎই এসেছিল তোমাকে চাই, গান বাজে এখনও, এখানে সেখানে। চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা সত্যি বা সে প্রথম প্রেম আমার নীলাঞ্জনা এসেছে, থেকে গেছে। হ্যাঁ কেউ কেউ উল্কার মতো আসে, তারপর তার পাত্তাও পাওয়া যায় না, কিন্তু কেউ কেউ আসে জায়গা করে নিতে, জায়গা করে নেয়। তো এসেছে হুলিগানইজম। প্রধানমন্ত্রীর পেনশন থেকে কুণাল ঘোষের টেনশন, দিলীপ ঘোষের সোনার বাড়াবাড়ি থেকে শতরূপের দামি গাড়ি, সব এসেছে তাদের গানে আর বাজার মাত। লোকে কেবল শুনছে নয় শোনাচ্ছে। রীতিমতো আলোচনা হচ্ছে সমাজ মাধ্যমে। আর স্বাভাবিকভাবে এক প্রশ্ন, টিকবে তো? মানে সেই রামকৃষ্ণদেব বলেছিলেন জগতে এসেছিস দাগ কেটে যা আর চাঁদ বণিকের পালায় মনে পড়ে? বণিক বলছে, চোর হোক কিংবা সাধু হোক, সফল হতেই হবে, নইলে যে শুধু থুৎকার কপালে তার, তাই বটে। হ্যাঁ ভাইরাল হওয়াটাই আপাতত প্রথম শর্ত, তারপর টিকে গেলে তো গেলে, না হলেও ক্ষতি নেই। রেলস্টেশনের বাইরে ভিক্ষে করতেন যিনি শুনেছি তারও নাকি এখন ২০-২৫ লক্ষ টাকা আছে। কাজেই দাগ কাটা আর ভাইরাল হওয়ার প্রথম শর্তে উতরে গেছে হুলিগানইজম, সেটাই বিষয় আজকে।

কোন শর্তে উতরে গেল প্রথম বাধা, কোন কারণে হঠাৎই হুলিগানইজম ভাইরাল? কারণ তাদের গানের ভাইরাল এলিমেন্ট। সামজ মাধ্যমে তিন অসম্ভব চর্চিত মুখ হাজির এই গানে। এবং তিনদিকের তিনজন। আপনি তিনু? দেখে নিন অনির্বাণ খিল্লি করছে শতরূপ, দিলীপ ঘোষকে। আপনি সিপিএম, দেখুন আপনার কমরেডকে খিল্লি করছে কোট আনকোট বামপন্থী অনির্বাণ। হ্যাঁ, সিপিএম ওই কুণাল ঘোষ বা দিলীপ ঘোষের খিল্লিতে খুব একটা ইনটারেস্টেড নয়, নয় কারণ ওই কাজটাই তো ওনারা মন দিয়ে করেন চব্বিশ ঘণ্টা, অনির্বাণ আর কতটাই বা করবে। আর আপনি বিজেপি হলে হিন্দু হৃদয় সম্রাটকে পেনশন দেওয়ার কথা বলছে, এটাই তো কৌতূহল বাড়ানোর জন্য যথেষ্ট।

দু’ নম্বর কারণ হল পারফরম্যান্স, নাটকের অনির্বাণ জানেন মঞ্চে কোথায় থাকে দৃষ্টি, সেই বুঝেই সৃষ্টিতে নেমেছেন তিনি। এবং অবশ্যই বাংলার এক বিরাট না তিনু, না সিপিএম, না বিজেপি মধ্যবিত্ত মানুষজন, যাঁরা অচানক হাতে মোয়া পেয়েছেন। এবার জো জিতা ওহ সিকন্দর, হুলিগানইজম হিট, অনির্বাণ ভাইরাল। টিকবে? এত চিন্তা কেন ভাই? টিকবে, টিকবে না, বদলে যাবে, বদলাবে না এসব তো ভবিষ্যতের গর্ভে, আপাতত ঝিনচ্যাক। কিন্তু এমন এক মজাদার পারফরম্যান্সের পর, দেদার হইচইয়ের পরে রি-অ্যাকশন তো লোকে জানতে চায়। কুণাল ঘোষ রীতিমতো ভিডিও জারি করে বলেছেন বেশ হয়েছে, ভালোই তো। দিলীপ ঘোষ ইদানিং আনরিচেবল থাকেন, আর এসব বুদ্ধিজীবীদের তো উনি কবেই রগড়ে দেব বলেইছেন, কিন্তু এক্কেবারে এই গান নিয়ে তাঁর কোনও মন্তব্য কোথাও দেখিনি। তবে আন্দাজে বলতে পারি, উনি গোঁফ নাচিয়েই বলে দেবেন আরে ছাড়ুন না, কে শোনে ওসব গান। গুনে গুনে সাতটা শব্দ। এর বেশি শব্দ উনি এর জন্য খরচ করবেন না। কিন্তু সিপিএম। উরিব্বাস। সারি দিয়ে লেখা বের হচ্ছে, গোপাল ভাঁড় পালধী থেকে মার্কবাদী পথের মাথা মাঠে নেমেছেন। এবং কী সিরিয়াস আলোচনা। মানে গ্রামসি কী বলিয়াছে? দেরিদাই বা কী বলিল, ফুকো তার পরে এই ডেকাডেন্ট কালচার নিয়ে কী কহিলেন। শালা অর্ধেক নাম উচ্চারণ করতেই দাঁত ভেঙে যাবে। অনির্বাণের গান কি এতটাই সিরিয়াস কিছু? যে কোনও চিন্তা ভাবনাই সিরিয়াস, যখন তা রাজনীতির বৃত্তের মধ্যেই থাকে তখন তা আরও সিরিয়াস। কারণ শিল্পচর্চার ইদানিংকার বাঙালি চেহারাতে রাজনীতি আসে ধূমকেতু হয়ে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে নকশালবাড়ি মিলিয়ে এক জগাখিচুড়ি অশিক্ষিত চেহারায়, না হলে আসেই না, আমি তুমি সে ও সখার নিরাপদ বৃত্তে ঘুরতে থাকে। সেই এক সময়ে প্রধানমন্ত্রীর পেনশন থেকে অচ্ছে দিন আর গরুর দুধে সোনা থেকে কুণাল ঘোষের প্রোমোটারিকে টেনে এনে এক পারফরম্যান্সের জন্য ধক লাগে, সেই ধক দেখিয়েছেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য। আমরা আজ আমাদের দর্শক বা কিছু বিশিষ্ট জনকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কেমন লাগল অনির্বাণ ভট্টাচার্যের হুলিগানইজমের গান? কেমন লাগল গানের মধ্যে রাজনীতিকে টেনে আনা? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।

হুলিগানইজম-এর ডিকশনারি অর্থ হল, violent or rowdy behaviour by young troublemakers, typically in a gang. হ্যাঁ গ্যাং, এখন টুকরে টুকরে গ্যাং কি না তা তো জানা নেই। কিন্তু কোথাও আমাদের শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতিতে এক ধরনের স্থবিরতা এসেছে, গভীরতা কমেছে, যাবতীয় শিল্পকর্ম পেলব নরম কর্তাভজা হয়ে উঠছে, বা আরও পরিষ্কার করে বললে যাবতীয় শিল্প সংস্কৃতি গান সিনেমা এখন ক্ষমতার হাত ধরে এক মহাগঠবন্ধন করেই চলছে। সেই স্থবিরতাকে ভাঙতে কিছু হুলিগানের দরকার, ভাঙলে গড়ার কথাও আসবে মাথায়। এখন এই হুলিগানইজমের হুলিগানেরা সেই স্থবিরতা ভাঙবে নাকি সেই স্থবিরতাকেই আঁকড়ে ধরে বড় হবে, সেটা দেখার।

Read More

Latest News