HomeআজকেAajke | টার্গেট নন্দীগ্রাম

Aajke | টার্গেট নন্দীগ্রাম

সিপিএম যে রক-সলিড সংগঠন নিয়ে মাঠে নামত, সারা বছর পার্টি ক্যাডার কর্মীদের মাঠে নামাত, বিভিন্ন ইস্যুতে, সে সুকান্তের জন্মদিন বা কিউবাতে খাতা-বই পাঠানোর চাঁদা তোলা, যাই হোক না কেন, মাঠে নামতে হবে। একটা খাতা নিয়ে বসে আছেন লোকাল কমিটির সেক্রেটারি, একধারে পার্টি সদস্যদের নাম, অন্যদিকে টিক দিচ্ছেন, লেভি? ১২ তারিখের মিছিল? ১৬ তারিখের মিটিং? ১৮ তারিখের পোস্টারিং? রবিবারে গণশক্তি বিক্রি? হ্যাঁ এগুলোই ছিল পার্টি ক্যাডারদের শরীরচর্চা। মগজের চর্চা আগে হত, কিন্তু পরে মগজ নিয়ে মগজমারি করার আর কেউ ছিল না, কেবল চাঁদা, গণশক্তি বিক্রি, মিছিল, মিটিংয়ে হাজির থাকা এবং অবরে সবরে লোকাল কমিটির নেতা যে লেনিনের সব উক্তি মুখস্থ বলতে পারেন সেটা জানানো। ব্যস। কিন্তু এই পদ্ধতিতেই তৈরি হয়েছিল এক রক-সলিড ভোট মেশিনারি। সেসব অতীত কিন্তু মজার কথা হল সেই সিপিএমের জাতশত্রু তৃণমূল কিন্তু প্রায় সেরকমই একটা সলিড সংগঠন আর ভোট মেশিনারি তৈরি করে ফেলেছে। আলিমুদ্দিনের বদলে নজরদারির জন্য আছে আই প্যাক দফতর, ক্যামাক স্ট্রিট। খেয়াল করে দেখুন ২১ জুলাই গোটা অর্গানাইজেশনটাকে ২৬-এর আগে যা যা বলার নেত্রী বলে দিয়েছেন। টার্গেট শুনেছি ২৪০। হতেই পারে, বিজেপির যা অবস্থা তাতে তারা ৩০-৩৫-এর উপরে উঠলে তা হবে এক গবেষণার বিষয়। আর তার জন্য কতগুলো ফল্টলাইন খুঁজে বার করে তার মেরামত করার কাজ শুরু করে দিয়েছেন দলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড। যে যে জেলাতে মতবিরোধ আছে, এমনকী পাগলা জগাই মুর্শিদাবাদের হুমায়ুন কবীরকে নিয়েও বসে পড়েছেন তিনি। উত্তরবঙ্গে সেই কাজ সেরে এসেছেন, উত্তর চব্বিশ পরগনার ক্ষোভ-বিক্ষোভ সামলেছেন, অবশ্য অর্জুন বিদায়ের পরে পার্থের হাতে দায়িত্ব দিয়ে দল নিশ্চিন্ত, মধ্যে চিরঞ্জিৎ ইত্যাদির কথা কানে না দিলেও চলবে। দলের ছাতার বাইরে, উনি ওই মা হারালে মা পাবি না ইত্যাদি ডায়ালগের বাইরে কিছুই নন। সম্ভবত এর পরেই নজর নদিয়াতে। কিন্তু এসবের মধ্যেই নন্দীগ্রাম বৈঠক সেরে এসেছেন তিনি। সেখানকার কথাবার্তা আলোচনার পরে দলের মধ্যে নতুন উৎসাহ, লক্ষ্য নাকি নন্দীগ্রাম, সেটাই বিষয় আজকে, টার্গেট নন্দীগ্রাম।

হ্যাঁ, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একজনের মুখেই শুনেছি, দিদি কো হারানা অসম্ভব হ্যায়। হ্যাঁ, এই মুহূর্তে রাজ্যের রাজনীতিতে কোনও ভূমিকম্প না এলে ২০২৬-এ তৃণমূল অনায়াসে যথেষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়েই সরকারে ফিরবে, একথা রাজ্য বিজেপির নেতারা জানেন, বিজেপির বিধায়কেরাও জানেন, ইন ফ্যাক্ট পাবলিকও জানে। আর সেই নিশ্চিত জয়ের হাওয়াকে কাজে লাগিয়ে দলের সেকেন্ড ইন কমান্ডের টার্গেট নন্দীগ্রাম। কেন? কারণ খুব সোজা, শুভেন্দু অধিকারীর টার্গেট কে? অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, শুভেন্দুবাবু ওনার নাম না নিয়েই ভাইপো বলে বক্তব্য শুরু করেন, শেষও করেন।

অতএব নিউটনের থার্ড ল মেনেই ভাইপোর টার্গেট নন্দীগ্রাম। আর যেভাবে ঘুঁটি সাজানো হচ্ছে তাতে সাম দান দণ্ড ভেদ, সবক’টা অস্ত্র প্রয়োগ করেই ফল পেতে চাইবে দু’ দল। এবারে কিঞ্চিৎ এগিয়ে যুবরাজ, মানে হাতে সরকার থাকলে যা হয়। এবং কী ভাবছেন এই বাঘবন্দির ছক কানে যায়নি শুভেন্দু অধিকারীর। গেছে তো, কিন্তু সমস্যা অনেক, বেশ কিছু প্রশ্ন তাঁর সামনে, যার উত্তর খুঁজে না পেলে কিন্তু ২০২৬-এর নন্দীগ্রামে ফল উল্টে যাবে, আর নন্দীগ্রামের ফল উল্টে গেলে ভবিষ্যৎ ফর্সা। কী কী প্রশ্ন? এই যে চাকরি দুর্নীতি, অনুব্রত থেকে হুদো হুদো তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে ইডি-সিবিআই-এর তদন্ত, আরজি কর ধর্ষণ হত্যার সিবিআই তদন্তের একটাও তো কিনারা হচ্ছে না, একে একে সেই সমস্ত অভিযুক্ত নেতারা জামিন পেয়ে যাচ্ছেন, পার্থ চ্যাটার্জিও জানা গেল বেশ কিছু মামলাতে জামিন পেয়েছেন। তাহলে? এগুলো কি সবই কেবল বিরোধীদের শায়েস্তা করার জন্য ছিল? হ্যাঁ, এই প্রশ্ন উঠবে, জবাব তো শুভেন্দু অধিকারীকে দিতেই হবে। বিহারের জন্য স্পেশ্যাল প্যাকেজ, অন্ধ্রের জন্য স্পেশ্যাল প্যাকেজ, বাংলার জন্য কোনও টাকা বরাদ্দ নেই কেন? উল্টে মনরেগার টাকা আটকে দিয়েছে, আবাস যোজনার টাকা আটকে দিয়েছে, এই কথাগুলোর জবাব কোথায়? সারা দেশে, বিশেষত বিজেপি শাসিত রাজ্যে মারা হচ্ছে, জেলে পোরা হচ্ছে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের, দোষ, তারা বাংলায় কথা বলে। এখনও পর্যন্ত এই ইস্যুতে শুভেন্দু অধিকারীর কোনও কথা নেই। এবং এই প্রশ্নগুলোর জবাব না থাকলে রাজ্য তো ভুলেই যান, নন্দীগ্রাম বাঁচানোও অসম্ভব হয়ে যাবে, সেটা বোঝার মতো জ্ঞানগম্যি নিশ্চয়ই শুভেন্দুবাবুর আছে। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, এমনিতে ২০২৬-এর বিধানসভার নির্বাচনে খুব একটা লড়াই ইত্যাদির চিহ্ন নেই, কিন্তু নন্দীগ্রাম নিয়ে তো একটা কী হয় কী হয় ভাব আছে। তো আপনাদের কি মনে হয় শুভেন্দু অধিকারী তাঁর নন্দীগ্রাম ধরে রাখতে পারবেন নাকি সেই নন্দীগ্রাম তাঁর হাতছাড়া হবে। শুনুন মানুষজন কী বলছেন।

নন্দীগ্রামে কী হবে তা কিন্তু অনেকটাই নির্ভর করছে শুভেন্দু অধিকারীর উপরে, যদি উনি ওই কেন্দ্র থেকে সরে গিয়ে আরও কোনও নিরাপদ আশ্রয় খোঁজেন, বা নিজে প্রার্থী না হয়ে অন্য কাউকে দাঁড় করান, তাহলে নন্দীগ্রাম আসনে হার নিশ্চিত। আবার যদি উনি নন্দীগ্রাম থেকেই নিজে দাঁড়ান, তাহলে কাঁটে কা টক্কর নিশ্চিত। কিন্তু সেক্ষেত্রে শুভেন্দুবাবুকে বেশ অনেকটা সময় এই আসনের জন্য ব্যয় করতে হবে। এবং মমতা নন্দীগ্রাম থেকে দাঁড়াবেন না এটাও নিশ্চিত, কিন্তু তাঁর ওই বাহিনী এখন থেকেই যেভাবে ঘেরাটোপ তৈরি করছে, তাতে শুভেন্দুর কপালে ভাঁজ পড়বে বইকী।

مقالات ذات صلة

Latest News