মগডালে উঠিয়ে মই কেড়ে নিলে যেমন হয়, তেমন লাগছে। হ্যাঁ, নাম জানাব না এই শর্তে একজন বিজেপি নেতা এই কথা জানালেন। সদ্য তিনি জানতে পেরেছেন যে ঘটি হারিয়েছে, মানে ওই যে এক ভিআইপি ব্যবস্থা, আগে পিছনে হুকুম বরদার নিয়ে ঘোরাফেরার জন্য কেন্দ্রীয় সুরক্ষা বাহিনীর পাহারা আর থাকবে না। রোজ রাতে কাজ সেরে, কাজ সেরে মানে? রুটি বেলে, রান্না করে, বাসন মেজে বা বাজারের বিক্রিবাট্টা সেরে মহাজনের টাকা মিটিয়ে এক বাড়িতে বাচ্চা সামলিয়ে বাড়ি ফেরে অসংখ্য মহিলা, হেঁটে, বাসে, ট্রেনে, অসংখ্য মানুষ চাকরি শেষ করার পরেও টিউশন পড়িয়ে, কোনও ব্যবসায়ীর খাতা লিখে বাড়ি ফেরে যখন তখন মাঝরাত, ডিউটি শেষ করে বাড়ি ফেরে শ্রমিক। এঁদের কারও সুরক্ষার আলাদা প্রয়োজন কিন্তু হয় না, এঁরা কিন্তু দিব্যিই ঘরে ফেরেন। কিন্তু এনাদের ভোটে নির্বাচিত বা এনাদের জন্য যাঁরা মহান চিন্তায় ব্যস্ত, এনাদেরই উন্নয়ন আর বিকাশের চিন্তার যাঁদের ঘুম আসে না, তাঁদের জন্য একে ফর্টি সেভেনধারী সুরক্ষার প্রয়োজন হয় এবং সেই সুরক্ষার জন্য খরচ জোগায় কিন্তু এই আম জনতা। তো খবরে প্রকাশ যে এমন ৩২ জন সমাজসেবীর এই ভিআইপি মর্যাদা কেড়ে নেওয়া হয়েছে, আগামিকাল থেকে তাঁদের জন্য আর সেই সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকবে না। এই সুরক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন মোদি শাহের সরকার, অতএব বলাই বাহুল্য যে যাঁরা এই সুরক্ষা পেতেন তাঁদের সব্বাই ওই বিজেপির ঘনিষ্ঠ বা বিজেপি দলের নেতা। তো সেটাই বিষয় আজকে, ঘটি হারাল এ বাংলার বেশ কিছু বিজেপি নেতাদের।
সুরক্ষা বাতিলের তালিকায় প্রথম নাম অরুণ হালদারের। তিনি জাতীয় তফসিলি জাতি কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। প্রাক্তন আইপিএস দেবাশিস ধর, আইনজীবী নেতা লোকনাথ চট্টোপাধ্যায়, রাজ্য কার্যকারিণী সদস্য একদা ছাত্র নেতা শঙ্কুদেব পণ্ডাদের নিরাপত্তাও প্রত্যাহার করে নিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। ডায়মন্ডহারবার লোকসভা আসনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী ছিলেন যে ববি, অভিজিৎ দাস তাঁর নিরাপত্তাও তুলে নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: Aajke | কী হয়েছিল সেদিন মাঝরাতে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে?
জন বার্লার নিরাপত্তা তো তুলে নেওয়ারই কথা, তিনি বেশ কিছুকাল দলের বিরুদ্ধেই কথা বলছিলেন, কাজ করছিলেন। ওদিকে এমনও কিছু নেতা নেত্রী আছেন যাঁদের সরকারি পদ নেই, তাঁরা সাংসদ নন, নির্বাচনে হেরে গেছেন, কিন্তু তাঁদের ওই সুরক্ষা বজায় রয়েছে। লকেট চ্যাটার্জি বা দিলীপ ঘোষ বা অর্জুন সিংদের নিরাপত্তা কিন্তু তোলা হয়নি। অর্থাৎ মেসেজ লাউড অ্যান্ড ক্লিয়ার, ফেলো কড়ি মাখো তেল, আমি কি তোমার পর। বিজেপির জন্যে কার্যকরী হয়ে উঠলে তবে তো ওই আগে পেছনে বরকন্দাজ নিয়ে ঘুরতে পারবেন, কিছুই করবেন না, কেবল সুরক্ষা থাকবে সেটাই বা কীরকম। সেটা বোঝাতেই নাকি এই সুরক্ষা ব্যবস্থা তুলে নেওয়া হয়েছে এবং শোনা যাচ্ছে নতুন করে কিছু মানুষজনের সুরক্ষা বাড়ানো হবে। কিন্তু তার আগেও বড় খবর হল যাদের সুরক্ষা তুলে নেওয়া হল তাদের সিংহভাগই নাকি ডাডার অনুগামী, হ্যাঁ শুভেন্দু অধিকারীর অনুগামী, বেশ কিছুদিন ধরেই দিল্লির নেতারা নাকি শুভেন্দু অধিকারীর স্টাইল অফ ফাংশনিং নিয়ে বহু অভিযোগ পাওয়ার পরে তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছিলেন, এবারে তা নিয়ে কিছু ব্যবস্থাও নেওয়া শুরু করলেন, ডায়ামন্ডহারবারের ববি শুভেন্দুর অনুগামী, তিনি তো সাফ বলে দিয়েছেন এই খবরকে পাবলিকের সামনে এনেছে দলেরই কিছু লোকজন আমাদের হেয় করতে। শোনা যাচ্ছে শঙ্কুদেব পন্ডা নাকি হতাশ, কাছের কিছু লোকজনদের বলেই ফেলেছেন এরচেয়ে তো…। হ্যাঁ, আপাতত তারমানে ঝিকে মেরে বউকে শেখানোর পালা শুরু হয়েছে। এবারে সামনেই আসছে সভাপতি নামের ঘোষণা, তাও নাকি আমাদের খোকাবাবুর মনমর্জি মাফিক হচ্ছে না। সব মিলিয়ে ৩২ জন বিজেপি নেতার সুরক্ষা তোলা হয়েছের চেয়েও বড় খবর হল শুভেন্দুকে কোণঠাসা করার একটা প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা আমাদের দর্শক শ্রোতাদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, কেবল নিষ্ক্রিয় থাকার জন্যই বিজেপি নেতাদের জন্য দিল্লি সরকারের সুরক্ষা ব্যবস্থা তুলে নেওয়া হয়েছে তাই নয়, যাঁদের সুরক্ষা ব্যবস্থা তোলা হল তাঁদের বেশিরভাগই আবার নাকি শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ, দিল্লির নেতাদের কাছে কি শুভেন্দু তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছেন? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
আসলে এ রাজ্যে বিজেপির যে বাড়বাড়ন্ত তা মূলত বামেদের এক বড় অংশের কর্মী সমর্থকদের বাম শিবির ছেড়ে বিজেপির দিকে ঝোঁকার জন্য। খুব স্বাভাবিক কারণেই সেই তলার সারির বাম সমর্থক কর্মীরা একদা মমতা ঘনিষ্ঠ শুভেন্দুকে পছন্দ করেন না, আবার তাঁরা যে আদর্শগতভাবেও খুব আরএসএস-বিজেপির কাছের লোক তাও নয়। তাঁরা দিলীপ ঘোষের মতো এক মুখোমুখি লড়ে যাব গোত্রের হেক্কড়বাজ নেতাকে দেখেই বিজেপির দিকে গিয়েছিলেন, এখন ধীরে ধীরে সেই শিবিরে ভাঙন ধরছে, ওদিকে দিল্লির নেতারা ভেবেছেন এক শুভেন্দুকে দিয়েই তাঁদের কেল্লা ফতেহ হবে। কিন্তু বাস্তবে তা তো হচ্ছেই না উল্টে বিজেপির সমর্থন কমছে। আগামী নির্বাচনে বিজেপির ভোট কমে ৩৩-৩৪ শতাংশে নেমে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। সেটা কেবল আমরা বুঝেছি তাও নয়, বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও বুঝেছেন, আর সেই বোধোদয় হওয়ার পরেই তাঁরা কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছেন, যা আগামী দিনে শুভেন্দুকে তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে আবার নতুন করে ভাবতে বাধ্য করবে।